জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন PDF
Document Details
Uploaded by TopQualityEnlightenment3325
University of Dhaka
Tags
Summary
This document discusses genetics and evolution, including key concepts like Mendelian inheritance, evolution theories, and the importance of genetics in various scientific fields. It provides details on Mendel's experiments, the laws of inheritance, and different types of crosses.
Full Transcript
## জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন **অধ্যায় ১১** ### জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন Genetics & Evolution **প্রধান শব্দাবলি (Key words)** - অসম্পূর্ণ প্রকটতা - বিবর্তনের মতবাদ - লিথাল জিন - এপিস্ট্যাসিস - হিমোফিলিয়া - বংশবিস্তারের - মাধ্যমে জীবের বংশধারা অক্ষুন্ন থাকে। - পিতামাতা ও - পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য ও গুণ...
## জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন **অধ্যায় ১১** ### জিনতত্ত্ব ও বিবর্তন Genetics & Evolution **প্রধান শব্দাবলি (Key words)** - অসম্পূর্ণ প্রকটতা - বিবর্তনের মতবাদ - লিথাল জিন - এপিস্ট্যাসিস - হিমোফিলিয়া - বংশবিস্তারের - মাধ্যমে জীবের বংশধারা অক্ষুন্ন থাকে। - পিতামাতা ও - পূর্বপুরুষদের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলী - বংশপরম্পরায় - সন্তান-সন্ততির মধ্যে - সঞ্চারিত হয়। - জীব তার নিজের আকৃতিবিশিষ্ট ও গুণসম্পন্ন অপত্য জীবের - জন্ম দেয়; - তাই কুকুরের শাবক কুকুরের মতো, গরুর শাবক গরুর মতোই - হয়। - এক প্রজন্ম (generation) - থেকে পরবর্তী প্রজন্মগুলোতে জীবের - বৈশিষ্ট্যাবলি সঞ্চারিত হয়। - যে প্রক্রিয়ায় পিতামাতার আকার, আকৃতি, - চেহারা, দেহের গঠন-প্রকৃতি, শারীরবৃত্ত, আচরণ ইত্যাদি নানাবিধ বৈশিষ্ট্য - বংশানুক্রমিকভাবে তাদের সন্তান-সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয় তাকে - বংশগতি (heredity) বলে। - Rh ফ্যাক্টর - পুনরাবৃত্তি মতবাদ - সমসংস্থ অঙ্গ - সমবৃত্তি অঙ্গ - আর্কিওপটেরিক্স **বংশগতির ধারাবাহিক পরিক্রমার সময় বিভিন্ন কারণে জীবদেহে কিছু আঙ্গিক পরিবর্তন ঘটে। কালক্রমে এ** **পরিবর্তনগুলো ঐ জীবের জিনগত বৈচিত্র্যের মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সৃষ্টি হয় নতুন প্রজাতি। এ জন্যে প্রয়োজন সুদীর্ঘ** **কালব্যাপী অতিমন্থর গতির বিবর্তন। এ অধ্যায়ে জীবের বংশগতি এবং বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।** ### এ অধ্যায়ের পাঠগুলো পড়ে যা যা শিখব - মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স সূত্রাবলি - ইনহেরিট্যান্সের ক্রোমোজোম তত্ত্ব - মেন্ডেলের সূত্রের ব্যতিক্রমসমূহ - পলিজেনিক ইনহেরিট্যান্স - লিঙ্গ নির্ধারণ নীতি বিশ্লেষণ - সেক্স-লিঙ্কড ডিসঅর্ডার এর কারণ - রক্তের বংশগতিজনিত সমস্যার কারণ - বিবর্তনতত্ত্বের ধারণা - বিবর্তনের মতবাদসমূহ - বিবর্তনের পক্ষে প্রমাণ - প্রজাতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিবর্তনের অবদান ### পাঠ পরিকল্পনা | পাঠ | বিষয় | |---|---| | ১ | মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স | | ২ | মেন্ডেলের সূত্রসমূহ | | ৩ | ইনহেরিট্যান্স এর ক্রোমোজোম তত্ত্ব | | ৪ | মেন্ডেলের প্রথম সূত্রের ব্যতিক্রম | | ৫ | মেন্ডেলের দ্বিতীয় সূত্রের ব্যতিক্রম | | ৬ | পলিজেনিক বা বহুজিনীয় ইনহেরিট্যান্স | | ৭ | লিঙ্গ নির্ধারণ (XX-XY, XX-XO ) নীতি | | ৮ | সেক্স-লিঙ্কড ডিসঅর্ডার: বর্ণান্ধতা | | ৯ | হিমোফিলিয়া ও মাসকুলার ডিসট্রফি | | ১০ | ABO ব্লাডগ্রুপ ও Rh ফ্যাক্টরের কারণে সৃষ্ট সমস্যা | | ১১ | বিবর্তন তত্ত্ব: ল্যামার্কিজম | | ১২ | বিবর্তন তত্ত্ব: ডারউইনিজম | | ১৩ | বিবর্তনের প্রমাণাদি: জীবাশ্ম ও ভূ-তাত্ত্বিক প্রমাণ | | ১৪ | বিবর্তনের প্রমাণাদি: শ্রেণিবিন্যাসগত, জীবভৌগোলিক | | প্রজাতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় বিবর্তনের অবদান | | ১৫ | বিবর্তনের প্রমাণাদি: ভ্রূণতাত্ত্বিক, শারীরবৃত্তীয়, জীব | | রসায়নঘটিত, কোষতাত্ত্বিক ও জিনতাত্ত্বিক প্রমাণ | ### ১১.১: জিনতত্ত্ব (Genetics) জীববিজ্ঞানের যে শাখায় জিনের গঠন, কাজ, বংশপরম্পরায় সঞ্চারণের ধরণ ও ফলাফল সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় তাকে - বংশগতিবিদ্যা - বা জিনতত্ত্ব - বা জেনেটিক্স (Genetics) বলে। - উইলিয়াম বেটসন (William Bateson, 1861-1926) - ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম - Genetics শব্দ প্রচলন করেন। - Genetics শব্দটি গ্রিক শব্দের মূল রূপ 'gen' শব্দ থেকে - উদ্ভূত যার প্রকৃত অর্থ হলো - পরিণতি স্বরূপ ঘটা (to become) - অথবা কোনো কিছুতে উদ্ভূত হওয়া (to grow into) ### জিনতত্ত্বের প্রয়োজনীয়তা মানবকল্যাণে নিয়োজিত জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর শাখা হলো জিনতত্ত্ব। জিনতত্ত্বের প্রয়োজনীয়তার বিশেষ কয়েকটি দিক নিম্নরূপ: - জিনের প্রয়োজনীয় গঠনিক ও পরিমাণগত (পলিপুওয়াডি) পরিবর্তনের মাধ্যমে অধিক ফলনশীল ও বাড়তি - পুষ্টিমানসম্পন্ন উৎকৃষ্ট জাতের ফসলী উদ্ভিদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। - জিনতত্ত্বের জ্ঞানের আলোকে সংকরায়নের মাধ্যমে উন্নতজাতের গৃহপালিত পশু-পাখি উদ্ভাবন অব্যাহত আছে। - ত্রুটিপূর্ণ জিন অপসারণ ও উপযুক্ত জিন প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে পরিবেশের সাথে মানানসই, সুস্থ, দ্রুত বর্ধনশীল - এবং রোগ প্রতিরোধক্ষম উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি সম্ভব হচ্ছে। - বংশগতির ধারা পর্যালোচনা করে - নিয়ন্ত্রিত উপায়ে সংকরায়নের মাধ্যমে মানুষসহ অন্যান্য প্রজাতির উৎকর্ষতা - বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। - মানুষের বিভিন্ন রোগের (যেমন, ক্যান্সার) জেনেটিক কারণ উদঘাটন ও নিরাময় সম্পর্কে মানুষ অত্যন্ত - আশাবাদী। - অণূজীবের জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে এগুলোর সংক্রমণ ক্ষমতা রহিত করা হচ্ছে। - অপরাধী শনাক্তকরণে, পিতৃত্ব কিংবা মাতৃত্বের সম্পর্ক যাচাইয়ে জিনতত্ত্বের জ্ঞান প্রয়োগ করা হচ্ছে। - শ্রেণিবিন্যাসকরণে প্রাণিদের বিভিন্ন ট্যাক্সনে স্থাপন করতে ও জ্ঞাতিতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে জিনতত্ত্ব অত্যন্ত - গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ### গ্রেগর জোহান মেন্ডেল-আধুনিক জিনতত্ত্বের জনক (Gregor Johann Mendel – Father of Modern Genetics) **মেন্ডেল কে ছিলেন?** - আধুনিক জিনতত্ত্বের জনক বলে পরিচিত - গ্রেগর জোহান মেন্ডেল (১৮২২-১৮৮৪) - অস্ট্রিয়াবাসী একজন ধর্মযাজক ছিলেন। - দীর্ঘ সাত বছর বিভিন্ন মটরশুঁটি (Pea) গাছের উপর নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা - চালিয়ে তিনি বংশগতির দুটি "সূত্র" প্রবর্তন করেন। - তাঁর সূত্রগুলোকে মেন্ডেলের সূত্র বা মেন্ডেলিজম (Mendelism) - বলে আখ্যায়িত করা হয়। - মেন্ডেল প্রদত্ত তত্ত্ব বর্তমান জিনতত্ত্বের ভিত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। **মেন্ডেলের সংক্ষিপ্ত জীবনী:** - কৃষকের সন্তান জোহান মেন্ডেল-এর জন্ম ১৮২২ সালে অস্ট্রিয়ায়। - তাঁর স্বপ্ন ছিল - শিক্ষক ও বিজ্ঞানী হবেন। - কিন্তু দারিদ্র্যের কষায়াঘাতে তাঁর সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। - বিশ্ববিদ্যালয়ে - শিক্ষাগ্রহণ ত্যাগ করে তিনি অস্ট্রিয়ার ব্রুন (Brunn) শহরে অবস্থিত গির্জায় শিক্ষানবিশ হিসেবে যোগ দেন। **১৮৫৭ সালে মেন্ডেল ৩৪ প্রকার মটরশুঁটি ( Pisum sativum) সংগ্রহ করে গির্জা সংলগ্ন বাগানে উদ্ভিদের বংশগতি** **রহস্য উদঘাটনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। দীর্ঘ সাত বছরের কঠিন ও শ্রমসাধ্য পরীক্ষা শেষে তিনি বংশগতির** **দুটি সূত্র (Law) আবিষ্কার করেন। তাঁর পরীক্ষার** **সমস্ত কাগজপত্র ১৮৬৬ সালে ব্রুন ন্যাচারাল** **হিস্ট্রি সোসাইটি (Natural History Society of** **Brunn)-তে জমা দেন। আপাতদৃষ্টিতে অতি** **সাধারণ এ পরীক্ষার গুরুত্ব ঊনবিংশ শতাব্দীতে** **কেউ উপলব্ধি করতে পারেননি। ১৮৮৪ সালের** **৬ই জানুয়ারি, তাঁর সূত্রগুলো প্রতিষ্ঠা লাভের** **অনেক আগেই, মেন্ডেল মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর** **মৃত্যুর ১৬ বছর পর অর্থাৎ ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে তিন** **ভিন্ন দেশের তিন বিজ্ঞানী পৃথকভাবে কিন্তু একই** **সময়ে মেন্ডেলের গবেষণার ফলাফল পুনরাবিষ্কার** **করেন।** - জীব দ্বিতীয় পত্র-২৮/B ### জীববিজ্ঞান – দ্বিতীয় পত্র **বিজ্ঞানীরা হলেন:** 1. নেদারল্যান্ডসের উদ্ভিদবিজ্ঞানী - হিউগো ডে ভ্রিস (Hugo de Vries, 1848–1935), 2. জার্মানির উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক - কার্ল করেন্স (Carl Correns, 1864-1933) এবং 3. অস্ট্রিয়ার কৃষিবিজ্ঞানী - এরিক শ্চের্মেক (Erich Tschermak, 1871-1962)। **আশ্চর্যের বিষয় হলো এ বিজ্ঞানীরা তাঁদের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করেই মেন্ডেলের গবেষণা সম্পর্কে অবহিত** **হয়েছিলেন। এভাবে মেন্ডেলের গবেষণার মাধ্যমে বংশগতির মৌলিক সূত্রের আবিষ্কার ও প্রকাশের মাধ্যমে যে ভিত্তি** **রচিত হয় তার উপর নির্ভর করে জীববিজ্ঞানে বংশগতিবিদ্যা বা জিনতত্ত্ব নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার বিকাশ ঘটে।** **এ কারণে মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যা বা জিনতত্ত্বের জনক (Father of Genetics) বলে অভিহিত করা হয়।** ### মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স (Mendelian Inheritance) মেন্ডেল বিপরীত বৈশিষ্ট্য (alternative character)-যুক্ত দুধরনের মটরশুঁটি গাছ (Pisum sativum) - নিয়ে পরীক্ষা - শুরু করেছিলেন। - এক ধরনের উদ্ভিদ ছিল লম্বা (tall), - অন্য শ্রেণির উদ্ভিদ ছিল খাটো (dwarf)। - পরীক্ষা শুরুর আগে - তিনি মটরশুঁটি গাছের বিশুদ্ধতা পর্যবেক্ষণ করেন। - এরপর শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত (হোমোজাইগাস) একটি লম্বা উদ্ভিদের সঙ্গে - শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত একটি খাটো উদ্ভিদের কৃত্রিম - পরাগসংযোগ ঘটান। - লম্বা উদ্ভিদের পরাগরেণু (pollen) নিয়ে - খাটো উদ্ভিদের উদ্ভিদের গর্ভমুন্ডে - স্থাপন করা হয়। - পরাগসংযোগের ফলে উৎপন্ন বীজ - থেকে যে সব উদ্ভিদ আবির্ভূত হয় তার সবই লম্বা। - প্রথম পরাগসংযোগের ফলে সৃষ্ট উদ্ভিদগুলোকে - মেন্ডেল প্রথম ਬংশধর (first filial generation) বা - F₁ জনুরূপে চিহ্নিত করেন। - পরে মেন্ডেল F₁ জনুর উদ্ভিদগুলোর মধ্যে সংকরায়ন (hybridization) ঘটান। - দ্বিতীয়বার - পরাগসংযোগের ফলে সৃষ্ট দ্বিতীয় বংশধর (second filial generation)-এ বা F₂ জনু-র মোট ১০৬৪ উদ্ভিদের মধ্যে - ৭৮৭টি লম্বা এবং ২৭৭টি খাটো পাওয়া গেল, - অর্থাৎ লম্বা ও খাটো উদ্ভিদের অনুপাত দাঁড়ালো ৩: ১। - এভাবে মেন্ডেল - মটরশুঁটি গাছের নির্বাচিত সাতজোড়া বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য (প্রকট ও প্রচ্ছন্ন) - নিয়ে সংকরায়ন ঘটান। **মেন্ডেলের উপরোক্ত পরীক্ষাগুলো (প্রতিক্ষেত্রে) একজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটরশুঁটি গাছের মধ্যেই সংঘটিত হয়** **এবং এ ধরনের পরীক্ষাকে মনোহাইব্রিড ক্রস (monohybrid cross) বা একলক্ষণ সংকরায়ন বলে।** | বীজ | আকার | বীজপত্র | ফুল | বর্ণ | খোসা | কান্ড | আকার | বর্ণ | কান্ডে ফুলের অবস্থান | দৈর্ঘ্য | |---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---| | গোল | কুঞ্চিত | হলুদ | সবুজ | মসৃণ | খাঁজযুক্ত | হলুদ | সবুজ | কাক্ষিক | শীর্ষ | লম্বা | খাটো | **চিত্র ১১.১.২: মেন্ডেল মটরশুঁটির উপরোক্ত ৭ জোড়া বিপরীত চরিত্রলক্ষণ নিয়ে পরীক্ষা চালান** **পরবর্তীতে মেন্ডেল দুজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত মটরশুঁটি গাছ নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন। একটি শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত** **হলুদ-গোল বীজ উৎপন্নকারী উদ্ভিদের সাথে অপর একটি শুদ্ধ লক্ষণযুক্ত সবুজ-কুঞ্চিত বীজ উৎপন্নকারী উদ্ভিদের** **পরাগসংযোগ ঘটানোর পর দেখা গেল F₁ জনুর সবগুলো উদ্ভিদই হলুদ-গোল বীজ উৎপন্ন করতে সক্ষম। কিন্তু F₂** **জনুতে ১৬টি বংশধরের মধ্যে ৯টি হলুদ-গোল, ৩টি হলুদ-কুঞ্চিত, ৩টি সবুজ-গোল ও ১টি সবুজ-কুঞ্চিত বীজ** **উৎপন্নকারী উদ্ভিদ পাওয়া গেল। মেন্ডেলের এ পরীক্ষাকে (দুজোড়া বিপরীত বৈশিষ্ট্যযুক্ত উদ্ভিদের মধ্যে - সংঘটিত) - ডাইহাইব্রিড ক্রস (dihybrid cross) - বা দ্বিলক্ষণ সংকরায়ন বলে। - মেন্ডেলের গবেষণা ও ফলাফল সামগ্রিকভাবে - মেন্ডেলিয়ান ইনহেরিট্যান্স নামে পরিচিত। ### পরীক্ষার জন্য মেন্ডেলের মটরগাছ বেছে নেয়ার কারণ - বাগানের মটরগাছে (garden pea, Pisum sativum) - নিম্নোক্ত কিছু - নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হওয়ায় মেন্ডেল - তাঁর পরীক্ষার জন্য - মটরগাছকে - নমুনা হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। 1. মটরগাছ একবর্ষজীবী হওয়ায় - খুবই সহজেই বাগানের জমিতে ও - টবে ফলানো যায়। 2. মটরগাছের প্রতিটি জনুর আয়ুষ্কাল অল্প হওয়ায় - খুব কম সময়ের - মধ্যেই সংকরায়ন পরীক্ষার ফল পাওয়া যায়। 3. মটরফুল উভলিঙ্গ হওয়ায় - সহজেই স্ব-পরাগায়ন ঘটে। 4. মটরফুল স্ব-পরাগী হওয়ায় - বাইরে থেকে আসা অন্য কোন চারিত্রিক - বৈশিষ্ট্য সহজে মিশে যেতে পারে না, - ফলে বংশপরম্পরায় - নির্দিষ্ট চারিত্রিক - বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন শুদ্ধ সন্তান-সন্ততি উৎপাদন সম্ভব। 5. ফুলগুলো আকারে বড় হওয়ায় - মটর গাছে খুব সহজেই - পরপরাগায়নও ঘটানো সম্ভব হয়। 6. মটরগাছে - সুস্পষ্ট তুলনামূলক বংশগতি বৈশিষ্ট্য - দেখা যায়-এ জন্য - মটর গাছের - বহু প্রকরণ (varieties) উপস্থিত। 7. সংকরায়নের ফলে সৃষ্ট বংশধরগুলো - উর্বর (fertile) হয়; - অর্থাৎ এগুলো জননক্ষম হওয়ায় - নিয়মিত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ### মেন্ডেলের সাফল্যের বা কৃতকার্য হওয়ার কারণ (Reasons Behind Mendel's Success) মেন্ডেলের আগেও অনেক বিজ্ঞানী সংকরায়ন পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু মেন্ডেলই প্রথম এ ধরনের পরীক্ষার উপর - ভিত্তি করে - কতকগুলো নির্ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। - তাঁর এই সাফল্যের মূল কারণগুলো হচ্ছে- 1. তিনি মটরশুঁটি গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন, - এ গাছ স্বপরাগী। - ফুলের বিশেষ গঠনের জন্য - বিপরীত - পরাগায়নের সম্ভাবনা কম থাকায় - পরীক্ষায় - ভুল হওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুবই কম। 2. তিনি বিভিন্ন পরীক্ষায় - যে সব উদ্ভিদ ব্যবহার করেছিলেন সেগুলো - খাঁটি (pure) - অর্থাৎ হোমোজাইগাস ছিল। 3. তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষায় - প্রতিজোড়া জিনের - একটি জিন - অন্য জিনের উপর - সম্পূর্ণ প্রকট (dominant) ছিল। 4. মটরশুঁটির ডিপ্লয়েড কোষে - সাতজোড়া ক্রোমোজোম আছে। 5. মেন্ডেল - যে সাতজোড়া চরিত্র নিয়ে কাজ করেছিলেন, - সেগুলো - ভিন্ন ভিন্ন ক্রোমোজোমে অবস্থিত বলে - কোন - লিংকেজ (linkage) - সংক্রান্ত ঝামেলা ঘটেনি। 6. কোন - লিংকড চরিত্রের সম্মুখীন হলে - মেন্ডেল - হয়তোবা - দ্বিতীয় সূত্রের - ব্যাখ্যা দানে - ব্যর্থ হতেন। - কিন্তু অত্যন্ত - সৌভাগ্যের বিষয় - মেন্ডেলের নির্ধারিত সাতজোড়া চরিত্রের - মধ্যে - কোনটাই - লিংকড চরিত্র ছিলনা। 7. সংকরায়ন করার আগে - তিনি - বারবার - উদ্ভিদগুলোর - বিশুদ্ধতা - পরীক্ষা করেছেন। 8. কোন - স্থির - সিদ্ধান্তে পৌঁছার জন্য - তিনি - কয়েক বংশধরে - উদ্ভিদগুলোর - প্রজনন - ঘটিয়েছেন। 9. মেন্ডেল - অত্যন্ত - সতর্কতা ও - নিষ্ঠার সাথে - তাঁর গবেষণার - ফলাফল - লিপিবদ্ধ - করেছিলেন। 10. গাণিতিক - পদ্ধতিতে - মেন্ডেল - তাঁর ফলাফলের - অর্থপূর্ণ - ব্যাখ্যা - করেছিলেন। - (Linkage: একই ক্রোমোজোমে অবস্থিত সংযুক্ত বা লিংকড জিনগুলোর - একই সাথে থাকা অর্থাৎ - মিয়োসিসের সময় একই গ্যামেটে সঞ্চারিত হওয়ার প্রবণতা)। ### জিনতত্ত্বে ব্যবহৃত কতকগুলো শব্দের ব্যাখ্যা জিনতত্ত্ব সহজভাবে বুঝতে হলে নিম্নোক্ত শব্দগুলো সম্বন্ধে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। 1. **ফ্যাক্টর (Factor) বা জিন (Gene):** - জীবের বৈশিষ্ট্য - নিয়ন্ত্রণের - একককে - জিন - বলে। - অর্থাৎ - জিন - হচ্ছে - বংশগতির ধারক ও বাহক। - মূলত ক্রোমোজোমে অবস্থিত যে কোনো কার্যকরি একক - যাতে রিকম্বিনেশন সম্ভব এবং যা - মিউটেশনে অংশ নিতে পারে - তা-ই - জিন। - আধুনিক ধারণা মতে, - DNA-র যে - বিশেষ বিশেষ অংশ - তথা - বেস-অনুক্রম - কমপক্ষে - একটি পলিপেপটাইড - উৎপাদনের - কোড বা - সংকেত - ধারণ করে, - তাকে - জিন - বলে। 2. **লোকাস (Locus)**: - ক্রোমোজোমে - জিনের - নির্দিষ্ট - স্থান-এর - নাম - লোকাস। - একটি নির্দিষ্ট জিনের অ্যালিলগুলো - সমসংস্থ ক্রোমোজোমের - একই - লোকাসে - অবস্থান করে। 3. **অ্যালিল বা অ্যালিলোমরফ (Allele or Allelomorph):** - সমসংস্থ (homologous) - ক্রোমোজোম জোড়ের - নির্দিষ্ট - লোকাসে অবস্থানকারী - নির্দিষ্ট - জিন-জোড়ার - একটিকে - অপরটির - অ্যালিল - বলে। - অ্যালিলদুটি - একই - ধর্মী - (যেমন-TT) - অথবা - একে অপরের বিপরীত - ধর্মী - (যেমন-Tt) - হতে পারে। - যখন দুটি বিপরীতধর্মী অ্যালিল থাকে - তখন - একটিকে - প্রকট অ্যালিল - (অর্থাৎ T), - অন্যটিকে - প্রচ্ছন্ন - অ্যালিল (t) বলে। 4. **হোমোজাইগাস (Homozygous):** - কোনো জীবে - একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী - অ্যালিলদুটি - সমপ্রকৃতির - হলে, - তাকে - হোমোজাইগাস - বলে। - যেমন-BB = - কালো পশম, - bb = - বাদামী পশম ইত্যাদি। 5. **হেটারোজাইগাস (Heterozygous):** - কোনো জীবে - একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী - অ্যালিলদুটি - অসমপ্রকৃতির - হলে, - তাকে - হেটারোজাইগাস জীব - বলে। - যেমন T এবং । - অর্থাৎ Tt-ধারী - জীবটি লম্বা - হলেও তা - হেটারোজাইগাস। 6. **প্রকট বৈশিষ্ট্য (Dominant character ):** - একজোড়া - বিপরীত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন - হোমোজাইগাস - জীবে (TT এবং - tt) - সংকরায়ন ঘটালে - F₁ - জনুতে সৃষ্ট - হেটারোজাইগাস জীবে - যে বৈশিষ্ট্য - প্রকাশ পায়, - তাকে - প্রকট বৈশিষ্ট্য - বলে। - যেমন- - F₁ - জনুর মটরগাছে লম্বা ও খাটো - উভয় ধরনের - লক্ষণের জন্যে - একটি করে - জিন - থাকলেও (Tt) - শুধুমাত্র লম্বা - বৈশিষ্ট্যই - প্রকাশিত হয়। - অতএব - মটরগাছে - লম্বা - বৈশিষ্ট্যটি - প্রকট। 7. **প্রচ্ছন্ন বৈশিষ্ট্য (Recessive character):** - হেটারোজাইগাস জীবে - দুটি বিপরীতধর্মী - বৈশিষ্ট্যের - উপাদান -