টিকিটের অ্যালবাম - সুন্দর রামস্বামী PDF

Summary

এটি একটি বাংলা গল্প। গল্পের নাম টিকিটের অ্যালবাম এবং গল্পটিতে রাজাপ্পা নামে একজন ছেলে টিকিট সংগ্রহ করে।

Full Transcript

# টিকিটের অ্যালবাম ## সুন্দর রামস্বামী ### রাজাপ্পা জাপ্পা খেয়াল করল, হঠাৎ যেন ওর জনপ্রিয়তা কমে গেছে, গত তিনদিন ধরে সবাই নাগরাজনের চারপাশে ভীড় জমাচ্ছে। রাজাপ্পা সবাইকে বোঝাবার চেষ্টা করল যে, নাগরাজন বড্ড দাম্ভিক, কিন্তু কেউ ওর কথায় কান দিল না, কারণ নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে টিকিটের যে অ্যা...

# টিকিটের অ্যালবাম ## সুন্দর রামস্বামী ### রাজাপ্পা জাপ্পা খেয়াল করল, হঠাৎ যেন ওর জনপ্রিয়তা কমে গেছে, গত তিনদিন ধরে সবাই নাগরাজনের চারপাশে ভীড় জমাচ্ছে। রাজাপ্পা সবাইকে বোঝাবার চেষ্টা করল যে, নাগরাজন বড্ড দাম্ভিক, কিন্তু কেউ ওর কথায় কান দিল না, কারণ নাগরাজনের কাকা সিঙ্গাপুর থেকে টিকিটের যে অ্যালবামটা পাঠিয়েছিল, সেটা সে সবাইকে দেখতে দিত। ছেলেরা নাগরাজনের চারপাশে জড় হয়ে অ্যালবামটা চোখ দিয়ে গিলে খেত, যতক্ষণ না সকালের ক্লাশের জন্য স্কুলের ঘণ্টা বাজত; দুপুরের খাবারের ঘণ্টা পড়লেই আবার সবাই ওর চারপাশে ঘোরাঘুরি করত, আর সন্ধ্যাবেলা ওর বাড়ি ধাওয়া করত। নাগরাজন একটুও অধৈর্য না হয়ে ওদের সবাইকে অ্যালবামটা দেখাত। ও কেবল একটা শর্ত করেছিল – কেউ অ্যালবামটা ধরবে না। ও নিজের কোলে অ্যালবামটা রেখে পাতাগুলো উল্টাতো, আর সবাই প্রাণভরে দেখত। মেয়েদেরও অ্যালবামটা দেখবার ইচ্ছে হতো। তাদের মধ্যে সবচেয়ে ডানপিটে পার্বতী, নাগরাজনের কাছে এসে মেয়েদের নাম করে চাইত। নাগরাজন মলাট লাগিয়ে অ্যালবামটা তাকে দিত। সব মেয়েদের দেখা হয়ে গেলে সন্ধ্যাবেলা অ্যালবামটা তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হতো। কেউ রাজাপ্পার অ্যালবামের কথা উল্লেখও করত না, বা তাঁকে পাত্তাও দিত না। একসময় রাজাপ্পার অ্যালবাম খুব বিখ্যাত ছিল। রাজাপ্পা খুব কষ্ট করে টিকিট জোগাড় করত, যেমন করে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে। এটাই যেন ছিল ওর জীবন। সে ভোর বেলায় অন্যান্য টিকিট সংগ্রাহকদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেরিয়ে পড়ত। একটা রাশিয়ার টিকিটের সঙ্গে দুটো পাকিস্তানী টিকিটের বিনিময় করত। বিকেল বেলা স্কুলের সব বই এক কোণে ধুপ করে রেখে, হাফ প্যান্টের পকেটে জলখাবার ঢুকিয়ে, চোঁ চোঁ করে এক কাপ কফি গিলে আবার বেরিয়ে পড়ত। চার মাইল দূরের একটা ছেলের কাছে একটা কানাডার টিকিট আছে...। ওর অ্যালবামটা ছিল ক্লাশের সব চেয়ে বড়ো। রাজস্ব বিভাগের এক অফিসারের ছেলে ওটা পঁচিশ টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছিল। কী সাহস! রাজাপ্পা সমুচিত জবাব দিল, 'তুই কি তোর বাচ্চা ভাইকে আমার কাছে তিরিশ টাকায় বিক্রি করবি?' ছেলেরা জবাবটার তারিফ করল। কিন্তু এখন কেউ আর ওর অ্যালবামটার দিকে তাকায়ই না। আরো কি সব বলত। নাগরাজনের অ্যালবামের কাছেপিঠে আসার যোগ্যতাও নাকি ওর অ্যালবামের নেই। রাজাপ্পা নাগরাজনের অ্যালবামটা তাকিয়ে দেখতেও রাজি নয়। অন্য ছেলেরা যখন ঘিরে ধরে নাগরাজনের অ্যালবামটা দেখত, রাজাপ্পা ওর মুখ ফিরিয়ে নিত, অবশ্য চোরা দৃষ্টিতে অ্যালবামটা দেখত সত্যি, অপরূপ সুন্দর ওটা। হয়ত রাজাপ্পার যে সব টিকিট ছিল সে সব ওটায় ছিল না, হয়ত অত বেশি টিকিটও ছিল না, কিন্তু ওটা ছিল একেবারে অদ্বিতীয়। কোনো স্থানীয় দোকানে অমন অ্যালবাম পাওয়া যায় না। নাগরাজনের কাকা অ্যালবামের প্রথম পাতায় মোটা মোটা অক্ষরে ভাইপোর নাম লিখে দিয়েছিলেন : **এস নাগরাজন**। এর নীচে লেখা ছিল : 'এই অ্যালবামটা চুরি করতে চেষ্টা করছ যে নির্লজ্জ হতভাগা, তাকে বলছি ...' 'ওপরে আমার নামটা দেখেছ? এটা আমার অ্যালবাম। এটা আমার এবং যতদিন ঘাসের রং সবুজ আর পদ্মফুল লাল, সূর্য পূর্বে উঠবে আর পশ্চিমে অস্ত যাবে একমাত্র আমারই থাকবে।' ছেলেরা এই লাইন কটা তাদের অ্যালবামে টুকে নিল। মেয়েরাও তাদের বই আর খাতায়। রাজাপ্পা রেগে গিয়ে বলল, 'তোরা এমন নকল-নবীশ হয়েছিস কেন রে?' ছেলেরা ওর দিকে কটকট করে তাকাল, কৃষ্ণান সমুচিত জবাব দিল, 'কেটে পড় হিংসুটে পোকা!' 'হিংসুটে! আমি! আমি কেন হিংসুটে হব? আমার অ্যালবামটা অনেক বড়ো নয়? নয়?' 'তোর ওর মতো টিকিট নেই! ইন্দোনেশীয় সুন্দরীটাকে দ্যাখ ... তুলে ধর, আলোতে দ্যাখ।' 'আমার যা টিকিট আছে ওর নেই।' “ফুঃ! একটা দেখা যেটা ওর নেই।” 'দশ টাকা বাজি ধর। তোরা আমাকে একটা দেখা যা আমার নেই।' কৃষ্ণান ঠাট্টা করে বলল, 'তোর অ্যালবামটা ডাস্টবিনে রাখার যোগ্য।' সঙ্গের ছেলেরা চেঁচাতে লাগল, 'বাজে অ্যালবাম। বাজে অ্যালবাম!' রাজাপ্পা বুঝতে পারল এদের সঙ্গে তর্ক করে লাভ নেই। কতদিন ধরে ও এত টিকিট সংগ্রহ করেছে! একটা একটা করে। আর হঠাৎ একদিন পিয়ন নাগরাজনের সিঙ্গাপুরের অ্যালবামটা নিয়ে এল আর অমনি নাগরাজন মহামান্য লোক হয়ে গেল! ছেলেরা দুটোর মধ্যে তফাতও বোঝে না। যতই বোঝানো যাক, কিছুই ফল হবে না। রাজাপ্পা ভেতরে খাক হয়ে যাচ্ছিল। ক্রমশ ওর স্কুল যেতেও বিতৃষ্ণা জাগতে লাগল। ছেলেগুলোর সঙ্গে মিশবে কী করে? সাধারণত শনি আর রবিবার ও ছোটাছুটি করে টিকিট সংগ্রহ করত, কিন্তু এ-সপ্তাহে ও বাড়ি থেকে প্রায় নড়লই না। সাধারণত অ্যালবামের পাতা উল্টোয়নি এমন একটা দিনও যেত না। এমন কি রাত্রিবেলা ও লুকিয়ে বিছানা থেকে বেরিয়ে এসে অ্যালবাম দেখত। কিন্তু গত দুদিন ওটাকে স্পর্শও করেনি। ওটাকে দেখলেই ওর রাগ হয়। নাগরাজনের অ্যালবামের তুলনায় নিজেরটাকে এখন এক আঁটি ছেঁড়া ন্যাকড়া বলে মনে হয়। ### সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যাবেলা রাজাপ্পা নাগরাজনের বাড়ি গেল। ও মনস্থির করে ফেলেছিল। এই অসম্মান ও আর সহ্য করবে না। নাগরাজন হঠাৎ ঘটনাচক্রে একটা টিকিটের অ্যালবাম পেয়েছে, এই তো! টিকিট সংগ্রহে রহস্যের বিষয়ে ও কী জানে? অথবা কী করে অভিজ্ঞতা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করে তা কী করে জানবে? ও হয়তো মনে করে, আকারে যতো বড়ো হবে, ততো দামি হবে অ্যালবাম। অথবা হয়তো মনে করে, শক্তিশালী দেশের টিকিট দুর্বল দেশের টিকিটের থেকে বেশি দামি। যাই বলো, নাগরাজন অপেশাদার বই তো নয়। রাজাপ্পা সহজেই কম দামি টিকিট দিয়ে দামিগুলো হাতিয়ে নিতে পারবে। ও আগেও অনেককে এমন ঠকিয়েছে। টিকিট সংগ্রহের দুনিয়াতে এমনি চালাকি-প্রতারণা খুব চলে, নাগরাজন তো শিক্ষার্থী মাত্র। রাজাপ্পা সোজা দোতলায় নাগরাজনের ঘরে গেল। কেউ বাধা দেয়নি কারণ, ও প্রায়ই এবাড়িতে আসত। রাজাপ্পা নাগরাজনের ডেস্কে বসে পড়ল। খানিক বাদে নাগরাজনের ছোটো বোন, কামাক্ষী, এল। 'দাদা শহরে গেছে, তুমি কি ওর নতুন অ্যালবাম দেখেছ?' রাজাপ্পা বিড়বিড় করে কী বলল বোঝা গেল না। 'এটা সত্যি খুব সুন্দর, তাই না? মনে হয়, স্কুলে আর কারো এত সুন্দর অ্যালবাম নেই।' 'কে বলেছে?' 'আমার ভাই।' 'এটা শুধু বড়ো অ্যালবাম, এই পর্যন্ত। শুধু বেঢপ বড়ো হলেই হলো?' কামাক্ষী কিছু না বলে চলে গেল। রাজাপ্পা টেবিলের ছড়ানো বইগুলো দেখল। ওর হাত আলতোভাবে টেবিলের ড্রয়ারের তলাটা ছুঁয়ে গেল। অসচেতন ভাবে ও ড্রয়ারটা টানল। তালা লাগানো ছিল। খুললে কেমন হয়? চাবিটা তো বইগুলোর মধ্যেই। রাজাপ্পা সিঁড়ির কাছে গিয়ে চারদিকে দেখে এল। কাউকে দেখা গেল না। ড্রয়ারটা খুলল। নাগরাজনের টিকিটের অ্যালবাম ওপরেই আছে। রাজাপ্পা প্রথম পাতাটা উল্টিয়ে লেখাগুলো পড়ল। ওর বুক টিপটিপ করতে লাগল। ড্রয়ারে তালা লাগিয়ে দিল। অ্যালবামটা হাফ প্যান্টের ভেতরে চালিয়ে দিয়ে সার্টটা নামিয়ে দিল। তারপর তাড়াতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নেমে এক ছুটে বাড়ি। বাড়িতে পৌঁছে ও অ্যালবামটা বইয়ের র‍্যাকের পেছনে লুকিয়ে রাখল। শরীর দিয়ে তখন হল্কা বেরুচ্ছে, গলা শুকিয়ে কাঠ, মাথায় রক্তের চাপ বোধ হচ্ছে। রাত আটটার সময় আপ্পু, যে ওর বাড়ির উল্টো দিকে থাকে, এসে রাজাপ্পাকে বলল যে, নাগরাজনের অ্যালবামটা চুরি গেছে। ও আর নাগরাজন শহরে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখে অ্যালবামটা চুরি গেছে। রাজাপ্পা একটা কথাও বলল না, ও মনে মনে প্রার্থনা করল, আপ্পু যেন চলে যায়। আপ্পু চলে গেলে, ও দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজায় খিল আটকে দিল। তারপর শেলফের পেছন থেকে অ্যালবামটা বের করে আনল। হাত যেন জমে গেল। কী হবে যদি কেউ জানালা দিয়ে দেখে থাকে? ও ফের অ্যালবামটা শেলফের পেছনে রেখে দিল। রাজাপ্পা রাত্রিরে খাবার প্রায় ছুঁলই না। ওর বাবা মা চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, শরীর ভালো আছে কিনা। হয়ত ঘুমিয়ে পড়লে শান্তি আসবে। রাজাপ্পা বিছানায় শুয়ে পড়ল। ঘুম কিন্তু এল না। কী হবে যদি ও ঘুমিয়ে থাকার সময় কেউ অ্যালবামটা দেখে ফেলে? ও উঠে অ্যালবামটা বের করে বালিশের তলায় রেখে দিল। রাজাপ্পা ঘুম থেকে ওঠার আগেই আপ্পু সকালে এসে হাজির। আপ্পু কিছুক্ষণ আগেই নাগরাজনের বাড়ি গিয়েছিল। 'আমি শুনলাম, তুই কাল ওর বাড়ি গিয়েছিলি?' রাজাপ্পার মনে হল ওর বুকের ধুকপুকুনি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ-ও হয়, না-ও হয় এভাবে মাথা নাড়ল। 'কামাক্ষী বলল, আমি আর নাগরাজন যখন শহরে গিয়েছিলাম, তখন তুই-ই একমাত্র ওদের বাড়িতে গিয়েছিলি?' রাজাপ্পা আঙ্গুর কথার সুরে সন্দেহ আঁচ করতে পারল। 'নাগরাজন সারা রাত ধরে কেঁদেছে। ওর বাবা পুলিশকে খবর দিতে পারে।' রাজাপ্পা কোনো কথা বলল না। নাগরাজনের বাবা পুলিশ সুপারের অফিসে কাজ করতেন। ওর ইঙ্গিত মাত্রে পুলিশবাহিনী অ্যালবাম খুঁজতে বেরিয়ে পড়বে। রাজাপ্পার ভাগ্য ভালো, যে আঙ্গুর ভাই তাকে ডাকতে এল। ও চলে যাবার অনেকক্ষণ পর অব্দি রাজাপ্পা নিজের বিছানায় নিথর হয়ে বসে থাকল। বাবা সকালের খাবার খেয়ে সাইকেল করে অফিসে চলে গেলেন। সামনের দরজায় টোকা দেবার আওয়াজ। তবে কি পুলিশ? রাজাপ্পা বালিশের তলা থেকে অ্যালবামটা আঁকড়ে ধরে, এক ছুটে ওপরে গিয়ে বইয়ের তাকের পেছনে ওটা রেখে দেয়। কী হবে যদি পুলিশ খোঁজাখুজি করে? তাক থেকে ওটা বের করে শার্টের নীচে ঢুকিয়ে নীচে নেমে এল। কেউ দরজায় টোকা দিয়েই যাচ্ছে। রান্নাঘর থেকে মা চেঁচিয়ে বললেন, 'দরজাটা খুলছিল না কেন?' খানিকক্ষণ পরে উনি নিজেই দরজা খুলে দেবেন ঠিক করলেন। রাজাপ্পা ছুটে বাড়ির পেছনে চানের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। চানের জল গরম করার জন্য একটা বড়ো উনুন ছিল। রাজাপ্পা উনুনের মধ্যে অ্যালবামটা ফেলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে অমূল্য সব টিকিট পুড়ে গেল এমন সব টিকিট যা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। রাজাপ্পার চোখ জলে ভরে গেল। মা চেঁচাচ্ছিলেন, 'তাড়াতাড়ি আয়, নাগরাজন তোর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।' রাজাপ্পা হাফ প্যান্টটা খুলে ভেজা তোয়ালে জড়িয়ে, চানের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ওপরে গেল। নাগরাজন একটা চেয়ারে বসেছিল। ভাঙা গলায় নাগরাজন বলল, 'আমার টিকিটের অ্যালবাম হারিয়ে গেছে।' ওর মুখে দুঃখের ছাপ, আর দু চোখ ফুলে লাল। রাজাপ্পা জিজ্ঞেস করল, 'কোথায় রেখেছিলি?' 'আমি নিশ্চিত, আমি ওটাকে টেবিলের ড্রয়ারে রেখেছিলাম। ড্রয়ারটাতে চাবিও লাগিয়েছিলাম। আমি খানিকক্ষণের জন্য বেরিয়েছিলাম, ফিরে এসে দেখি ওটা হাওয়া হয়ে গেছে।' ওর গাল বেয়ে চোখের জল পড়ছে। নিজেকে এত দোষী মনে হচ্ছিল যে রাজাপ্পা বন্ধুর দিকে তাকাতে পারছিল না, নাগরাজনকে বলল, “কাঁদিস না।” কিন্তু যতই নাগরাজনকে সে শান্ত করতে চেষ্টা করছিল, ততই সে কাঁদতে লাগল। রাজাপ্পা ছুটে নীচে গেল, তারপর মুহূর্তে নিজের অ্যালবামটা হাতে করে নিয়ে এল। 'নাগরাজন, এই আমার অ্যালবাম। এটা তোর। আমার দিকে এভাবে তাকাস না। আমি সত্যি তোকে এটা দিচ্ছি। অ্যালবামটা তোর।' 'তুই ঠাট্টা করছিস...' 'না। আমি এটা তোকে দিচ্ছি। সত্যি, আজ থেকে এটা তোর। এটা ধর।' নাগরাজন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। রাজাপ্পা তার অ্যালবাম দিয়ে দিচ্ছে! রাজাপ্পা ওকে নেবার জন্য অনুরোধ করে যাচ্ছে! নাগরাজন জিজ্ঞেস করল, 'তোর কী হবে?' 'আমি আর এটা চাই না।' 'একটা টিকিটও না?' 'না, একটাও না।' 'কিন্তু তুই তোর টিকিট ছাড়া কী করে বাঁচবি?' রাজাপ্পার চোখ জলে ছলছল করে উঠল। 'কাঁদিস না। তোকে অ্যালবাম দিতে হবে না। রেখে দে। কত কষ্ট করে এটা বানিয়েছিস।' 'না। তুই রাখ। এটা তোর জন্য। বাড়ি নিয়ে যা। দয়া করে নে, নিয়ে চলে যা।' কাঁদতে কাঁদতে রাজাপ্পা নাগরাজন হতবুদ্ধি হয়ে গেল। অ্যালবামটা নিয়ে নীচে নেমে এল। রাজাপ্পা জামার খুঁট দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ওর সঙ্গে সঙ্গে এল। ওরা দরজায় এসে দাঁড়াল। নাগরাজন বলল, 'ধন্যবাদ। চলি রে।' নাগরাজন রাস্তায় নেমে এসেছে, এমন সময় রাজাপ্পা ওকে ডাকল। নাগরাজন ফিরে এল। 'তুই যদি দয়া করে অ্যালবামটা শুধু আজ রাত্রিরের জন্য দিস, কাল সকালেই তোকে ফিরিয়ে দেবো।' নাগরাজন রাজি হয়ে ফিরে গেল। রাজাপ্পা সিঁড়ি বেয়ে ওর ঘরে ঢুকে খিল দিয়ে দিল। অ্যালবামটা শক্ত করে জাপটে ধরে, হু হু করে কাঁদতে লাগল। # মুরাসিং

Use Quizgecko on...
Browser
Browser