, , ( pdf).pdf

Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...
Loading...

Full Transcript

পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার ইতিহাস কতো ো পুরো োনো ো তা সঠিক করে জানা যায় না। বাংলা অঞ্চলও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়। তবে আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে যে বাংলা অঞ্চলে মানুষ ছিল, সেই প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পাথরের যুগে ব্যবহৃত হাতিয়ারের কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে? আজকের অধ্যায়ে আমরা বাংলা অঞ্চল এবং বাংলাদেশের মা...

পৃথিবীতে মানুষের টিকে থাকার ইতিহাস কতো ো পুরো োনো ো তা সঠিক করে জানা যায় না। বাংলা অঞ্চলও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়। তবে আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে যে বাংলা অঞ্চলে মানুষ ছিল, সেই প্রমাণ আমরা পেয়েছি। পাথরের যুগে ব্যবহৃত হাতিয়ারের কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে আছে? আজকের অধ্যায়ে আমরা বাংলা অঞ্চল এবং বাংলাদেশের মানুষের অর্্থনৈতিক জীবন সম্পর্্ককে জানবো ো। একটি নির্্দদিষ্ট ভূ-খণ্ডের মানুষের ইতিহাস জানতে হলে সেই মানুষের সকল রকমের কাজকর্্ম সম্পর্্ককেই জ্ঞান থাকা জরুরি। একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবে, আমাদের আশেপাশে যতো ো মানুষ আছে, তারা প্রায় সকলেই কো োন-না-কো োনভাবে অর্্থনৈতিক কাজের সাথে যুক্ত। মানুষের অধিকাংশ কাজের উপরেই অর্্থনীতির রয়েছে গভীর সংযো োগ আর প্রভাব। বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ইরফান হাবীব সহ আরও অনেকের গবেষণার সূত্র ধরে বলা যায়, কো োন একটি পণ্যের উৎপাদন, বিনিময়, বণ্টন ও ভো োগ করার যে রীতি-নীতি তা নিয়ে আলো োচনার নামই অর্্থনীতি। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্্য মূলত এই তিনের সমন্বয়েই গড়ে উঠে মানুষের অর্্থনৈতিক জীবন। কো োনো ো একটি নির্্দদিষ্ট ভূ-খণ্ডে একদল মানুষ হাজার বছরের ধারাবাহিকতায় অর্্থনৈতিক জীবন গঠন ও রূপান্তরের যে বিপুল অভিজ্ঞতা অর্্জন করেন তার কালানুক্রমিক বিবরণ পাওয়া যায় অর্্থনৈতিক ইতিহাসের আলো োচনায়। অনুশীলনী চারপাশে কত মানুষ আমাদের! কত বিচিত্র তাদের পেশা! কেউ চাষাবাদ করেন, কেউ চাকরি করেন, কেউ রিকশা চালান, কেউ জামা তৈরি করেন, কেউ খাবার তৈরি করেন, কেউ দো োকানে বসে মনো োহরি পণ্য বিক্রি করেন। এই সবই হচ্ছে মানুষের অর্্থনৈতিক কাজ। চলো ো আমরা আমাদের পরিচিত এইরকম আরও কিছু পেশার নাম লিখি এবং তারা কী ধরনের কাজ করেন তা বর্্ণনা করে নিচের ছকটি পূরণ করি। পেশা কাজের বর্্ণনা আমরা সকলেই জানি যে, আজ থেকে হাজার বছর আগে মানুষ চাষাবাদ জানতো ো না। জানতো ো না মুদ্রা বা টাকার ব্যবহার। ঘরবাড়ি নির্্মমাণ করতেও জানতো ো না। আজকের মতো ো বড় বড় হাাঁট-বাজার ছিল না। মানুষ wkÿvel© 2024 তখন ছো োট ছো োট দল বা গো োত্র গঠন করে একসাথে বসবাস করতো ো। নদী থেকে মাছ, বন-জঙ্গল থেকে বিভিন্ন পশুপাখি শিকার এবং ফলমূল সংগ্রহ করে জীবন ধারণ করতো ো। এই শিকার এবং সংগ্রহও কিন্তু মানুষের 49 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে মানচিত্র: বাংলা অঞ্চল ও বাংলাদেশ (১৩০০ সাল বা সাধারণ অব্দ পর্্যন্ত) ব্রহ্মপুত্র নদ কামরূপ পুণ্ড্র পদ্মানদী যমুনা নদী গৌ ৌড় মগধ মহাস্থানগড় র চম্পা উয়ারী বটেশ্ব উত্তর রাঢ় ভাগির বঙ্গ সমতট ময়নামতী পাণ্ডু থী নদ রাজ ার ঢিবি চট্রগ্রাম ী চন্দ্রকেতুগড় চন্দ্রদ্বীপ হরিকেল তাম্রলিপ্তি বঙ্গপো োসাগর বাংলাদেশ পাকিস্থান ভারত লাল কালিতে প্রাকৃতিক সীমানা বেষ্টিত বাংলা অঞ্চলের আনুমানিক সীমানা দেখানো ো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়া ভারতীয় উপমহাদেশ wkÿvel© 2024 বাংলা অঞ্চল ও বাংলাদেশ (প্রাচীন যুগ)। ১৩০০ সাল বা সাধারণ অব্দ পর্্যন্ত বাংলা অঞ্চলের প্রধান প্রধান জনবসতি, বন্দর ও নগরকেন্দ্রগুলির অবস্থান মানচিত্রে দেখে নেয়া যাক। ১৯৭১ সালে এই বাংলা অঞ্চলেরই পূর্্ব পাশে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। 50 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অর্্থনৈতিক কাজের মধ্যে পড়ে। সুতরাং আমরা বলেই পারি, মানুষের ইতিহাস যতো োখানি প্রাচীন, মানুষের অর্্থনৈতিক জীবনের ইতিহাস ততো োখানিই প্রাচীন। আর এই অর্্থনৈতিক ইতিহাস পাঠের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানুষে টিকে থাকার লড়াই, ধীরে ধীরে যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন, সভ্্যতা নির্্মমাণ সহ সকল কিছুই বর্্ণনা করা সম্ভব! আজকের অধ্যায়ে আমরা জানব, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে শুরু করে ইতিহাসের দীর্্ঘ পথ পরিক্রমায় বাংলা অঞ্চলে মানুষ কীভাবে শিকার ও সংগ্রহভিত্তিক অর্্থনীতি থেকে কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্্যযের বিকাশ ঘটিয়েছে। প্রাকৃতিক এবং মানুষের সৃষ্ট নানান প্রতিকূলতা, বাাঁধা-বিপত্তির পথ পেরিয়ে ধীরে ধীরে একটি ভারসাম্যমূলক অর্্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে অগ্রসর হয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলা অঞ্চলের পূর্্বভাগে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন-সার্্বভৌ ৌম রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতা অর্্জনের মাত্র ৫০ বছরের মধ্যে অর্্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতো োমধ্যেই সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অর্্থনৈতিক ইতিহাসে ভূপ্রকৃতির প্রভাব! বাংলা অঞ্চল এবং বাংলাদেশের মানুষের অর্্থনৈতিক জীবন গঠন ও রূপান্তরের এই আলো োচনায় আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে - বাংলা ছিল জল-জঙ্গলে বেষ্টিত ভূ-খণ্ড। সুপ্রাচীন কাল থেকেই এখানে নানান ধারার মানুষ এসে বসতি স্থাপন করেছে। ঝড়, তুফান, বন্যা প্রভৃতি নানান রকমের প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই মানুষ কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্্য করে অর্্থনৈতিক জীবন গঠনের চেষ্টা করেছে। বাংলার ভূমি ছিল খুবই উর্্বর। অসংখ্য নদ-নদী ছড়িয়েছিল এর সমস্ত ভূ-ভাগ জুড়ে। জলের এই অবাধ প্রবাহ চাষের জমিতে সেচের কাজে সহায়ক ছিল। এখানে প্রচুর পরিমাণে শস্য উৎপাদিত হয়। নদী ও সমুদ্রের সুবিধার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ থেকে এখানে বাণিজ্্য করতে আসার সুযো োগ পায়। কৃষি ও বাণিজ্্যযের বিকাশের সাথে সাথে শিল্পের বিকাশ ঘটে। কৃষি অর্্থনীতি বাংলা অঞ্চলের ইতিহাসে ভূ-প্রকৃতির প্রভাবের কথা আমরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাঠ করেছি। সেখানে পাণ্ডু রাজার ঢিবির কথা জেনেছি আমরা। মনে আছে নিশ্চয়ই তো োমাদের? প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে যেসব নিদর্্শন পাওয়া যায়, তা থেকে নিঃসন্দেহেই বলা যায় যে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বছর পূর্্ববে পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে একটি কৃষিভিত্তিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটেছিল। এই ঢিবির নিকটেই মহিষদল নামে অন্য একটি প্রত্নক্ষেত্রে পাওয়া গিয়েছে একটি শস্যাগারের ধ্বংসাবশেষ। শস্যাগারে প্রাপ্ত ধানের কিছু দানা নিয়ে কার্্বন-১৪ নামে একটি পরীক্ষা চালানো ো হয়। পরীক্ষা থেকে জানা যায়, শস্যাগারে পাওয়া ধানের এই দানাগুলির বয়স সাড়ে তিন হাজার wkÿvel© 2024 বছর। 51 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে এইসব নির্্দশন থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, সাড়ে তিন বা চার হাজার বছর আগেই বাংলার মানুষ ধান জাতীয় শস্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া জানতো ো এবং তা সংরক্ষণের জন্য তারা শস্যাগারও ব্যবহার করতো ো। এইরকম আরও একটি শস্যাগারের উল্লেখ আমরা পেয়েছি মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত শিলালিপিতেও। ঠিকই ধরেছো ো, প্রাক-সাধারণ অব্দ ৩য় শতকের মহাস্থান ব্রাহ্মীলিপির কথাই আমরা বলছি। বাংলা অঞ্চলে এখন পর্্যন্ত প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন এই লিপি থেকে আরও জানা যায়, বাংলা অঞ্চলে সেই সময় ধান, তিল, সরিষার মতো ো খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ো। চৈনিক পর্্যটক সুয়ান জাং (হিউয়েন সাং)-এর বিবরণী এবং একাদশ শতকে লেখা ‘রামচরিতম’ কাব্য থেকে জানা যায়, বাংলা অঞ্চলের উত্তর-পূর্্ব দিকে সেই সময়ে প্রচুর পরিমাণে কাাঁঠাল এবং আখ উৎপাদন হতো ো। প্রাচীনকালের বাংলা অঞ্চলের খুবই গুরুত্বপূর্্ণ কৃষিপণ্য ছিল এগুলো ো। প্রাচীনকালের বাংলা অঞ্চলের কৃষির কথা জানা যায় এমন অনেক উৎস এখন ইতিহাসবিদদের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্্ণ উপাদান হচ্ছে, তাম্রশাসন। বাংলা অঞ্চলের রাজা বা শাসকগণ যখন কাউকে কো োনো ো জমি দান করতেন, সেই দানের দলিল হিসেবে একটি তাম্রশাসন জারি করতেন। জমি ক্রয়-বিক্রয়ের সময়েও এই দলিল জারি করা হতো ো। ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়, শাহানারা হো োসেন, রিয়াসুকে ফুরুই বাংলা অঞ্চলের প্রাচীনকালের অনেকগুলো ো তাম্রশাসন নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাম্রশাসনগুলো ো বিশ্লেষণ করে সেই সময়ের কৃষি সম্পর্্ককিত নানান ধরনের তথ্য তাাঁরা আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া অর্্থনৈতিক ইতিহাসবিদ রণবীর চক্রবর্তী বাঙলার অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে বিস্তর গবেষণা করেছেন নতুন নতুন অনেক তথ্য বাঙলার অর্্থনৈতিক ইতিহাসে যুক্ত করেছেন। সপ্তম থেকে একাদশ শতকের তাম্রশাসনগুলো োতে যেসব কৃষিপণ্যের নাম পাওয়া যায় তার মধ্যে- আম, মহুয়া, পান, সুপারি, নারকেল, কলা, ডালিম, খেজুর, তুলা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযো োগ্য। তুলা ছিল বাংলার একটি অন্যতম প্রধান অর্্থকরী ফসল। তুলা থেকে প্রধানত সুতা উৎপাদন করে বস্ত্র বুনন করা হতো ো। শুধু কৃষিপণ্যের নাম নয়, কৃষি জমির ধরণ, পরিমাপ পদ্ধতি ও মূল্য সম্পর্্ককে তথ্য পাওয়া যায় তাম্রশাসনগুলো োতে। বন বা জঙ্গল কেটে নতুন গ্রাম প্রতিষ্ঠা এবং চাষের জন্য জমি পুনরুদ্ধারের খবর জানা যায়। তাছাড়া ভূমিদানে এই দলিলগুলো ো থেকে চার ধরণের রাজস্বের কথাও জানা যায়। এগুলো ো হচ্চ্ছে- ◊ ভাগ ◊ ভো োগ ◊ কর এবং ◊ হিরণ্য। তেরো ো থেকে সতের-আঠারো ো শতকের বাংলা অঞ্চলের কৃষি সম্পর্্ককে গুরুত্বপূর্্ণ তথ্য পাওয়া যায় বিদেশী পর্্যটক এবং বণিকদের বিভিন্ন লেখা থেকেও। চতুর্্দশ শতাব্দীতে ইবনে বতুতা নামক একজন পরিব্রাজক বাংলায় wkÿvel© 2024 এসেছিলেন। ইবনের বতুতার ভ্রমণ-বৃত্তান্তে বাংলা অঞ্চলের ধান-চালের প্রাচুর্্যযের কথা বলা আছে। অন্যান্য স্থানের তুলনায় এগুলো ো দামেও খুব সস্তা ছিল বলে ইবনে বতুতা লিখেছেন। কিন্তু এই সস্তা দাম সত্ত্বেও বাঙলা 52 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অঞ্চলে বসবাসকারী সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ছিল কিনা তা অবশ্য তিনি বলেন নি। ধান-চালের বাইরে আরও যেসব পণ্যের নাম ইবনে বতুতার লেখা থেকে জানা যায় তা হচ্ছে, মুরগি, পায়রা, ভেড়া, গরু, মহিষ, ঘি, চিনি, তিল, তেল, কার্্পপাস বস্ত্র ইত্্যযাদি। বাংলা অঞ্চলের আরেকটি গুরুত্বপূর্্ণ অর্্থ উৎপাদনকারী কৃষিপণ্য ছিল পাট। বাংলায় পাটের উৎপাদন এবং পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কথা জানা যায় চতুর্্দশ শতকে রচিত বিভিন্ন সাহিত্্যকর্্ম থেকে। বিশ শতকের মধ্যভাগ অবধি বাংলায় প্রচুর পরিমাণে পাটের চাষ হতো ো। নদীমাতৃক বাংলায় জলের প্রাচুর্্য এবং আদ্র জলবায়ু পাটের এই ব্যাপক উৎপাদনে বিপুলভাবে সাহায্য করেছে। এই পাটকে এক সময় বলা হতো ো সো োনালী আঁশ। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সঙ্গেও এই সো োনালী আঁশ নানাকারণে নানাভাবে জড়িত হয়ে আছে যা পরবর্তী শ্রেণিতে তো োমরা বিস্তারিত পরিসরে জানতে পারবে। প্রাচীনকাল থেকেই কৃষি এবং পশুপালন একে অন্যের সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিল। কৃষিকাজে গরু, মহিষের ব্যবহার সুপ্রাচীন কাল থেকেই হয়ে আসছে। কৃষির আরেকটি লাভজনক প্রাচীন পেশা হচ্ছে মাছ শিকার। অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল, জলাধারে পূর্্ণ বাংলা অঞ্চলের মানুষের কাছে মাছ বরাবরই একটি প্রিয় খাবার। ‘মাছে- ভাতে বাঙালি’ বলে একটি প্রবাদ এখনও বাংলার মানুষের মুখে মুখে ঘুরে-ফিরে বেড়ায়। শিল্প অর্্থনীতি তাাঁত বস্ত্র তৈরিতে নিয়ো োজিত কারিগর। ৩০০ পূর্্ববাব্দ থেকে শুরু করে ইতিহাসের প্রতিটি কালপর্্ববে ইউরো োপ, চীন, আরব লেখক, পরিব্রাজক এবং বণিকদের বর্্ণনায় বাংলার উৎকৃষ্ট বস্ত্রশিল্প এবং বয়নশিল্পীদের দক্ষতার প্রশংসা wkÿvel© 2024 করা হয়েছে। প্রাচীনকালের ধারা অনুসরণ করে এখনও পাশ্চাত্্য দেশগুলো োর বাজারে বাংলা অঞ্চল এবং বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশে তৈরি রেডিমেড গার্্মমেন্টস বিশেষ জায়গা অধিকার করে আছে। 53 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে সভ্্যতার বিকাশে কৃষির পরেই আসে শিল্পের কথা। বাণিজ্্যযিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কো োন একটি বিশেষ পণ্য উৎপাদন এবং বাজারে বিপনন করা হলে আমরা তাকে শিল্প পণ্য বলি। আমরা জেনে অবাক হই যে, আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেই বাংলা অঞ্চলে এমন কয়েকটি শিল্পপণ্যের বিকাশ ঘটেছিল যার খ্যাতি পূর্্ব দিকে চীন ও দক্ষিণ-পূর্্ব এশিয়া থেকে শুরু করে পশ্চিমে আরব, ইউরো োপের ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল! বাংলার সবচেয়ে প্রাচীন ও বিখ্যাত শিল্পপণ্যের নাম হচ্ছে বস্ত্রশিল্প। আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে লেখা ‘অর্্থশাস্ত্র’ নামক একটি গ্রন্থে বঙ্গ এবং পুণ্ড্র জনপদে তৈরি সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্রের প্রশংসা করা হয়েছে। বঙ্গে ও পুণ্ড্রে সেই সময় অনেক প্রকারের বস্ত্র তৈরি হতো ো। সাধারণ অব্দ প্রথম শতকে লেখা একজন গ্রিক নাবিকের ‘পেরিপ্লাস’ নামক গ্রন্থে বাংলার উন্নতমানের মসলিন কাপড়ের কথা বলা হয়েছে। রেশম সুতো োয় বো োনা অত্্যন্ত মিহি আর উন্নতমানের রেশমি বস্ত্রের খ্যাতি চীন, আরব এবং ইউরো োপের ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছিল। সেইসব দেশের বাজারে বাংলার বস্ত্রের বিরাট চাহিদাও তৈরি হয়েছিল। নবম শতকের আরব বণিক সো োলায়মান তাাঁর একটি গ্রন্থে লিখেছেন, বাংলায় বিশেষ এক ধরনের বস্ত্র পাওয়া যায় যা গো োটা দুনিয়ায় বিরল। এই বস্ত্র এতো োই সূক্ষ্ম এবং মসৃণ ছিল যে একটি আংটির ভেতর দিয়ে আস্ত একটি পো োশাক চালান করে দেওয়া যেতো ো। চৌ ৌদ্দ-পনেরো ো শতকে বাংলায় আগত চীনা রাজদূতদের লেখা থেকেও বেশ কয়েক ধরণের উন্নতমানের বস্ত্রের নাম পাওয়া যায়। ইউরো োপীয় বণিক এবং লেখকদের লেখা থেকে জানা যায়, সতের শতকেও সেখানকার মানুষের মধ্যে বাংলা অঞ্চলে তৈরি বস্ত্রের প্রতি ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। চলো ো এইবার একটি ভিন্ন রকমের শিল্পের কথা জানি। এই শিল্পটির বিকাশে বাংলার ভূ-প্রকৃতির রয়েছে বিরাট প্রভাব। অসংখ্য নদ-নদী, খাল-বিল এবং জলাভূমিতে পরিপূর্্ণ বাংলার মানুষের পক্ষে স্থলপথে যাতায়াতের সুবিধা ছিল খুবই কম। প্রাচীনকাল থেকেই তাই বাংলা অঞ্চলের মানুষের চলাচল এবং পণ্য পরিবহণের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠে বিভিন্ন রকমের নৌ ৌকা। প্রয়ো োজনের তাগিদেই নৌ ৌ-শিল্পের উদ্ভব এবং বিকাশ ঘটেছিল। দেশের অভ্্যন্তরে এবং সমুদ্রে চলাচলের উপযো োগী নানান আকৃতির নৌ ৌযান তৈরিতে দক্ষ ছিল বাংলার নৌ ৌ-শিল্প কারিগরেরা। নৌ ৌকার গলুইকে সিংহ, হংস প্রভৃতি পশু-পাখি বা মাছের মতো ো করে আকৃতি দান করা হতো ো। আকৃতি এবং কাজের ধরণ অনুযায়ী এদের সুন্দর সুন্দর নামও দেওয়া হতো ো। কো োষা, ডিঙ্গি, ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, পানসি, পাতাম, সাম্পান, সওদাগরী, ইলশা- এগুলো ো হচ্ছে বিভিন্ন রকমের নৌ ৌযানের নাম। বাংলার পশ্চিমাংশে অবস্থিত চন্দ্রকেতুগড় প্রত্নস্থল থেকে জাহাজ ও ঘো োড়ার ছবি যুক্ত সীলমো োহর পাওয়া গেছে। দুই হাজার বছর আগে বাংলা অঞ্চলের সাথে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের সমুদ্র বাণিজ্্যযের প্রমাণ রয়েছে এই সীলমো োহরগুলিতে। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বিভিন্নলেখা থেকে জানা যায়, নৌ ৌকাগুলো ো যুদ্ধের কাজেও ব্যবহৃত হতো ো। একেকটা নৌ ৌকা তিনশো ো গজ লম্বা এবং দুইশো ো গজ চওড়া হতো ো। দুই পাশে শতাধিক দাাঁড় ও বৈঠা ফেলে সেইসব নৌ ৌকা চালানো োর ব্যবস্থা ছিল। wkÿvel© 2024 54 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান wkÿvel© 2024 অসংখ্য খাল-বিল, নদী-নালা ও জলাভূমিতে পূর্্ণ বাংলা অঞ্চলে মানুষ সুপ্রাচীনকাল থেকেই চলাচল এবং মালামাল পরিবহনে নৌ ৌকার ব্যবহার করে আসছে। নৌ ৌ-শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। তৈরি হয়েছে নানান আকৃতি-প্রকৃতির নৌ ৌযান। 55 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্্ববে মাটি, কাাঁচ ও পাথর দিয়ে বিচিত্র রকম পুতি ুঁ তৈরি করা হতো ো এমন একটি প্রত্নস্থল পাওয়া যাবে বর্্তমান বাংলাদেশের নরসিংদী জেলার উয়ারি-বটেশ্বর নামক দুটি গ্রামে। প্রাচীন এই শিল্প এলাকাটির সঙ্গে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্্য যো োগাযো োগ গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। উয়ারি-বটেশ্বরে ুঁ বা গুটিকা বাংলা অঞ্চলের শিল্প অর্্থনীতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে প্রত্নক্ষেত্রে প্রাপ্ত পুতি থাকে। ঊয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত বিভিন্ন রকমের পুতি ুঁ / গুটিকা। ওয়ারী-বটেশ্বর ছিল মূলত একটি শিল্প এলাকা। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর পূর্্ববে মাটি, কাাঁচ ও পাথর দিয়ে এখানে বিচিত্র রকম ুঁ তৈরি করা হতো ো। এগুলো ো এখান থেকে পুতি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হতো ো। -ইতিহাসবিদ ড.এনামুল হক (বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্্চচার আন্তর্্জজাতিক কেন্দ্র) হাজার বছর ধরে বাংলার দক্ষ কারিগরেরা বিভিন্ন রকমের শিল্প পণ্য নির্্মমাণ করে দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি ছড়িয়েছেন। লো োহা, তামা, রূপা এবং স্বর্্ণনির্্মমিত বিভিন্ন সময়ের নানান রকমের প্রত্ননিদর্্শন পাওয়া গেছে বাংলার বিভিন্ন স্থানে। শিল্প অর্্থনীতির ইতিহাসের ধারাবাহিক অগ্রগতি অনুধাবনে এগুলো ো খুবই গুরুত্বপূর্্ণ। শঙ্খ, কাাঁসা এবং দারুশিল্প বাংলা অঞ্চলের শিল্প-অর্্থনীতির ইতিহাসের আরও কিছু উজ্জ্বল দিক। শঙ্খ এবং কাসা দিয়ে তৈরি হতো ো দৈনন্দিন ব্যবহার্্য নানা শৌ ৌখিন পণ্য। কাঠ কেটে যারা সুন্দর শিল্প নির্্মমাণ করতেন তাদের ুঁ বাতা, দরজা সহ নানান জিনিস তৈরি করা হতো ো অপূর্্ব বলা হয় দারুশিল্পী। কাঠের পালঙ্ক, পিিঁড়ি, বাটি, খুটি, সুন্দর নকশা আর গড়নের ধারা অনুসরণ করে। এগুলো োর বেশকিছু নিদর্্শন আমরা দেখতে পাবো ো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে এবং জেলা পর্্যযায়ের বিভিন্ন জাদুঘরে। ব্যবসায়-বাণিজ্্য ব্যবসা-বাণিজ্্যযের সহজ একটি মানে হচ্ছে, কো োন একটি পণ্য কাউকে দান করে সমান মূল্যের অন্য একটি পণ্য গ্রহণ করা। আরও সহজ করে এই প্রথাটিকে বলা হয় বিনিময় প্রথা। ইতিহাসের আদিতে মানুষ যখন মুদ্রা বা টাকার আবিষ্কার করেনি, তখনও কিন্তু বিনিময় প্রথা ছিল। সেই সময়ে মানুষ নিজের উৎপাদিত একটি পণ্যের বিনিময়ে অন্য কারও কাছ থেকে প্রয়ো োজনীয় আরেকটি পণ্য নিতেন। সভ্্যতার অগ্রগতির ফলে মানুষ এক সময় wkÿvel© 2024 এই বিনিময় ব্যবস্থাকে সহজ করার জন্যে মুদ্রা বা টাকার আবিষ্কার করে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্্যযের পথ আরও বেশি সুগম হয়ে উঠেছে। 56 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান মুদ্রা ও টাকার ইতিহাস বাংলা অঞ্চলে প্রথম মুদ্রার উল্লেখ পাওয়া যায় মহাস্থান ব্রাহ্মীলিপিতে। প্রাক-সাধারণ অব্দ তৃতীয় শতকের এই লিপিতে ‘গণ্ডক’ ও ‘কাকিনী’ নামের দুই ধরনের মুদ্রার উল্লেখ রয়েছে। ধারণা করা হয়, গণ্ডক ও কাকিনী সেই সময় বাংলার উত্তর-পশ্চিম অংশে চালু ছিল। অনেকেই মত দিয়ে থাকেন, গণ্ডক শব্দটি এসেছে কড়ির গৌ ৌড়ের শাসক শশাঙ্কের মুদ্রা হিসেব থেকে। এক গণ্ডক মানে এক গণ্ডা বা চারটি কড়িকে বো োঝানো ো হয়েছে। উত্তর ভারতকেন্দ্রিক গুপ্ত শাসকেরা ৩য় বা ৪র্্থ শতকে বাংলা অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন। গুপ্ত শাসকদের জারি করা প্রচুর স্বর্্ণ, রৌ ৌপ্য ও তাম্র মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে বাংলা অঞ্চলের বিভিন্ন অংশে। ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতকে বাঙলা অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ শাসনকারী কয়েকজন স্বাধীন শাসক নিজ নিজ এলাকা থেকে মুদ্রা জারি করেছিলেন। এঁদের মধ্যে শশাঙ্ক-এর নাম উল্লেখযো োগ্য। পাল এবং সেন শাসকদের সময়ে মুদ্রা হিসেবে কড়ির প্রচলন ছিল বেশি। এছাড়াও এই সময় বিনিময় মাধ্যম হিসেবে স্বর্্ণ এবং রৌ ৌপ্যের চূর্ণীর (গুুঁড়া করা সো োনা ও রূপার) ব্যবহার ছিল বলে জানা যায়। বাঙলার দক্ষিণ-পূর্্ব প্রান্তে হরিকেল মুদ্রা নামে বিপুল সংখ্যক মুদ্রা পাওয়া গেছে। ১৩০০ সালের পর থেকে বাঙলা অঞ্চলে নিয়মিত মুদ্রা প্রকাশিত হচ্ছে। উত্তর ভারত থেকে প্রকাশিত মুদ্রাও এখানে চলতো ো। আঠারো ো শতকের দ্বিতীয়ার্ ্ধ থেকে ব্রিটিশ শাসকেরা মুদ্রা কড়ি জারি করেছেন। মুদ্রা যেখান থেকে জারি বা ছাপা হতো ো সেটিকে টাকশাল বলা হতো ো। শাসকগণ নিজেদের দখলকৃত এলাকায় টাকশাল স্থাপন করে এইসব মুদ্রা জারি করতেন। বাংলায় প্রথম বিনিময় মাধ্যম হিসেবে কাগজের নো োট ছাপা হয় ১৮৬১ সালে। বর্্তমানে বাংলাদেশের মুদ্রার নাম টাকা। wkÿvel© 2024 57 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে নদীমাতৃক বাংলা অঞ্চলের উর্্বর পলিমাটিতে সবসময়ই উৎপাদিত হতো ো প্রচুর খাদ্যশস্য। এখানকার বনাঞ্চলে পাওয়া যেতো ো প্রচুর পশুপাখি, ঔষধি বৃক্ষ, সুগন্ধি কাঠ এবং মশলা। সম্পদের এই প্রাচুর্্য ব্যবসা-বাণিজ্্যযের বিকাশের পেছনে গুরুত্বপূর্্ণ অবদান রেখেছে। একদিকে ছিল সম্পদের প্রাচুর্্য। অন্যদিকে বাংলার অসংখ্য নদীনালা আর সমুদ্র পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে দান করেছে অবাধ সুবিধা। দক্ষিণের উন্মুক্ত সমুদ্র বাংলাকে যুক্ত করেছে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চল, আরব, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্্ব এশিয়ার সমুদ্র বাণিজ্্যযের জলপথগুলো োর সাথে। বাংলার প্রাচীনতম প্রত্নস্থল পাণ্ডুরাজার ঢিবি। এখানে স্টিটাইট পাথরের গো োলাকার সিল পাওয়া গিয়েছে। সিলে রয়েছে খো োদাই করা কতগুলো ো চিহ্ন। চিহ্নগুলো োকে অনেকেই চিত্রাক্ষর বলে মনে করেন। এই চিত্রাক্ষরের সঙ্গে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকায় অবস্থিত ক্রীট দ্বীপের চিত্রাক্ষরের মিল রয়েছে। এগুলো ো এখন পর্্যন্ত পাঠো োদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে এই চিত্রাক্ষর প্রমাণ করে বাংলা অঞ্চলের সঙ্গে ভূ-মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বণিকদের নিশ্চয়ই বাণিজ্্যযিক যো োগাযো োগ ছিল। ভূ-মধ্যসাগরীয় এলাকার সঙ্গে আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে যে বাংলার বাণিজ্্য সম্পর্্ক ছিল তার অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায় গ্রিক এবং ল্যাটিন লেখক, বণিক এবং নাবিকদের লেখাতেও। প্রথম শতকে, অর্্থথাৎ আজ থেকে দুই হাজার বছর আগে একজন গ্রিক নাবিকের লেখা ‘পেরিপ্লাস’ গ্রন্থে বাংলা অঞ্চল থেকে রপ্তানি করা হতো ো এইরূপ কিছু বাণিজ্্যপণ্যের নাম উল্লেখ রয়েছে। এগুলো ো হচ্ছে, তেজপাতা, সুগন্ধি তেল এবং সুক্ষ্ম সুতিবস্ত্র। বাংলা অঞ্চলের কয়েকটি উল্লেখযো োগ্য বাণিজ্্য বন্দর প্রাচীনকালে বাংলা অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্্যযের বিস্তারে কয়েকটি নৌ ৌ বন্দর এবং সমুদ্র বন্দরের ভূমিকা ছিল ব্যাপক। এর মধ্যে চন্দ্রকেতুগড়, তাম্রলিপ্তি এবং সমন্দরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযো োগ্য। তাম্রলিপ্তির সঙ্গে প্রায় গো োটা পৃথিবীর সামুদ্রিক যো োগাযো োগ ছিল বলে প্রাচীন ইতিহাসের দিকপাল ড. এনামুল হক তাাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন। তাম্রলিপ্তির ধ্বংসাবশেষ বর্্তমানে পাওয়া যাবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের তমলুক জেলায়। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্্য, সিংহলী গ্রন্থ এবং গ্রিক ও চৈনিকদের লেখায় তাম্রলিপ্তি বন্দরের উল্লেখ রয়েছে। রূপনারায়ণ নদীর তীরে অবস্থিত এই বন্দরটি প্রাক-সাধারণ অব্দ তৃতীয় শতক থেকে সাধারণ অব্দ অষ্টম শতক পর্্যন্ত সক্রিয় ছিল। এটি ছিল বাংলার সবচাইতে পুরাতন গুরুত্বপূর্্ণবন্দর এবং নগরকেন্দ্র। ইতিহাসবিদ ড. এনামুল হক-এর গবেষণা থেকে জানা যায়, নদীতে অত্্যধিক পলি জমার কারনে অষ্টম শতক থেকে বন্দরটি ক্রমেই তার গুরুত্ব হারায়। wkÿvel© 2024 58 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান আঞ্চলিক বাংলা ও বাংলাদেশ (১৩০০ সাল বা সাধারণ অব্দ পর্্যন্ত) তাম্রলিপ্তি, চন্দ্রকেতুগড় এবং সমন্দর বন্দরের অবস্থান নির্্দদেশ করা হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদ কামরূপ মগধ ব্রহ্ম মহাস্থানগড় যমুনা নদী পুত্র নদ পদ্মা নদী ঘনা মে রাঢ় দী ন ভাগি বঙ্গ সমতট ময়নামতি রথী নদী চট্রগ্রাম চন্দ্রকেতুগড় সমন্দর হরিকেল তাম্রলিপ্তি বঙ্গপো োসাগর তাম্রলিপ্তি ছিল বাংলা অঞ্চলের পশ্চিমদিকে অবস্থিত বাণিজ্্য-বন্দর। বন্দরটি যে সময় থেকে নিষ্ক্রিয় হতে শুরু করে সেই সময়েই বাংলার পূর্্বদিকে বর্্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সন্নিকটে সমন্দর নামে একটি বন্দরের উত্থান হয়। একাদশ শতকের অল্প কিছু আগে থেকে বাংলা অঞ্চলের গুরুত্বপূর্্ণ সমুদ্র বন্দর হয়ে ওঠে সমন্দর। এই বন্দর ধরে ব্যবসা-বাণিজ্্য করেছে আরব বণিকেরা, পরবর্তীকালে পর্তুগীজ, ডাচ, ফরাসি এবং ইংরেজ বণিকেরা। বিভিন্ন উৎসে সমন্দর বন্দরটিকে সুদকাওয়ান নামেও ডাকা হয়ে থাকে। সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি কয়েকটি অভ্্যন্তরীণ নৌ ৌ-বন্দরও প্রাচীনকালে বাংলা অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্্যযে গুরুত্বপূর্্ণ ভূমিকা রেখেছে। অভ্্যন্তরীণ বন্দরের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী উয়ারী-বটেশ্বর এবং ক্ষীরো োদা নদী wkÿvel© 2024 তীরবর্তী দেবপর্্বত বিশেষভাবে উল্লেখযো োগ্য। প্রাচীন দেবপর্্বত বর্্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলার লালমাই ময়নামতি এলাকায় অবস্থিত। 59 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে ১৯৪৭ সালে ভারত ও বাংলা ভাগ হয়। ভারত ভাগ হয়ে হয় দুটো ো দেশ- ভারত আর পাকিস্তান। বাংলা ভাগ হয় দুই নামে- পূর্্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা। এই বিভাজন বাংলার মানুষের অর্্থনৈতিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। বাংলা অঞ্চলের পূর্্বভাগ যা পূর্্ব পাকিস্তান (পূর্্ব বাংলা) নাম ধারণ করে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত হয় এটি ছিল অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া একটি এলাকা। সেই সময় পূর্্ব বাংলায় পাট, লো োহা, স্টিল, লবণ, কাগজ বা রাসায়নিক কারখানা- কো োনটাই ছিল না। ১৯৫০-এর দশক হতে অল্পকিছু কিছু কল-কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করলেও অধিকাংশ কারখানার মালিক ছিলেন অ-বাঙালি। কৃষিক্ষেত্রেও বাংলার পূর্্ব অংশের মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হয়। বাংলার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করে প্রভূত অর্্থ আয় হলেও পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যমূলক নীতির কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এর ফলে পাকিস্তানের দুই অংশের মানুষের মধ্যে মাথাপিছু আয়ের হিসাবেও বৈষম্য বাড়ে। বাংলার পূর্্ব অংশের মানুষেরা অর্্থনীতিতে অধিক অবদান রাখা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগো োষ্ঠী দ্বারা শো োষিত হতে থাকে। পাকিস্তান সরকারের এই বৈষম্যমূলক আচরণের ফলেই বাংলার পূর্্ব অংশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্্ষষোভের সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্্ব পাকিস্তান থেকে যে স্বাধীন ও সার্্বভৌ ৌম বাংলাদেশের জন্ম হয় তার নেপথ্যে বাংলার মানুষের অর্্থনৈতিক মুক্তির বাসনা গুরুত্বপূর্্ণ চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। অনুশীলনী ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে বাঙলা অঞ্চলের পূর্্ব অংশে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। অর্্থনৈতিক ক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক নীতি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পেছনে কীভাবে ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে উপরের পাঠের আলো োকে চলো ো একটি প্রতিবেদন লিখি- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- ----------------------------------------------------------------------------------------------------------- স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে (১৯৭১-২০২3) হাজার বছরের কাল পরিক্রমায় বাংলা নামের যে অঞ্চলের কথা আমরা জেনেছি, সেই অঞ্চলেরই পূর্্ব অংশে wkÿvel© 2024 ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্্বভৌ ৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্্জনের পঞ্চাশ বছর পূর্্ততি উপলক্ষ্যে সুবর্্ণজয়ন্তী পালন করেছে। চলো ো এইবার গত ৫২ বছরের স্বাধীন 60 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বাংলাদেশে মানুষের অর্্থনৈতিক জীবন এবং রূপান্তরের অভিজ্ঞতা সম্পর্্ককে কিছু গুরুত্বপূর্্ণ তথ্য জেনে নেই। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মাটিতে পা রেখেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে মনো োনিবেশ করেন। দীর্্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্্য, কলকারখানা, রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ো- সকল কিছুই ভেঙে গিয়েছিল। অর্্থনৈতিক জীবনে নেমে এসেছিল চরম বিপর্্যয়। এই বিপর্্যয় থেকে বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করে তাদের অর্্থনৈতিক জীবনে সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করার জন্যে বঙ্গবন্ধু নানান উদ্্যযোগ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন, একটি সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে। এই লক্ষষ্য অর্্জনে তিনি দিন-রাত কাজ করে বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। তাাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পূর্্ববেই ১৫ আগস্ট ভো োরবেলা মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি তাদের দেশীয় ও আন্তর্্জজাতিক দো োসরদের সাথে ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাাঁর উপস্থিত পরিবার পরিজন এবং তাাঁর কিছু সহকর্মীকে হত্্যযা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্্যযাকান্ডের পর স্বাধীন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর সো োনার বাঙলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ থেকে ছিটকে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরো োধী কার্্যকলাপ মুখ্য হয়ে ওঠে। শিক্ষাক্ষেত্রে উপনিবেশিক শক্তির প্রভাব শুরু হয়। মানুষের অর্্থনৈতিক মুক্তির যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশে দীর্্ঘদিনের জন্যে সামরিক শাসন নেমে আসে। এইসব বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বাংলাদেশের মানুষের অর্্থনৈতিক জীবনে সমৃদ্ধি অর্্জনের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে। অর্্থনৈতিক মুক্তি অর্্জনের পথে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অঙ্গনের বহু বাাঁধা-বিপত্তি সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার অর্্থনৈতিক ক্ষেত্রে এমনকিছু নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন যার ফলে বর্্তমান বাংলাদেশ গো োটা পৃথিবীর পাাঁচটি দ্রুত বর্ ্ধনশীল-অর্্থনীতির একটির তালিকায় নাম লেখাতে সক্ষম হয়েছে। অর্্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিছু সংস্কার ও নীতিমালা প্রণয়ন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দারিদ্রর্যমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের পথ ধরেই দারিদ্রর্য দূরীকরণ এবং খাদ্যে নিরাপত্তা আনার জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করেন। দুখী মানুষের মুখে হাসি ফো োটাতে শিক্ষার বিস্তার, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌ ৌঁঁছে দেওয়া, উন্নত যো োগাযো োগ ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা সহ আরও নানান পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেন। যার ফলে এখানকার মানুষের সামগ্রিক জীবনমানে দৃষ্টান্তমূলক উন্নতি সাধিত হয়েছে। ২০০০ সালেও বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮.৯% যা কিনা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে কমতে শুরু করে এবং ২০২০ সালের মধ্যে ২০.৫% এ নেমে আসে। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশের জিডিপি আকার ছিল ১৮.১৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার। ২০২১ সালে এই আকার হয়েছে ৪০৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার। একটি দেশের অভ্্যন্তরে সারা বছর ধরে যে পরিমাণ দ্রব্য ও সেবা উৎপাদিত হয় তার মূল্যই হচ্ছে মো োট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি বা গ্্ররোস ডমেস্টিক প্রডাক্ট)। আগের বছরের তুলনায় পরের বছরে এ উৎপাদন যে হারে বাড়ে সেটি হচ্ছে জিডিপির প্রবৃদ্ধি। জিডিপি একটি দেশের অর্্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান সূচক। অর্্থনৈতিক, সামাজিক, খনিজ, মানবসম্পদ, স্বাস্থথ্য, এবং নারীর উন্নয়নের মানদণ্ড বা অনেকগুলো ো wkÿvel© 2024 সূচকে বাংলাদেশ বর্্তমানে ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যূরো ো অফিসের তথ্য থেকে আমরা এবিষয়ে আরো ো বিস্তারিত জানতে পারবো ো। 61 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে একটি দেশের অর্্থনৈতিক উন্নয়নে পরিবহন, যো োগাযো োগ ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো োগত উন্নয়নের ভূমিকা অপরিহার্্য। ২০০৯ সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিবহন ও যো োগাযো োগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ঢাকা সহ সমগ্র বাংলাদেশের জন্যে একটি ব্যাপক ও বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ফলস্বরূপ চার লেনের হাইওয়ে বা মহাসড়ক নির্্মমাণ করে ঢাকার সঙ্গে নতুন প্রতিষ্ঠিত বিভাগ ময়মনসিংহ এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে যুক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালের জুন মাসে জাাঁকজমকপূর্্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্্ববোধন করেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে চ্্যযালেঞ্্জিিং এবং সর্্ববৃহৎ অবকাঠামো ো প্রকল্প পদ্মা সেতু। দুইস্তর বিশিষ্ট এই সেতুটির উপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে রয়েছে রেলপথ। পদ্মা সেতুর সড়কপথ চালু হবার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের দক্ষিণ দিকের বিরাট অংশ এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে সরাসরি ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্তরের রেলপথটি চালু হবার ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশের সঙ্গে সরাসরি রেলপথেও যো োগাযো োগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পদ্মাসেতুর সাফল্যে এবং অর্্থনৈতিক অগ্রগতিতে দেশের আপামর জন- সাধারণ যে আস্থা ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিরল। wkÿvel© 2024 পদ্মা সেতু ও মেট্্ররোরেল বাংলাদেশের অবকাঠামো োগত উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ 62 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের অধীনে নির্্মমিত হয়েছে দ্রুতগামী বাস পরিবহন লেন, এক্সপ্রেসওয়ে সহ নানান ধরনের সংযো োগ সড়ক। ঢাকার ভেতরে বসবাসরত নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্্তমান সরকার ঢাকা মেট্্ররোরেল সহ অনেকগুলো ো ফ্লাইওভার নির্্মমাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন যা ইতো োমধ্যেই সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের যো োগাযো োগ এবং পরিবহন ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো োর মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৬০ মিটার উচ্চতায় নির্্মমিত থানচি থেকে আলীকদম রো োড এবং কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্্যন্ত নির্্মমিত মেরিনড্রাইভ বিশেষ উল্লেখযো োগ্য। এই দুটি সড়কের মাধ্যমে বাংলাদেশের দুর্্গম পার্্বত্্য এবং উপকূলীয় এলাকায় চলাচল ও পরিবহনের কাজকে সহজতর করেছে। কর্্ণফুলি নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল বাংলাদেশের যো োগাযো োগ ব্যবস্থার ইতিহাসে এক দৃষ্টান্তমূলক সংযো োজন। আধুনিক যুগে মানুষের সকল কর্্মকাণ্ডই যো োগাযো োগ ও তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশের মানুষকে তথ্যপ্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ত করে উন্নয়নের পথে ধাবিত করার জন্যেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ে তো োলার রূপকল্প ঘো োষণা করেছিল। এই রূপকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রযুক্তিপণ্যকে সহজলভ্্য করে মানুষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহারও সুলভ করা হয়েছে। এরই ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাই, ২০২০ সালে করো োনা মহামারীর কালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা গ্রহণ, অফিস-আদালত এবং ব্যবসা-বাণিজ্্য পরিচালনা করতে সক্ষম হয়েছে। অর্্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ো শিল্পক্ষেত্রেও স্বাধীন বাংলাদেশ লক্ষষ্যনীয় উন্নয়ন সাধন করেছে। বর্্তমান বাংলাদেশে প্রধানতম শিল্প হচ্ছে রেডিমেড গার্্মমেন্টস বা তৈরি পো োশাক শিল্প। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৩১ মিলিয়ন মার্্ককিন ডলার মূল্যের তৈরি পো োশাক রপ্তানি হয়েছে। মাত্র কয়েক দশকেই শিল্পটির ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। ২০২১-২২ অর্্থবছরে দেখা যায়, তৈরি পো োশাক রপ্তানি হয়েছে ৪৩ বিলিয়ন মার্্ককিন ডলার সমমূল্যের যা কিনা বাংলাদেশের মো োট রপ্তানি আয়ের ৮২%-এর চেয়েও বেশি। তৈরি পো োশাক শিল্প ছাড়াও ঔষধ, জাহাজ ভাঙা, সিমেন্ট প্রভৃতি শিল্পক্ষেত্র বাংলাদেশের অর্্থনীতিতে গুরুত্বপূর্্ণ অবদান রাখছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের অর্্থনৈতিক মুক্তির জন্যে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তাাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা তা বাস্তবায়নে দিন- রাত পরিশ্রম করে চলেছেন। আধুনিক প্রযুক্তিপণ্য, কলকারখানা এবং যানবাহন চালনায় কয়লা, জ্বালানি তেল, গ্যাস, পেট্্ররোলিয়াম এবং বিদ্যুৎ শক্তির প্রয়ো োজনীয়তা অপরিহার্্য। কয়লা, তেল প্রভৃতি বাইরে থেকে আমদানি না করেই শক্তির চাহিদা পূরণ করার জন্যে বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ার সঙ্গে একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৭ সাল থেকে পাবনা জেলার রূপপুরে এই পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্্মমাণ কাজ শুরু হয়েছে। রামপাল, পায়রা এবং মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট সম্পুর্্ণভাবে চালু হলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ লক্ষষ্য অর্্জনের চূড়ান্ত ধাপে পৌ ৌঁঁছে যাবে। wkÿvel© 2024 গত প্রায় এক দশক ধরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭% এর উপরে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের হিসেবেও গত 63 বাংলা অঞ্চল ও স্বাধীন বাংলাদেশ: অর্্থনৈতিক ইতিহাসের সন্ধানে এক দশকে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নিচে একটি রেখাচিত্র দেয়া হলো ো, যেটি বিশ্লেষণ করলে আমরা নিজেরাই ১৯৭১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্্যন্ত বাংলাদেশের মাথাপিছু আয়ের উর্ ্ধমুখী নমুনা বুঝতে পারবো ো। জিডিপি: মাথাপিছু আয় (১৯৭১-২০২১) জিডিপি: মাথাপিছু আয় মার্্ককিন ডলার $ 2554 ২৪০০.০০ ২2০০.০০ 2000.০০ 1909.0 1800.০০ 1600.০০ 1400.০০ 1200.০০ 1226.73 1000.০০ 758.20 800.০০ 600.০০ 400.০০ 227.75 293.16 343.11 200.০০ 314.43 400.98 133.55 306.27 0.০০ 1971 1980 1990 1991 1995 2000 2005 2010 2015 2019 2021 অনুশীলনী এসো ো পো োস্টার বা দেয়াল পত্রিকা বানাই খুশি আপা ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীকে কয়েকটি দলে ভাগ করে দিলেন। প্রতিটি দল একটি করে পো োস্টার বা দেয়াল পত্রিকা বানাবে। প্রতিটি পো োস্টার বা দেয়াল পত্রিকায় থাকবে বর্্ণনা ও ছবি সহ ২০১০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের অর্্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নের কয়েকটি দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ। এবার পো োস্টার ও দেয়াল পত্রিকাগুলো ো ক্লাসে কিংবা স্কুলের কো োনো ো স্থানে টানিয়ে দাও। wkÿvel© 2024 64 মামুন আজ ক্লাসে এসে ওর বন্ধুদের বলল, সে এবার ঈদের বন্ধে মা বাবার সাথে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বেড়াতে গিয়েছিল। জাদুঘরে তারা মাদার তেরেসাসহ আরও কয়েকজন বিখ্যাত মানুষের ছবি দেখেছে, যারা বিদেশি হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের পক্ষে খুব গুরুত্বপূর্্ণ কাজ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ সাংবাদিক, কেউ রাজনীতিবিদ, কেউ বা সমাজকর্মী ছিলেন। মিলি বলল, তাই নাকি! তো োমার কথা শুনে আমারও তাদের দেখতে ইচ্ছে করছে। এমন সময় খুশি আপা ক্লাসে প্রবেশ করে তাদের কাছে জানতে চাইলেন তারা কো োন বিষয় নিয়ে কথা বলছে। মিলি বলল, আপা মামুন এবারের ছুটিতে ঢাকার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বেড়াতে গিয়েছিল। সেখানে ও অনেক বিখ্যাত মানুষের ছবি দেখেছে, যারা বিদেশি হয়েও মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের সাহায্য করেছিলেন। ওর কথা শুনে আমাদেরও বাংলাদেশের সেইসব বন্ধুদের দেখতে ইচ্ছা করছে। খুশি আপা বললেন, তাই! তাহলে চলো ো আমরা এ রকম কয়েকজন বিখ্যাত মানুষের ছবি দেখি। সাইমন ড্্রিিং (ব্রিটিশ সাংবাদিক) শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী (ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী) wkÿvel© 2024 মাদার তেরেসা (নো োবেলজয়ী মানবতাবাদী) লিওনিদ ব্রেজনেভ(তৎকালীন সো োভিয়েত নেতা) 75 মুক্তিযুদ্ধের বিদেশি বন্ধুরা শরণার্থী শিবিরে মার্্ককিন সিনেটর এডওয়ার্ ্ড কেনেডি ব্রিটিশ গায়ক জর্্জ হ্্যাাঁরিসন উইলিয়াম এস অর্ ্ডডারল্যান্ড মুক্তিযুদ্ধে অংশনেয়া অস্ট্রেলীয় নাগরিক বিখ্যাত সেতারাবাদক পণ্ডিত রবিশংকর খুশি আপা যখন শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলেন ছবির ব্যক্তিদের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্্ক কী, তখন দেখা গেল ওরা আন্দাজ করে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারলেও বিস্তারিত তেমন কিছু জানে না। খুশি আপা বললেন, চলো ো তাহলে এসব বিখ্যাত মানুষের মধ্যে থেকে একজনের সম্পর্্ককে আমরা জেনে নিই। তার নাম সাইমন ড্্রিিং। উনি পেশায় ছিলেন সাংবাদিক । wkÿvel© 2024 76 ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান সাইমন ড্্রিিং: বাংলাদেশের বন্ধু ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্্রিিংকে বলা হয় বাংলাদেশের একজন ‘প্রকৃত বন্ধু’। ১৯৭১ সালে সাইমন ড্্রিিং ২৬ বছরের একজন তরুণ সাংবাদিক। ঢাকায় এসেছিলেন পাকিস্তানের গণতন্ত্রে উত্তরণের সংকট কীভাবে সমাধান হচ্ছে তার খবর সংগ্রহ করতে। আরও কয়েকজন বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি ছিলেন হো োটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। কিন্তু পঁচিশে মার্্চপাকিস্তানিরা সব বিদেশি সাংবাদিকদের ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্্দদেশ দিয়েছিল। পাকিস্তানি সামরিক কর্্মকর্্ততারা পাহারা দিয়ে তাদের বিমান বন্দরে পৌ ৌঁঁছে দিচ্ছিল। তরুণ সাইমন ড়্্রিিংক আঁচ করতে পেরেছিলেন যে ঢাকায় বড় ধরনের কো োনো ো ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, যা সরকার বিদেশিদের কাছে গো োপন করতে চায়। তখনই তিনি ঠিক করলেন যেভাবে হো োক খবরটা তাাঁকে সংগ্রহ করতে হবে। পাকিস্তানি সামরিক সদস্যদের চো োখকে ফাাঁকি দিয়ে সাইমন ড্্রিিং ৩২ ঘণ্টার বেশি সময় হো োটেলে লুকিয়ে ছিলেন। উদ্দেশ্য একটাই, পাকিস্তানের হিংসাত্মক ঘটনার খবর তিনি বিশ্ববাসীকে জানাবেন। ২৭ ঘণ্টা পরে যখন কারফিউ বা সান্ধধ্য আইন তুলে নেওয়া হয় তখন তিনি রাস্তায় টহলরত মিলিটারির চো োখ এড়িয়ে পথে নামলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পুরানো ো ঢাকার কিছু জায়গা থেকে তিনি গণহত্্যযা ও ধ্বংসযজ্ঞের ছবি তুললেন, খবর সংগ্রহ করলেন। তাাঁর আসল কাজ তো ো হলো ো, এবার অবরুদ্ধ দেশ থেকে যত দ্রুত সম্ভব বেরো োতে হবে, কারণ খবরটা তো ো বিশ্ববাসীকে জানাতে হবে। নানা কৌ ৌশলে, এমনকি তথ্য টুকে রাখা কাগজ, ছবির নেগেটিভ মো োজার মধ্যে লুকিয়ে রেখে.কো োনো ো মতে বিমানে উঠে অবরুদ্ধ দেশ ছেড়ে সাইমন ব্্যাাংকক পৌ ৌঁঁছান। ব্্যাাংকক থেকেই তিনি তাাঁর বিখ্যাত প্রতিবেদন ‘পাকিস্তানে ট্্যাাংকের নিচে বিদ্্ররোহ দমন’ শিরো োনাম পাঠিয়ে দেন তাাঁর পত্রিকা লন্ডনের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে। এটি ২৯ মার্্চ প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটির শুরুর বাক্্য ছিল এ রকম- সৃষ্টিকর্্ততা এবং ঐক্্যবদ্ধ পাকিস্তানের নামে ঢাকা আজ বিধ্বস্ত ও ভয়ার্্ত এক শহর। চব্বিশ ঘণ্টা ধরে ঠান্ডা মাথায় বর্্বরভাবে কামানের গো োলার আঘাতে ঢাকায় এক রাতে অন্তত ৭০০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, বিভিন্ন এলাকার ঘরবাড়ি গুুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পূর্্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার সংগ্রামকে শেষ করে দেওয়া হয়েছে। সে রাতের বিধ্বস্ত, অগ্নিদগ্ধ, স্তুপিকৃত লাশের এক শহর দেখে তাাঁর মনে হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম তখনকার মতো ো শেষ। কিন্তু এই খবর এবং তার সাথের ছবিগুলো ো বিশ্ববাসীর কাছে এই বাংলায় পাকিস্তানিদের চালানো ো ভয়ঙ্কর হত্্যযাকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞ স

Use Quizgecko on...
Browser
Browser