বিজ্ঞান অনুসন্ধানী ৭ মাধ্যমিক PDF
Document Details
Uploaded by Deleted User
2023
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল,নাসরীন সু লতানা মিতু,ড. হাসিনা খান,ড. মানস কান্তি বিশ্বাস,ড. মোহাম্মদ মিজানু র রহমান খান,শিহাব শাহরিয়ার নির্ঝর,ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব,মোঃ রোকনু জ্জামান শিকদার,রনি বসাক,ড. মোঃ ইকবাল হোসেন,
Tags
Related
Summary
This document is a science textbook for the seventh grade in Bangladesh. The content outlines the curriculum, including chapters on biodiversity, atoms, matter, cells, microorganisms, heat, and change, work, energy etc It is aimed at students following the National Curriculum 2022.
Full Transcript
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ড কর্্ততৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনু যায়ী প্রণীত এবং ২০২৩ শিক্ষাবর্্ষ থেকে সপ্তম শ্রেণির জন্্য নির্্ধধারিত পাঠ্্যপুস্তক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ...
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ড কর্্ততৃক জাতীয় শিক্ষাক্রম- ২০২২ অনু যায়ী প্রণীত এবং ২০২৩ শিক্ষাবর্্ষ থেকে সপ্তম শ্রেণির জন্্য নির্্ধধারিত পাঠ্্যপুস্তক বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ সপ্তম শ্রেণি (পরীক্ষামূ লক সংস্করণ) রচনা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নাসরীন সু লতানা মিতু ড. হাসিনা খান ড. মানস কান্তি বিশ্বাস ড. মো োহাম্মদ মিজানু র রহমান খান শিহাব শাহরিয়ার নির্্ঝর ড. মুশতাক ইবনে আয়ূ ব মো োঃঃ রো োকনু জ্জামান শিকদার রনি বসাক ড. মো োঃঃ ইকবাল হো োসেন সম্পাদনা ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বো োর্ ্ড, বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ড ৬৯-৭০. মতিঝিল বাণিজ্্যযিক এলাকা, ঢাকা-১০০০ কর্্ততৃক প্রকাশিত [জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ড, বাংলাদেশ কর্্ততৃক সর্্বস্বত্ব সংরক্ষিত] প্রথম প্রকাশ : ডিসেম্বর, ২০২২ পুনর্্মমুদ্রণ : , ২০২৩ শিল্প নির্্দদেশনা মঞ্জু র আহমদ নাসরীন সু লতানা মিতু চিত্রণ সব্্যসাচী চাকমা প্রচ্ছদ মেহেদী হক সব্্যসাচী চাকমা গ্রাফিক্স ডিজাইন নাসরীন সু লতানা মিতু মো োঃঃ মেহেদী হো োসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্্ততৃক বিনামূ ল্্যযে বিতরণের জন্্য মুদ্রণে : প্রসঙ্গ কথা পরিবর্্তনশীল এই বিশ্বে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে জীবন ও জীবিকা। প্রযু ক্তির উৎকর্্ষষের কারণে পরিবর্্তনের গতিও হয়েছে অনেক দ্রুত। দ্রুত পরিবর্্তনশীল এই বিশ্বের সঙ্গে আমাদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার কো োনো ো বিকল্প নেই। কারণ প্রযু ক্তির উন্নয়ন ইতিহাসের যেকো োনো ো সময়ের চেয়ে এগিয়ে চলেছে অভাবনীয় গতিতে। চতুর্্থ শিল্পবিপ্লব পর্্যযায়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ আমাদের কর্্মসংস্থান এবং জীবনযাপন প্রণালিতে যে পরিবর্্তন নিয়ে আসছে তার মধ্্য দিয়ে মানু ষে মানু ষে সম্পর্্ক আরও নিবিড় হবে। অদূ র ভবিষ্্যতে অনেক নতুন কাজের সু যো োগ তৈরি হবে যা এখনও আমরা জানি না। অনাগত সেই ভবিষ্্যতের সাথে আমরা যেন নিজেদের খাপ খাওয়াতে পারি তার জন্্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রয়ো োজন। পৃথিবী জুড়ে অর্্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটলেও জলবায়ু পরিবর্্তন, বায়ু দূষণ, অভিবাসন এবং জাতিগত সহিংসতার মতো ো সমস্্যযা আজ অনেক বেশি প্রকট। দেখা দিচ্ছে কো োভিড ১৯ এর মতো ো মহামারি যা সারা বিশ্বের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা এবং অর্্থনীতিকে থমকে দিয়েছে। আমাদের প্রাত্্যহিক জীবনযাত্রায় সংযো োজিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চ্্যযালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা। এসব চ্্যযালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তার টেকসই ও কার্্যকর সমাধান এবং আমাদের জনমিতিক সু ফলকে সম্পদে রূপান্তর করতে হবে। আর এজন্্য প্রয়ো োজন জ্ঞান, দক্ষতা, মূ ল্্যবো োধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন দূ রদর্্শশী, সংবেদনশীল, অভিযো োজন-সক্ষম, মানবিক, বৈশ্বিক এবং দেশপ্রেমিক নাগরিক। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ স্বল্্পপোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্্যযে উন্নত দেশে পদার্্পণের লক্ষষ্যমাত্রা অর্্জনের প্রচেষ্টা অব্্যযাহত রেখেছে। শিক্ষা হচ্ছে এই লক্ষষ্য অর্্জনের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার। এজন্্য শিক্ষার আধু নিকায়ন ছাড়া উপায় নেই। আর এই আধু নিকায়নের উদ্দেশ্্যযে একটি কার্্যকর যু গো োপযো োগী শিক্ষাক্রম প্রণয়নের প্রয়ো োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ডডের একটি নিয়মিত, কিন্তু খুবই গুরুত্বপূ র্্ণ কার্্যক্রম হলো ো শিক্ষাক্রম উন্নয়ন ও পরিমার্্জন। সর্্বশেষ শিক্ষাক্রম পরিমার্্জন করা হয় ২০১২ সালে। ইতো োমধ্্যযে অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে। প্রয়ো োজনীয়তা দেখা দিয়েছে শিক্ষাক্রম পরিমার্্জন ও উন্নয়নের। এই উদ্দেশ্্যযে শিক্ষার বর্্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং শিখন চাহিদা নিরূপণের জন্্য ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালব্্যযাপী এনসিটিবির আওতায় বিভিন্ন গবেষণা ও কারিগরি অনু শীলন পরিচালিত হয়। এসব গবেষণা ও কারিগরি অনু শীলনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো ো যো োগ্্য প্রজন্ম গড়ে তুলতে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণির অবিচ্ছিন্ন যো োগ্্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম উন্নয়ন করা হয়েছে। যো োগ্্যতাভিত্তিক এ শিক্ষাক্রমের আলো োকে সকল ধারার (সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি) সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্্থথীদের জন্্য এই পাঠ্্যপুস্তক প্রণয়ন করা হলো ো। বাস্তব অভিজ্ঞতার আলো োকে পাঠ্্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এমনভাবে রচনা করা হয়েছে যেন তা অনেক বেশি সহজবো োধ্্য এবং আনন্দময় হয়। এর মাধ্্যমে চারপাশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলা বিভিন্ন প্রপঞ্চ ও ঘটনার সাথে পাঠ্্যপুস্তকের একটি মেলবন্ধন তৈরি হবে। উল্লেখ্্য যে, ইতো োমধ্্যযে অন্তর্্বর্্ততীকালীন ট্রাই-আউটের মাধ্্যমে শিক্ষক, শিক্ষার্্থথীদের মতামত সংগ্রহ করে লেখক এবং বিষয় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে যৌ ৌক্তিক মূ ল্্যযায়ন করে পাঠ্্যপুস্তকটি পরিমার্্জন করা হয়েছে। আশা করা যায় এর মাধ্্যমে শিখন হবে অনেক গভীর ও জীবনব্্যযাপী। পাঠ্্যপুস্তকটি প্রণয়নে ধর্্ম, বর্্ণ, সু বিধাবঞ্চিত ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্্থথীর বিষয়টি বিশেষভাবে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির বানানরীতি অনু সরণ করা হয়েছে। পাঠ্্যপুস্তকটি রচনা, সম্পাদনা, চিত্রাঙ্কন ও প্রকাশনার কাজে যাঁরা মেধা ও শ্রম দিয়েছেন তাঁদের সবাইকে ধন্্যবাদ জ্ঞাপন করছি। পরীক্ষামূ লক এই সংস্করণে কো োনো ো ভুল বা অসংগতি কারো ো চো োখে পড়লে এবং এর মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কো োনো ো পরামর্্শ থাকলে তা জানানো োর জন্্য সকলের প্রতি বিনীত অনু রো োধ রইল। প্রফেসর মো োঃঃ ফরহাদু ল ইসলাম চেয়ারম্্যযান জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্্যপুস্তক বো োর্্ড, বাংলাদেশ সূচিপত্র পৃষ্ঠা অধ্্যযায় ১: জীববৈচিত্রর্য................................................................... ০১ অধ্্যযায় ২: অণু পরমাণু....................................... ১৩ অধ্্যযায় ৩: পদার্্থথের গঠন.............................................................. ২৩ অধ্্যযায় ৪: কো োষবিজ্ঞান....................................... ৩২ অধ্্যযায় ৫: অণুজীবজগৎ................................................................ ৪২ অধ্্যযায় ৬: তাপ ও তাপমাত্রা............................... ৫৫ অধ্্যযায় ৭: আমাদের চারপাশের পরিবর্্তন...................................... ৬৪ অধ্্যযায় ৮: কাজ, শক্তি, ক্ষমতা............................ ৭৭ পৃষ্ঠা অধ্্যযায় ৯: পরিবেশ ও ভূ মিরূপ.................................................................. ৮৫ অধ্্যযায় ১০: ভূ -প্রাকৃতিক কারণে সংঘটিত দু র্যোগ ও প্রতিকার.... ৯৬ অধ্্যযায় ১১: মিশ্রণ ও মিশ্রণের উপাদান পৃথকীকরণ................................... ১০৪ অধ্্যযায় ১২: ভূ -পৃষ্ঠ ও প্লেট টেকটো োনিকস তত্ত্ব........................... ১১৮ অধ্্যযায় ১৩: ভূ মিকম্প ও বাংলাদেশ............................................................ ১২৭ অধ্্যযায় ১৪: জীবে শক্তির প্রবাহ................................................ ১৩৪ অধ্্যযায় ১৫: মানবদেহের তন্ত্র..................................................................... ১৪৩ অধ্্যযায় ১৬: বিভিন্ন ধরনের শিলা......................................... ১৫৭ অধ্্যযায় ১৭: পৃথিবী ও মহাবিশ্ব.............................................................. ১৬৩ শিক্ষার্্থথীদের উদ্দেশ্্যযে কিছু কথা শিক্ষার্্থথীরা কেমন আছো ো সবাই? সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বিষয়ে তো োমাদের স্বাগতম! দেখতেই পাচ্ছ, এতদিন তো োমরা যেভাবে পড়াশো োনা করে এসেছ, তাতে একটা বড়ো ো পরিবর্্তন এসেছে! তো োমাদের সকল বিষয়ের বইগুলো োও তাই এখন একটু অন্্যরকম। ষষ্ঠ শ্রেণির মতো োই এই বছরেও বিজ্ঞান বিষয়ে তো োমরা নিশ্চয়ই দু ইটি বই হাতে পেয়েছ! এই ‘অনু সন্ধানী পাঠ’ বইটির সঙ্গে তো োমাদের আরেকটা ‘অনু শীলন বই’ও দেওয়া হয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির অভিজ্ঞতা থেকে তো োমরা ইতো োমধ্্যযেই জানো ো যে, এই বইটির সঙ্গে অনু শীলন বইটির বড়ো ো ধরনের পার্্থক্্য রয়েছে। পুরো ো বছর জুড়ে তো োমরা বেশ কিছু নতুন অভিজ্ঞতার মধ্্য দিয়ে যাবে, নতুন নতুন কিছু সমস্্যযার সমাধান করবে। এই নতুন অভিজ্ঞতাগুলো ো আর সমস্্যযা সমাধানের ধাপগুলো ো সব বিস্তারিতভাবে তো োমাদের অনু শীলন বইটিতে দেওয়া আছে। এই সমস্্যযাগুলো োর সমাধান করতে গিয়ে নানা ধাপে তো োমাদের বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় জানার প্রয়ো োজন পড়বে, সেজন্্য তো োমাদের সাহায্্য করবে এই ‘অনু সন্ধানী পাঠ’ বই। স্কুলে বা বাড়িতে, যখন যেখানেই থাকো ো, তো োমরা এই বইটির সাহায্্য নিয়ে দরকার হলে নিজে নিজেই সমস্্যযাগুলো ো সমাধান করে ফেলতে পারবে! সপ্তম শ্রেণিতে তো োমাদের বিজ্ঞানের যেসব বিষয় জানার প্রয়ো োজন হবে সেগুলো ো এই বইয়ে মো োট সতেরো োটি অধ্্যযায়ে সাজানো ো হয়েছে। পুরো ো বছর জুড়ে তো োমরা যে অভিজ্ঞতাগুলো োর ভেতর দিয়ে যাবে, তাতে এই বিষয়গুলো ো বিভিন্ন সময়ে তো োমাদের কাজে আসবে। তাহলে শুরু করা যাক, কী বলো ো? অধ্্যযায় ১ জীববৈচিত্রর্য wkÿvel© 2024 বিজ্ঞান অধ্্যযায় জীববৈচিত্রর্য ১ এই অধ্্যযায়়ে নিচের বিষয়গুলো ো আলো োচনা করা হয়েছে: 5 জীববৈচিত্রর্য কী 5 জীববৈচিত্র্যের উদ্ভব 5 জীববৈচিত্র্যের স্বরূপ 5 জীবের পারস্পরিক সম্পর্্ক 5 জীববৈচিত্রর্য পরিমাপের উপায় 5 বাংলাদেশের জীববৈচিত্রর্য 5 জীববৈচিত্র্যের ঝুঁকি ও প্রতিকার মহাশূ ন্্য থেকে যদি পৃথিবীকে দেখো ো দেখবে নীল একটা গ্রহ, অন্্য সব গ্রহ থেকে যার রং আলাদা। এই নীল গ্রহটাই আমাদের আবাসস্থল, পৃথিবী নামক এই ছো োট্ট গ্রহতেই আমাদের মতো ো লক্ষ লক্ষ জীবের আবাস। অনেক বছর ধরে মানু ষ মহাবিশ্বের নানা প্রান্তে অভিযান চালিয়েছে প্রাণের খো োঁঁজে, মহাকাশযান পাঠিয়েছে দূ র দূ রান্তের গ্রহে প্রাণের সন্ধানে, পানির সন্ধানে। কিন্তু এখন পর্্যন্ত এমন সবুজ, প্রাণপ্রাচুর্্যযে ভরপুর কো োনো ো দ্বিতীয় গ্রহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলে অক্সিজেনের উপস্থিতি এবং পানির প্রাচুর্্য এই গ্রহটিকে আমাদের মতো ো জীবদের বেঁচে থাকার জন্্য একটা আদর্্শ স্থান হিসেবে গড়ে তুলেছে। ক্ষুদ্র এককো োষী ব্্যযাকটেরিয়া থেকে জটিল বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানু ষ, সবুজ শৈবাল থেকে বিশালাকৃতির নীলতিমি—নানা আকারের, নানা বৈশিষ্ট্যের জীবের বাস এই পৃথিবীতে। ঘন জঙ্গল থেকে মেরুর বরফঘেরা তুন্দ্রা অঞ্চল, তপ্ত মরুভূ মি কিংবা সাগরের গভীর তলদেশে, যেখানেই যাও দেখবে কত বিচিত্র সব জীব এই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সেখানে বেঁচে থাকে। তো োমাদের মনে কখনো ো প্রশ্ন এসেছে, জীবজগতের এই অভাবনীয় বৈচিত্র্যের রহস্্য কী? কীভাবে এত বিচিত্র সব জীবের উদ্ভব হলো ো, কীভাবে এত বিচিত্র সব পরিবেশে এই জীবেরা টিকে থাকে, বংশবৃদ্ধি করে? wkÿvel© 2024 পৃথিবীর এই বিস্ময়কর জীববৈচিত্রর্য নিয়েই এই অধ্্যযায়ে আমরা আলো োচনা করব। 2 জীববৈচিত্রর্য ১.১ জীববৈচিত্রর্য কী? তো োমার বাড়ির পাশের খো োলা জায়গায়, বা স্কুলের মাঠে কত ধরনের জীব বাস করে কখনো ো খেয়াল করে দেখেছ? একটা ফাঁকা মাঠের দিকে তাকিয়ে হয়ত হুট করে ঘাস ছাড়া কিছু ই চো োখে পড়ে না। কিন্তু যদি খেয়াল করে দেখো ো, দেখবে কত ছো োট ছো োট পো োকামাকড় এই ঘাসের ফাঁকে ফাঁকে বাস করে। আর সাদা চো োখে শুধু একই ধরনের ঘাস মনে হলেও ভালো োমতো ো লক্ষ করলে দেখা যাবে এখানে ছো োট ছো োট অনেক প্রজাতির উদ্ভিদের বাস। শুধু নিজের বাড়ি বা স্কুলের আশপাশটা খুঁজতে গেলেও অবাক হয়ে দেখবে আমাদের চারপাশে কত পশু, পাখি, পো োকামাকড় আর উদ্ভিদ বাস করে; তাহলে গো োটা পৃথিবীতে কত কত জীব ছড়িয়ে আছে একবার ভেবে দেখো ো তো ো! আমাদের আশেপাশের যেসব জীব আমরা দেখি তার বাইরেও অজস্র জীব আমাদের চো োখের আড়ালে রয়ে যায়। সমুদ্রের তলদেশে বাস করে এমন অনেক জীব এখনো ো মানু ষের চেনাশো োনার পরিধির বাইরে। আবার খালি চো োখে দেখা যায় না বলে অণুজীবদের বিশাল রাজ্্যযের একটা বড় অংশই এখনো ো আমাদের কাছে অজানা। তাহলে ভেবে দেখো ো, এই সু বিশাল পৃথিবীতে জীবনের কী বিশাল বৈচিত্রর্য ছড়িয়ে আছে! উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীবসহ সকল জীবের মধ্্যযে এই বিপুল বৈচিত্রর্যকে বো োঝাতে জীববৈচিত্রর্য (ইংরেজিতে Biodiversity) শব্দটি ব্্যবহার করা হয়। পৃথিবীতে মো োট কত সংখ্্যক জীবের প্রজাতি রয়েছে অনু মান করতে পারবে? সত্্যযি বলতে এই সংখ্্যযাটা ঠিক কত, তা কেউই এখনো ো জানে না। অনেক বিজ্ঞানী অনু মান করেন, প্রায় ৮৭ লক্ষ প্রজাতির জীব এই পৃথিবীতে রয়েছে। এই আনু মানিক সংখ্্যযা নিয়েও অনেক মতভেদ রয়েছে, তবে বেশির ভাগ বিজ্ঞানীরা একমত হয়েছেন যে এই সংখ্্যযাটা ৫০ লক্ষ থেকে ১ কো োটির মধ্্যযে। এই বিশাল জীববৈচিত্র্যের wkÿvel© 2024 একটা ক্ষুদ্র অংশ সম্পর্্ককেই এখন পর্্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি। ২০২২ সাল পর্্যন্ত ২১ লক্ষর বেশি 3 বিজ্ঞান প্রজাতির জীব শনাক্ত করা হয়েছে, এর মধ্্যযে সংখ্্যযায় সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে পো োকামাকড়। আর এর বাইরেও যে বিপুল সংখ্্যক জীব আছে বলে অনু মান করা হয়, তাদের খো োঁঁজে বিজ্ঞানীরা অনু সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন, এবং প্রতিনিয়ত এই তালিকায় নতুন নতুন প্রজাতির নাম যু ক্ত হচ্ছে। ১.২ জীববৈচিত্র্যের উদ্ভবের জৈবিক কারণ যেকো োনো ো প্রজাতির নিজস্ব বৈশিষ্টট্যগুলো ো হাজার হাজার বছরে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিকশিত হতে থাকে। একটি জীব তার পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো োর জন্্য যেসব কৌ ৌশল ও পদ্ধতি অনু সরণ করে তাকে বলা হয় অভিযো োজন (Adaptation)। অপরদিকে নির্্দদিষ্ট কো োনো ো কারণ ছাড়াই জীবের এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে যাবার সময় কিছু পরিবর্্তন ঘটে। যে কারণে আমরা দেখতে হুবহু আমাদের মা বাবার মতো ো না হয়ে একটু হলেও আলাদা হই! যমজ না হলে ভাইবো োনদের চেহারাও হুবহু একই হয় না, যদিও তারা একই বাবা মায়ের সন্তান! মা বাবা থেকে সন্তান—এই এক প্রজন্মে চেহারার এই পার্্থক্্য খুব ছো োট পরিবর্্তন। কিন্তু লক্ষ লক্ষ বছর ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ছো োট পরিবর্্তনগুলো ো ঘটতে ঘটতে এক পর্্যযায়ে এমন বৈশিষ্ট্যের নতুন জীব দেখা দেয় যা তার আদি পূ র্্বপুরুষ থেকে অনেক আলাদা। এইভাবে দীর্্ঘ সময় ধরে জীবের মধ্্যযে পরিবর্্তন ঘটার যে প্রক্রিয়া, তাকে বলা হয় বিবর্্তন। বিবর্্তন এবং অভিযো োজন প্রক্রিয়ায় প্রাপ্ত বৈশিষ্টট্যই জীবজগতের সদস্্যদের একে অন্্যযের কাছ থেকে আলাদা করে তুলেছে। যেকো োনো ো প্রাণী তার জীবদ্দশায় নিজের প্রতিরূপ সৃষ্টির মাধ্্যমে তার প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখে। যা আমরা প্রজনন হিসেবে জানি। যে জীবগুলো ো সময়ের সঙ্গে বিবর্্ততিত ও অভিযো োজিত হয়ে হয়ে একে অপরের থেকে এতটাই আলাদা হয়ে গেছে যে, সেগুলো ো আর একে অপরের সঙ্গে প্রজননে অংশ নিতে পারে না, সেগুলো োর আলাদা প্রজাতি (Species) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেসব জীব একে অপরের সাথে প্রজনন করতে পারে, সেগুলো োকে সাধারণত একই প্রজাতির ভেতরে অন্তর্্ভভুক্ত করা হয়। wkÿvel© 2024 4 জীববৈচিত্রর্য ১.৩ জীববৈচিত্র্যের স্বরূপ দীর্্ঘ সময় ধরে ছো োট ছো োট পরিবর্্তন ঘটতে ঘটতে বিভিন্ন জীবের মধ্্যযে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টট্য কীভাবে গড়ে ওঠে, আর তা থেকে কীভাবে আলাদা আলাদা প্রজাতির উৎপত্তি হয় তা তো ো জানলে। এখন একটু ভেবে দেখো ো, সব জীব কি সব অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে? শীতের দেশের পেঙ্গুইন কি আমাদের দেশের গরমে টিকতে পারবে? আবার মরুর দেশের উট কি কখনও বরফে ঢাকা মেরু অঞ্চলের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে? নিশ্চয়ই না! তার মানে কী দাঁড়ালো ো? প্রতিটি প্রাণীর কিছু নিজস্ব বৈশিষ্টট্য থাকে যা তাকে তার নির্্দদিষ্ট পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সাহায্্য করে। আর যেসব প্রাণীর বৈশিষ্টট্য সেই নির্্দদিষ্ট পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো োর উপযো োগী নয় সেই প্রাণীরা সময়ের সাথে সেই অঞ্চল থেকে হারিয়ে যায়। এখন ভেবে দেখো ো কো োন ধরনের পরিবেশে কো োন ধরনের জীব টিকে থাকে। পানির নিচে টিকে থাকে যেসব প্রাণী তাদের অবশ্্যই পানিতে নিঃশ্বাস নেবার কায়দা জানা থাকতে হবে, কিংবা অনেক লম্বা সময় ধরে দম ধরে রাখার দক্ষতা থাকতে হবে। আবার ঘন জঙ্গলে টিকে থাকতে হলে কো োনো ো জীবকে সেই পরিবেশের উপযো োগী অন্্য ধরনের দক্ষতা জানা থাকতে হবে। এরকম প্রতিটি এলাকার বৈশিষ্টট্য অনু যায়ী সেখানকার উদ্ভিদ বা প্রাণীরা অভিযো োজিত হয়। তো োমার এলাকার বিভিন্ন জীবের কথা চিন্তা করে দেখো ো তো ো, পরিবেশের কো োন বৈশিষ্ট্যের কারণে এই জীবেরা এই এলাকায় টিকে থাকতে পারছে? wkÿvel© 2024 5 বিজ্ঞান কো োনো ো নির্্দদিষ্ট অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খাইয়ে যেসকল জীব টিকে থাকে ও বংশবৃদ্ধি করে সেই জীবগো োষ্ঠী, এবং তার পরিবেশের অজীব উপাদানসমূ হ মিলে যে সিস্টেম তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ইকো োসিস্টেম (Ecosystem) বা বাস্তুতন্ত্র। এই বাস্তুতন্ত্রকে “বায়োম”ও (Biome) বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র বা বায়ো োম গড়ে ওঠে। বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্যের এসকল বায়ো োমকে মো োটাদাগে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়; যেমন—জলজ, তৃণভূ মি, বন, মরুভূ মি এবং তুন্দ্রা। এই বায়ো োমগুলো োর কয়েকটিকে আবার আরও কয়েকটি নির্্দদিষ্ট ভাগে ভাগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ—সাধারণভাবে সকল বন বা জঙ্গলকে এক ধরনের বায়ো োম বলা হলেও এর মধ্্যযে ঘনবর্্ষণ বন, নাতিশীতো োষ্ণ বন, এবং উত্তর গো োলার্্ধধের শীতপ্রধান অঞ্চলের বন বা ‘তাইগা’কে আলাদা আলাদা বায়ো োমের ধরন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কারণ একই ধরনের বায়ো োম হলেও বিভিন্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের মধ্্যযে অনেক পার্্থক্্য দেখা যায়। যেমন—বাংলাদেশের সু ন্দরবনে যে ধরনের জীববৈচিত্রর্য দেখতে পাওয়া যায়, উত্তর আমেরিকার বনাঞ্চলের জীববৈচিত্রর্য আবার তেমন নয়। আবার দু টো োকেই সাধারণভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্র বলা হলেও তো োমার বাড়ির পুকুরের জলজ বাস্তুতন্ত্রের সাথে গভীর সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের অনেক পার্্থক্্য দেখা যাবে। কো োনো ো কো োনো ো প্রজাতির জীব পৃথিবীর নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করে, আবার অনেক জীব আছে যেগুলো ো কো োনো ো নির্্দদিষ্ট অঞ্চল ছাড়া আর কো োথাও দেখা যায় না। যে সকল জীব শুধু মাত্র একটা নির্্দদিষ্ট অঞ্চলেই দেখা যায় তাদেরকে ঐ অঞ্চলের স্থানীয় প্রজাতি হিসেবে গণ্্য করা হয়। আবার সব ক্রান্তীয় ঘনবর্্ষণ বন নাতিশীতো োষ্ণ বন মরুভূ মি তুন্দ্রা তাইগা তৃণভূ মি সাভান্না/ট্রপিকাল তৃণভূ মি মিঠা পানি সামুদ্রিক বরফাবৃ ত wkÿvel© 2024 ছবি: পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র বা বায়ো োম 6 জীববৈচিত্রর্য ইন্্দদো-বার্্মমা হটস্পট জীববৈচিত্র্যের হটস্পটসমূ হ হটস্পটগুলো োর পার্শশ্ববর্্ততী অঞ্চল বা বাইরের সীমা ছবি: পৃথিবী জুড়ে জীববৈচিত্র্যের হটস্পটসমূ হ অঞ্চলের পরিবেশের জীববৈচিত্রর্য একইরকম সমৃদ্ধ হয় না। যেসকল অঞ্চলে স্থানীয় প্রজাতির সংখ্্যযা অনেক বেশি, লক্ষ করলে দেখবে সেসব অঞ্চলের পরিবেশের এমন কিছু বৈশিষ্টট্য রয়েছে যা অনেক বেশি প্রজাতিকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। সবচেয়়ে বেশি জীববৈচিত্রর্য ধারণ করা বাস্তুতন্ত্রগুলো োতে সেখানকার প্রাণী, উদ্ভিদ, অণুজীবের সংখ্্যযা বৃদ্ধির জন্্য আদর্্শ পরিবেশগত অবস্থা থাকে। তাই সংগত কারণেই এসব জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চলকে বলা হয় জীববৈচিত্র্যের ‘হটস্পট’। পৃথিবীতে এখন পর্্যন্ত ৩৬টি জীববৈচিত্র্যের হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে; এর মধ্্যযে রয়েছে গালাপো োগাস দ্বীপপুঞ্জ, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ আফ্রিকা, মেক্সিকো ো, চিলিসহ আরো ো অনেকগুলো ো অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ। একটা ছো োট তথ্্য দিলেই এই হটস্পটগুলো োর গুরুত্ব বো োঝা যাবে। এই সবগুলো ো এলাকার যো োগফল পৃথিবীর মো োট এলাকার মাত্র ২.৫ শতাংশের কাছাকাছি, অথচ পৃথিবীর মো োট উদ্ভিদ ও মেরুদণ্ডী প্রাণীর প্রায় অর্্ধধেক প্রজাতিই এই ছো োট্ট এলাকার বাসিন্দা। এদের বড় অংশই আবার এসব এলাকার স্থানীয় প্রজাতি, অর্্থথাৎ পৃথিবীর আর কো োথাও এদের দেখা যায় না! এই কারণে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা এই জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এলাকাগুলো ো সংরক্ষণ করা গো োটা পৃথিবীর ভারসাম্্য রক্ষার জন্্যই অত্্যন্ত জরুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূ র্্ণ তথ্্যটাই এখনো ো বলা হয়নি। তা হলো ো, বাংলাদেশের একটা অংশও এই জীববৈচিত্রর্য হটস্পটগুলো োর মধ্্যযে চিহ্নিত হয়েছে (উপরের মানচিত্রে ইন্্দদো-বার্্মমা হটস্পটের অবস্থান খেয়াল করে দেখো ো)! পৃথিবীর জীববৈচিত্রর্য টিকিয়ে রাখতে আমাদের দেশের প্রকৃতিকে রক্ষা করা কতটা প্রয়ো োজন wkÿvel© 2024 বুঝতে পারছ? 7 বিজ্ঞান ১.৪ জীবের পারস্্পরিক সম্্পর্্ক কো োনো ো এলাকার বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে সেই এলাকার সকল জীব ও অজীব বস্তুর (যেমন—মাটি, পানি, বায়ু ইত্্যযাদি) পারস্পরিক নির্্ভরশীলতার উপর ভিত্তি করে। পরিবেশের ভারসাম্্য তখনই বজায় থাকে যখন এই সকল উপাদানগুলো ো স্বাভাবিক মাত্রায় পরিবেশে টিকে থাকে। পরিবেশের কো োনো ো উপাদান, যেমন—কো োনো ো নির্্দদিষ্ট প্রজাতির জীব হঠাৎ বিলু প্ত হলে তা যেমন এই ভারসাম্্যকে হুমকির মুখে ফেলে, একইভাবে কো োনো ো প্রজাতির সদস্্য সংখ্্যযা হঠাৎ বেড়ে যাওয়াও পরিবেশের ভারসাম্্য নষ্ট করে। তো োমরা আগের শ্রেণিতে খাদ্্যচক্রের কথা জেনেছ। পরিবেশের বিভিন্ন জীব কীভাবে একে অপরের উপর নির্্ভর করে তাও জেনেছ। সত্্যযি বলতে শুধু খাদ্্য নয়, মানু ষসহ সকল উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীবের সকল প্রয়ো োজন কিন্তু এই পরিবেশ থেকেই মেটে। একটু চিন্তা করলেই দেখবে, যেকো োনো ো প্রাণীর বেড়ে ওঠা, খাদ্্যসংস্থান, বংশবৃদ্ধি সবকিছু র জন্্যযেই সে তার পরিবেশের উপর নির্্ভরশীল। আবার সকল প্রাণী একসময় মারা যায়, তখন সে অন্্য কারো ো খাদ্্যযে পরিণত হয়, কিংবা মাটিতে মিশে গিয়ে উদ্ভিদের পুষ্টি জো োগায়। এভাবে সজীব ও অজীব সকল উপাদানের একে অন্্যযের উপর নির্্ভরশীলতার মধ্্য দিয়েই কো োনো ো ইকো োসিস্টেমের ভারসাম্্য বজায় থাকে। ১.৫ জীববৈচিত্রর্য পরিমাপের উপায় জীববৈচিত্রর্য পরিমাপের অনেকগুলো ো উপায় আছে, তবে এসব উপায়ের মাধ্্যমে মূ লত দু টো ো বিষয় জানার চেষ্টা করা হয়। প্রথমত, কো োনো ো নির্্দদিষ্ট এলাকায় কতগুলো ো ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির উপস্থিতি রয়েছে; দ্বিতীয়ত, ওই নির্্দদিষ্ট এলাকায় এক একটি প্রজাতির সদস্্য সংখ্্যযা কত। আগেই জেনেছ, পৃথিবীর মো োট জীবের প্রজাতির যে আনু মানিক সংখ্্যযা, তার একটা ক্ষুদ্র অংশই এখন পর্্যন্ত বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করতে পেরেছেন। বড় বড় জীবের প্রজাতির অস্তিত্ব খুঁজে বের করা তুলনামূ লক সহজ, কিন্তু ক্ষুদ্র পো োকামাকড় বা অণুজীবের ক্ষেত্রে কাজটা মো োটেও সহজ নয়। বিশেষত, দু র্্গম বা গহিন অঞ্চলে, যেমন—গভীর সাগরতলে জীবের প্রজাতির অনু সন্ধান করা অত্্যন্ত দু রূহ কাজ। তবে এখন পর্্যন্ত বিজ্ঞানীদের পর্্যবেক্ষণ অনু যায়ী এটুকু বলা যায় যে, বিষু বরেখার কাছাকাছি তুলনামূ লক উষ্ণ ও জলবিধৌ ৌত অঞ্চলে সাধারণত জীববৈচিত্রর্য বেশি থাকে। আবার মরুভূ মির মতো ো শুষ্ক ও রুক্ষ প্রকৃতির ক্ষেত্রে জীববৈচিত্রর্য তুলনামূ লক কম দেখা যায়। যেমন—দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন বন পৃথিবীর সবচেয়ে জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ অঞ্চলের মধ্্যযে একটি। এই বনের উদ্ভিদরাজি যে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন উৎপাদন করে তা গো োটা পৃথিবীর বায়ু মণ্ডলের ভারসাম্্য রক্ষায় গুরুত্বপূ র্্ণ ভূ মিকা রাখে, এই কারণে আমাজন বনকে বলা হয় পৃথিবীর ফুসফুস। আবার পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগরের উষ্ণ জলে নানা প্রজাতির মাছ, প্রবাল ইত্্যযাদি মিলে অসাধারণ বৈচিত্রর্যময় সামুদ্রিক পরিবেশ দেখতে পাওয়া যায়। অনেক প্রবাল মিলে প্রবাল প্রাচীর তৈরি করে, যেগুলো ো আরও শত শত প্রজাতির জীবের বাসস্থান। এসব প্রবাল প্রাচীরে ক্ষুদ্র সামুদ্রিক শৈবাল থেকে শুরু করে অজস্র বড় বড় সামুদ্রিক জীবও বাস করে। আমাদের দেশের একমাত্র wkÿvel© 2024 প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্্টটিনস দ্বীপও একইভাবে বহু সামুদ্রিক জীবের আশ্রয়। একটু আগেই তো োমরা জেনেছ জীববৈচিত্র্যের উদ্ভব কীভাবে ঘটে, এর জৈবিক কারণ কী। তো োমরা 8 জীববৈচিত্রর্য জেনেছ যে, জীবের এক প্রজন্ম থেকে অন্্য প্রজন্মে যাবার সময় ছো োট ছো োট পরিবর্্তন ঘটে, বহু বছর ধরে এই পার্্থক্্য বাড়তে বাড়তে সম্পূর্্ণ নতুন বৈশিষ্টট্যধারী জীবের উদ্ভব ঘটায়। এখন তো োমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই পার্্থক্্য শরীরের কো োথায় ঘটে? মানু ষের বৈশিষ্টট্য কীভাবে এক প্রজন্ম থেকে অন্্য প্রজন্মে প্রবাহিত হয়? এর উত্তরটা বুঝতে হলে তো োমাদের জীবকো োষের গঠনটা কেমন তা ভালো োভাবে বুঝতে হবে, পরবর্্ততী সময়ে তো োমরা বিস্তারিতভাবে এই বিষয়ে জানতে পারবে। তবে এখন এটুকু জেনে রাখো ো যে, কো োষের যেই অংশ জীবের সকল বৈশিষ্টট্য বংশপরম্পরায় বয়ে নিয়ে যায় তাকে বলা হয় জিন। জীবকো োষের নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে এই জিন। তুমি দু পেয়ে মানু ষ নাকি চারপেয়ে বিড়াল, তো োমার চুল কো োঁঁকড়া নাকি সো োজা—এই সকল তথ্্যই জমা থাকে তো োমার কো োষের মধ্্যযে লু কিয়ে থাকা কো োনো ো না কো োনো ো জিনে। জিনের সংখ্্যযা সকল জীবের একইরকম হয় না, কিছু প্রজাতির প্রায় ৪০০,০০০ (চার লক্ষ) জিন আছে। মানু ষের জিনের সংখ্্যযা প্রায় ২৫,০০০ (পঁচিশ হাজার)। এই জিনগুলো োর মধ্্যযে কিছু কিছু আছে যেগুলো ো একটি প্রজাতির সমস্ত সদস্্যযের জন্্য একইরকম। এসব জিনই একটি গো োলাপকে গো োলাপ এবং একটি কুকুরকে কুকুর হিসেবে র্্ননিধারণ করে। কিন্তু একটি প্রজাতির জিনগুলো োর মধ্্যযে কিছু কিছু জিন থাকে ভিন্ন। এই জেনেটিক পরিবর্্তনের কারণেই কিছু গো োলাপ হয় গো োলাপি রঙের, আর কিছু হয় সাদা। আবার মানু ষের ক্ষেত্রে বলা যায়, জিনের এরকম পার্্থক্্যযের কারণেই কিছু লো োকের চো োখ বাদামি এবং কিছু লো োকের চো োখ নীল। এখন জীববৈচিত্রর্য পরিমাপ করতে গেলে এই জিনগত বৈচিত্রর্য বিজ্ঞানীদের সাহায্্য করে। জিনগত বৈচিত্রর্য পর্্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হতে পারেন, একদল জীবের কো োনগুলো ো একই প্রজাতির আর কো োনগুলো ো ভিন্ন প্রজাতির। ফলে কো োনো ো নির্্দদিষ্ট অঞ্চলে মো োট প্রজাতির সংখ্্যযা নিরূপণে এই হিসাব কাজে লাগে। wkÿvel© 2024 9 বিজ্ঞান ১.৬ বাংলাদেশের জীববৈচিত্রর্য সিন্ধু -গঙ্গা সমতল ভূ মির অংশ হিসেবে জীববৈচিত্র্যের এক অপূ র্্ব লীলাভূ মি বাংলাদেশ। এর সিন্ধু -গঙ্গা সমতল ভূমি সিন্ধু -গঙ্গা সমতল ভূ মি হলো ো একটি বিরাট উর্্বর আগে তো োমরা জেনেছ যে, বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের সমভূ মি অঞ্চল যা পাকিস্তানের একটি অংশ, হটস্পটগুলো োর মধ্্যযে একটি—ইন্্দদো-বার্্মমা হটস্পটে উত্তর ও পূ র্্ব ভারতের অধিকাংশ এবং প্রায় বাংলাদেশের একটি অংশও রয়েছে। নাতিশীতো োষ্ণ সম্পূর্্ণ বাংলাদেশ জুড়়ে অবস্থিত। অঞ্চলটির আবহাওয়া ও জলবায়ু , উর্্বর মাটি, বিষু বরেখার মধ্্য দিয়়ে প্রবাহিত সিন্ধু নদ ও গঙ্গা নদীর নামে কাছাকাছি অবস্থানের কারণে পর্্যযাপ্ত সূ র্্যযালো োক, এই অঞ্চলটির নামকরণ করা হয়়েছে। অধিক বৃষ্টিপাত আর সবুজ প্রকৃতি এদেশে নানা ধরনের প্রাণী ও জীবজগতের অভয়ারণ্্যযের মূ ল কারণ। বাংলাদেশের বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রকে বৈশিষ্টট্য অনু যায়ী পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়—উপকূলীয় এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র, মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্র, স্থলজ বন বাস্তুতন্ত্র, পাহাড়়ি বাস্তুতন্ত্র এবং মানবসৃষ্ট বাস্তুতন্ত্র। আলাদা করে বলতে গেলে, সু ন্দরবন জীববৈচিত্র্যের জন্্য অত্্যন্ত গুরুত্বপূ র্্ণ, এটা আমরা সকলেই জানি। এছাড়াও প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের মধ্্যযে হাওড় জলাভূ মি, পার্্বত্্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা এদের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের জন্্য বিখ্্যযাত। প্রজাতির সংখ্্যযার বিচারে বলতে গেলে এখন পর্্যন্ত পাওয়া তথ্্যমতে, বাংলাদেশে ছয় হাজারের বেশি উদ্ভিদের প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। অপরদিকে মেরুদণ্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে এখন পর্্যন্ত শনাক্ত করা গেছে প্রায় ১৬০০ প্রজাতি। অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সঠিক সংখ্্যযা জানা না গেলেও এই দেশের প্রকৃতি এ ধরনের জীবের বেঁচে থাকার পক্ষে অত্্যন্ত অনু কূল বিধায় এই সংখ্্যযাটাও যথেষ্ট বড় বলে অনু মান করা হয়। wkÿvel© 2024 10 জীববৈচিত্রর্য ১.৭ জীববৈচিত্র্যের ঝু কঁ ি ও প্রতিকার পৃথিবীর বেশিরভাগ জীববৈচিত্রর্য মানু ষের বিভিন্ন কর্্মকাণ্ডের কারণে ঝুঁকির মধ্্যযে রয়়েছে, যা বাস্তুতন্ত্রর ভারসাম্্যযের জন্্য বড় হুমকি। প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্্যবহারের ফলে বাড়ছে দূ ষণ, ঘটছে জলবায়ু পরিবর্্তন, যার প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের উপর। এছাড়াও পৃথিবীব্্যযাপী অবৈধভাবে বন্্যপ্রাণী পাচার ও হত্্যযার ফলে বিরল অনেক প্রাণী প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হলেও এখানেও নানান প্রজাতি ঝুঁকির মধ্্যযে রয়েছে। ইন্টারন্্যযাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এর তথ্্য মতে, বাংলাদেশের এক-চতুর্্থথাাংশ জীববৈচিত্রর্য বিলু প্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। মূ লত নগরায়ন, খাদ্্য ও বাসস্থানের সংস্থান, ওষু ধ ও পরিধেয় বস্ত্রের উপাদান জো োগাড় করার কারণে ধ্বংস করা হচ্ছে জীবের নিরাপদ আবাসস্থল। মানব জাতি সকল প্রাকৃতিক সম্পদ, যেমন, জলাশয়, সমুদ্র, বনাঞ্চল উজাড় করছে নিজের ক্ষুদ্র স্বার্্থথে। এছাড়াও নানা কুসংস্কারের কারণে প্রতি বছর অজস্র বন্্যপ্রাণী হত্্যযা করা হয়। প্রকৃতির জন্্য উপকারী অনেক প্রাণীকে অবলীলায় হত্্যযার কারণে প্রাকৃতিক ভারসাম্্য নষ্ট হয়, তার প্রভাব পড়ে অন্্যযান্্য জীবকুলের ওপর। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সাপের কথা। সাপ দেখলেই আমরা অনেকে সহজাতভাবে আতঙ্কিত হই, মেরে ফেলতে উদ্্যত হই। অথচ সাপ আমাদের বাস্তুতন্ত্রে গুরুত্বপূ র্্ণ ভূ মিকা পালন করে। সাপের প্রধান খাদ্্য ইঁদুর জাতীয় প্রাণী, ফলে সাপের সংখ্্যযা কমে গেলে ইঁদুরের সংখ্্যযা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যায়, আর এই বিপুল সংখ্্যক ইঁদুরের বাড়তি খাদ্্যচাহিদার প্রভাব পড়ে ফসল ও অন্্যযান্্য উদ্ভিদের ওপর। মানু ষের এরকম দায়িত্বহীন আচরণের জন্্য বাংলাদেশের অনেক জীব বিলু প্ত হয়ে গেছে, অনেকে বিলু প্তির পথে। সু ন্দরবন, পার্্বত্্য চট্টগ্রাম এবং মধু পুর ও ভাওয়ালের গড়সহ বিভিন্ন বনভূ মিতে বিদ্্যমান প্রাণী ও জীবজন্তু, যেমন: রয়েল wkÿvel© 2024 বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, তক্ষক, অজগর, 11 বিজ্ঞান বুনো ো হাঁস, শকুন, বুনো ো মহিষ, মিঠা পানির কুমির, ঘড়িয়াল আজ প্রায় বিলু প্ত হতে হতে চরম হুমকির মধ্্যযে জীবনধারণ করছে। অনেক জীব এদেশ থেকে হারিয়ে গেছে শুধু তাই নয়, অনেক স্থানীয় প্রজাতি বিলু প্ত হয়ে গেছে যাদের কো োনো ো চিহ্নই আর পৃথিবীতে নেই। জীববৈচিত্রর্য সংরক্ষণ এবং একইসঙ্গে বিপন্ন প্রজাতি এবং সেগুলো োর আবাসস্থল রক্ষা করার জন্্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সকল দেশেই জীববৈচিত্রর্য সংরক্ষণে এখন যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। পরিবেশ দূ ষণ, বন্্যপ্রাণী হত্্যযা করে সেগুলো োর চামড়া বা হাড় দিয়ে পণ্্য তৈরি, প্রাণী পাচার ইত্্যযাদি সমস্্যযার কারণে বন্্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়ো োজনীয়তা ব্্যযাপকভাবে অনু ভূত হয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্্জজাতিক, আঞ্চলিক সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং দেশের বাইরের খ্্যযাতিমান সংস্থা, জাতিসংঘসহ নানা প্রতিষ্ঠান এই জীববৈচিত্রর্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূ র্্ণ ভূ মিকা পালন করছে। জীববৈচিত্র্যের গুরুত্ব অনু ধাবন করে জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণ ও বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রাকৃতিক বনাঞ্চলকে সেখানকার অধিবাসী উদ্ভিদ ও বন্্যপ্রাণীর নিরাপদ অভয়ারণ্্য হিসেবে গড়ে তো োলা হয়েছে, যেখানে জীববৈচিত্রর্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়ো োজনে মানু ষের গতিবিধি সীমিত রাখা হয়। বাংলাদেশেও জীববৈচিত্রর্য সংরক্ষণের জন্্য সরকার দেশের বনাঞ্চলের কিছু অংশ সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘো োষণা করেছে। এছাড়া জীববৈচিত্রর্য সংরক্ষণের লক্ষ্যে সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ আহরণ বন্ধ রাখা ছাড়াও মানু ষ সৃষ্ট বনায়নের পুরাতন গাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। বন্্যপ্রাণী নিধন ও পাচার রো োধে নতুন আইন শৃ ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এরকম সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্্যমে পৃথিবীর অনেক দেশেই জীববৈচিত্রর্য রক্ষায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে বিজ্ঞানী এবং পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো ো এসব পদক্ষেপকে আরো ো জো োরালো ো করতে বলেন। শুধু সরকারি উদ্যোগ এক্ষেত্রে যথেষ্ট নয়, বরং সেই সঙ্গে প্রয়ো োজন মানু ষের সচেতনতা। সময়ের সঙ্গে যেসব জীব ইতো োমধ্্যযে বিলু প্ত হয়ে গেছে সেগুলো ো হয়তো ো ফিরিয়ে আনা যাবে না, কিন্তু সবাই যত্নশীল হলে বর্্তমান পৃথিবীর জীববৈচিত্রর্য রক্ষা হয়তো ো সম্ভব হবে। সেদিকে সবারই মনো োযো োগ দেওয়া দরকার। তাহলেই হয়তো ো পৃথিবী নামক নীল গ্রহের বিস্ময়কর প্রাণপ্রাচুর্্যকে আমরা কিছু টা হলেও টিকিয়ে রাখতে পারব। অনুশীলনী ১। বিষু বরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে জীববৈচিত্রর্য বেশি কেন? ? wkÿvel© 2024 12 অধ্্যযায় ২ অণু পরমাণু wkÿvel© 2024 অধ্্যযায় অণু পরমাণু ২ এই অধ্্যযায়়ে নিচের বিষয়গুলো ো আলো োচনা করা হয়েছে: 5 পরমাণু ও অণু 5 মৌ ৌলিক পদার্্থ 5 ইলেকট্রন, প্্ররোটন এবং নিউট্রন 5 পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্্যযাস 5 নিউক্লিয়়াস 5 পরিবাহী, অপরিবাহী ও অর্্ধপরিবাহী পদার্্থ 5 কঠিন তরল ও গ্্যযাস ২.১ পরমাণু ২.১.১ মৌ ৌলিক পদার্্থ আমাদের চারপাশে কত রকম পদার্্থ—মেঘ-সমুদ্র, মাটি-পাথর, ঘরবাড়়ি, মানু ষজন, গাছপালা, খাল-নদী, পশুপাখি, যন্ত্রপাতি; আমরা আসলে কখনো োই সবকিছু বলে শেষ করতে পারব না। তো োমরা নিশ্চয়ই মধ্্যযে মধ্্যযে অবাক হয়়ে ভেবেছ, এই লক্ষ-কো োটি ধরনের পদার্্থ নিশ্চয়ই তৈরি হয়়েছে লক্ষ-কো োটি উপাদান দিয়়ে। কয়েকটি পরিচিত মৌ ৌলিক পদার্্থ কিন্তু তো োমরা শুনে অবাক হয়়ে যাবে, যখন জানবে এই লক্ষ হাইড্্ররোজেন Hydrogen লক্ষ কো োটি কো োটি পদার্্থ তৈরি হয়়েছে মাত্র ৯৮টি মৌ ৌলিক পদার্্থ দিয়়ে। যে পদার্্থ ভাঙলে সেই পদার্্থ ছাড়া অন্্য কো োনো ো অক্সিজেন Oxygen পদার্্থ পাওয়া যায় না তাকে মৌ ৌলিক পদার্্থ বলে। সব লো োহা Iron মিলিয়়ে এখন পর্্যন্ত ১১৮টি মৌ ৌলিক পদার্্থ পাওয়়া গেছে সো োনা Gold কিংবা ল্্যযাবরেটরিতে তৈরি হয়়েছে। কিন্তু ৯৮টির বাইরে যে ২০টি মৌ ৌলিক পদার্্থ আছে সেগুলো ো কৃত্রিমভাবে তৈরি রুপা Silver হয়েছে এবং প্রকৃতিতে সেগুলো োর পরিমাণ এত কম যে, কার্্বন Carbon ু সেগুলো ো বিবেচনা করা না হলেও খব ক্ষতি হবে না। ক্্ললোরিন Chlorine wkÿvel© 2024 পাশের টেবিলে কিছু পরিচিত মৌ ৌলিক পদার্্থথের নাম দেওয়়া অ্্যযালু মিনিয়াম Aluminium হয়়েছে। আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার সময় অক্সিজেন গ্রহণ 14 অণু পরমাণু করি। লো োহা খুবই পরিচিত একটি ধাতু। অ্্যযালু মিনিয়ামের বাসন-পত্র তো োমরা সবাই দেখেছ। সো োনা রুপা দিয়ে গয়না তৈরি করা হয়। হাইড্্ররোজেন আর অক্সিজেন দিয়়ে পানি তৈরি হয়়েছে, কাজেই হাইড্্ররোজেন আর অক্সিজেন মৌ ৌলিক পদার্্থ হলেও পানি মৌ ৌলিক পদার্্থ নয়, এটি যৌ ৌগিক পদার্্থ—যেসকল পদার্্থকে ভাঙলে দু ই বা দু ইয়ের অধিক মৌ ৌলিক পদার্্থ পাওয়া যায় সেগুলো োকে যৌ ৌগিক পদার্্থ বলে। তো োমরা পরের অধ্্যযায়ে এ সম্পর্্ককে বিস্তারিত জানতে পারবে। ২.১.২ ইলেকট্রন, প্্ররোটন এবং নিউট্রন তো োমরা যারা যারা ভাবছ, এই ৯৮টি মৌ ৌলিক পদার্্থথের তালিকাটা পেলেই এই পৃথিবীর সবকিছু কী দিয়়ে তৈরি হয়়েছে তুমি তার পূ র্্ণণাঙ্গ তালিকা পেয়়ে যাবে। তাদের জন্্য আরও সু সংবাদ আছে। এই মৌ ৌলিক পদার্্থগুলো ো তৈরি হয়়েছে সেগুলো োর ‘পরমাণু’ দিয়়ে এবং সেই পরমাণুগুলো ো তৈরি হয়়েছে মাত্র তিনটি কণা দিয়়ে, সেগুলো োর নাম হচ্ছে ইলেকট্রন, প্্ররোটন এবং নিউট্রন। কাজেই এটা মো োটেও অতিরঞ্জন নয় যে তো োমাদের চারপাশের পুরো ো পরিচিত জগৎ তৈরি হয়়েছে মাত্র তিনটি মৌ ৌলিক কণা দিয়়ে। সেজন্্য এ পুরো ো বিশ্বজগৎ কীভাবে তৈরি হয়়েছে সেটি বুঝতে চাইলে সবার আগে জানতে হবে ইলেকট্রন, প্্ররোটন আর নিউট্রন দিয়ে কীভাবে এই ভিন্ন ভিন্ন মৌ ৌলিক পদার্্থথের পরমাণুগুলো ো তৈরি হয়। ২.১.৩ পরমাণু্র গঠন ইলেকট্রন, প্্ররোটন আর নিউট্রন দিয়ে তৈরি মৌ ৌলিক পদার্্থথের সবচেয়ে ছো োট একক হচ্ছে পরমাণু। পরমাণুগুলো ো এত ছো োট যে, তো োমরা কখনই সেগুলো ো দেখতে পাও না, কিন্তু যদি দেখার উপায় থাকতো ো তাহলে দেখতে পরমাণুগুলো োর মাঝখানে আছে প্্ররোটন আর নিউট্রন দিয়়ে তৈরি খুবই ছো োট একটি নিউক্লিয়়াস এবং সেটিকে ঘিরে ঘুরছে ইলেকট্রন! এই যে এক লাইনে তো োমাদেরকে পরমাণু গঠনের কথা বলে দেওয়়া হলো ো তো োমরা চিন্তাও করতে পারবেনা কত হাজার বছর ধরে কতশত বিজ্ঞানী কত গবেষণা করে এটি শেষ পর্্যন্ত বের করতে পেরেছিলেন। যখনই দেখা যায় কিছু একটা ঘুরছে তখনই বুঝে নিতে হবে কো োনো ো ইন্টারন্্যযাশনাল অ্্যযাটমিক এনার্্জজি একটা বল সেটিকে নিজের দিকে টানছে। সূ র্্য পৃথিবীকে টানছে এজেন্সির লো োগো োতে একটি পরমাণুর বলে পৃথিবী সূ র্্যযের চারদিকে ঘুরছে, পৃথিবী চাঁদকে টানছে বলে চাঁদ ছবি ব্্যবহার করা হয়েছে, এরকম পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে। ঠিক সেরকম পরমাণুর মাঝখানে থাকা খুবই পরমাণুর ছবি সর্্বত্র ব্্যবহার করা হলেও সত্্যযিকারের পরমাণু দেখতে ছো োট নিউক্লিয়়াস ইলেকট্রনকে নিজের দিকে টানছে বলে ইলেকট্রন কিন্তু মো োটেও এরকম নয়! নিউক্লিয়়াসকে ঘিরে ঘুরছে। এখন প্রশ্ন হলো ো, পরমাণুর ভেতরকার খুবই ছো োট নিউক্লিয়়াস কেন ইলেকট্রনকে নিজের দিকে টানছে? wkÿvel© 2024 তার কারণ হচ্ছে, বৈদ্্যযুতিক আকর্্ষণ। নিউট্রনের কো োনো ো চার্্জ নেই সত্্যযি; কিন্তু প্্ররোটনের চার্্জ পজিটিভ, তাই নিউক্লিয়াসের মো োট চার্্জ সবসময় পজিটিভ। অন্্যদিকে ইলেকট্রনের চার্্জ নেগেটিভ এবং বৈদ্্যযুতিক 15 বিজ্ঞান বিকর্্ষণ বিকর্্ষণ আকর্্ষণ এক ধরনের চার্্জ একে অন্্যকে বিকর্্ষণ করে এবং বিপরীত চার্্জ একে অপরকে আকর্্ষণ করে বলের বৈশিষ্টট্য হচ্ছে, বিপরীত চার্্জ একে অপরকে আকর্্ষণ করে (এবং এক ধরনের চার্্জ একে অন্্যকে বিকর্্ষণ করে)। তাই নিউক্লিয়াসের আকর্্ষণে ইলেকট্রন তাকে ঘিরে ঘো োরে। এই বৈদ্্যযুতিক বল এবং শক্তির কথা তো োমরা পরে আরও পড়বে, আরও অনেক কিছু জানবে এবং অনেকভাবে ব্্যবহার করবে। আপাতত জেনে রাখো ো, একটা পরমাণুর ভেতরে ইলেকট্রনের নেগেটিভ এবং প্্ররোটনের পজিটিভ চার্্জ দিয়়েই সবকিছু শুরু। বলা যেতে পারে, আমরা এখন পরমাণুর গঠনের মূ ল বিষয়টি জেনে গেছি। একটি পরমাণুর মাঝখানে থাকে প্্ররোটন আর নিউট্রন দিয়়ে তৈরি খুবই ছো োট একটা নিউক্লিয়়াস; যেখানে প্্ররোটনের চার্্জ পজিটিভ এবং নিউট্রনের কো োনো ো চার্্জ নেই। এই নিউক্লিয়়াসকে ঘিরে ঘো োরে ইলেকট্রন। কারণ, ইলেকট্রনের চার্্জ নেগেটিভ এবং নিউক্লিয়়াসে পজিটিভ চার্্জজের প্্ররোটনগুলো ো ইলেকট্রনগুলো োকে নিজের দিকে আকর্্ষণ করে। পারমাণবিক সংখ্্যযা: এই অধ্্যযায়়ের শুরুতে বলা হয়়েছে এখন পর্্যন্ত ১১৮টি মৌ ৌলিক পদার্্থ পাওয়়া গেছে। এই ১১৮টি মৌ ৌলিক পদার্্থথের রয়েছে ১১৮টি ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু। পরমাণুগুলো োর মধ্্যযে পার্্থক্্য কী? কীভাবে সেগুলো োকে আলাদা করা হয়? আসলে সেই পদ্ধতিটি খুবই সহজ! তালিকার প্রথম পরমাণুর নিউক্লিয়়াসের মধ্্যযে একটি প্্ররোটন, কাজেই বাইরে একটি ইলেকট্রন। তার নাম হাইড্্ররোজেন। এর পরের পরমাণুর নিউক্লিয়়াসের দু ইটি প্্ররোটন (এবং দু ইটি নিউট্রন) এবং বাইরে দু ইটি ইলেকট্রন, তার নাম হিলিয়়াম। এর পরের পরমাণুর নিউক্লিয়়াসে তিনটি প্্ররোটন (এবং তিনটি নিউট্রন) কাজেই তার বাইরে তিনটি ইলেকট্রন, তার নাম হচ্ছে লিথিয়়াম। এভাবে নিউক্লিয়়াসে একটি করে প্্ররোটন, বাইরে একটি করে ইলেকট্রন বেড়়েছে এবং এখন পর্্যন্ত পাওয়়া সর্্বশেষ পরমাণু নিউক্লিয়়াস ১১৮টি প্্ররোটন এবং বাইরে ১১৮টি ইলেকট্রন (এবং নিউক্লিয়াসে যতগুলো ো প্্ররোটন তার সমান কিংবা বেশি নিউট্রন)। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যে কয়টি প্্ররোটন থাকে, সেটিই হচ্ছে সেই পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্্যযা। তো োমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছ, একটি পরমাণুতে যে কয়টি প্্ররোটন থাকে বাইরে ঠিক সেই কয়টি ইলেকট্রন থাকতে হয় কারণ প্্ররোটন আর ইলেকট্রনের চার্্জ সমান, শুধু একটি পজিটিভ অন্্যটি নেগেটিভ। কাজেই দু টো োর সংখ্্যযা সমান সমান হলে পজিটিভ এবং নেগেটিভ মিলে মো োট চার্্জজের পরিমাণ শূ ন্্য কিংবা চার্্জবিহীন হয়! তো োমাদের মনে হতে পারে, নিউট্রনের যেহেতু চার্্জ নেই; তাই তার সংখ্্যযা wkÿvel© 2024 কম বেশি হলে কিছু আসে যায় না কিন্তু তারপরও নিউক্লিয়াসের ভেতরে যতগুলো ো প্্ররোটন তার সমান কিংবা বেশি নিউট্রন থাকতে হয়, তার একটা খুব গুরুত্বপূ র্্ণ কারণ আছে, যেটি তো োমরা একটু পরেই 16 অণু পরমাণু জানতে পারবে। ইলেকট্রন বিন্্যযাস: আমরা বলেছি, একটি পরমাণুর নিউক্লিয়়াসে যে কয়টি প্্ররোটন থাকে বাইরে ঠিক ততগুলো ো ইলেকট্রন থাকে। স্বাভাবিকভাবেই আমরা জানতে চাইব সেগুলো ো কীভাবে থাকে? সবগুলো ো ইলেকট্রন কি এক জায়গায় এলো োমেলো োভাবে থাকে নাকি সৌ ৌরজগতে একেকটি কক্ষপথে যেরকম একেকটি করে গ্রহ থাকে সেভাবে থাকে? ইলেকট্রনগুলো ো আসলে মো োটেও এলো োমেলো োভাবে থাকে না, সেগুলো ো নিউক্লিয়়াস থেকে নির্্দদিষ্ট দূ রত্বে নির্্দদিষ্ট কক্ষপথে থাকে। তবে এক কক্ষপথে একটি মাত্র ইলেকট্রন থাকে না, আরো ো বেশি সংখ্্যক থাকে এবং একটি কক্ষপথে কয়়েকটি ইলেকট্রন থাকবে, সেটিও পদার্্থবিজ্ঞানের সূ ত্র নির্্দদিষ্ট করে দিয়়েছে। শুধু তো োমরা জেনে রাখো ো, একটি ইলেকট্রন কো োন কক্ষপথে আছে তার ওপর সেই ইলেকট্রনের শক্তি নির্্ভর করে। কাজেই কক্ষপথগুলো োকে শক্তির স্তর হিসেবে কল্পনা করা যায়। যেমন আমরা যদি একটি সো োনার পরমাণুর কথা চিন্তা করি, তার ভেতরে কক্ষপথের ইলেকট্রন খুবই শক্তভাবে নিউক্লিয়়াসে আকর্্ষণে আবদ্ধ থাকে। তাই সেটিকে সরাতে হলে অনেক শক্তি দিতে হয়। আবার বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলো ো খুবই দু র্্বলভাবে আবদ্ধ থাকে—খুব সহজেই সেগুলো োকে মুক্ত করে নেওয়়া যায়! বিদ্্যযুৎ পরিবহনের জন্্য মুক্ত ইলেকট্রনের দরকার হয়, সেজন্্য সো োনা খুবই ভালো ো বিদ্্যযুৎ পরিবাহী। হাইড্্ররোজেন, কার্্বন, লো োহা এবং সো োনার পরমাণুতে যথাক্রমে, ১, ৬, ২৬ এবং ৭৯টি ইলেকট্রন এবং নিউক্লিয়াসে সমান সংখ্্যক প্্ররোটন রয়েছে। কাজেই এখন তো োমরা মো োটামুটিভাবে দু টো ো বিষয় বলতে পারবে। একটা পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্্যযা যত বেশি হবে, তার ইলেকট্রনগুলো ো সাজানো োর জন্্য বেশি কক্ষপথের প্রয়োজন হবে বলে তার আকার তত বড়। আবার একেবারে বাইরের কক্ষপথের ইলেকট্রনগুলো ো কীভাবে আছে, সেটাই তার ধর্্মকে নির্্ধধারণ করে। সেজন্্য কো োনো ো কো োনো ো পরমাণু হচ্ছে ধাতু, কো োনো োটি অধাতু, কো োনো োটি গ্্যযাস, কো োনো োটি তরল কিংবা কঠিন, কো োনো োটি নিষ্ক্রিয় আবার কো োনো োটি অত্্যন্ত বিক্রিয়়াশীল। ২.১.৪ নিউক্লিয়়াস তো োমরা নিশ্চয়ই লক্ষ করেছ যে, নিউক্লিয়়াসের কথা বলার সময় প্রতিবার তো োমাদের মনে করিয়়ে দেওয়়া wkÿvel© 2024 হয়়েছে যে নিউক্লিয?