জীবপ্রযুক্তি - জীববিজ্ঞানের ব্যবহার PDF
Document Details
Uploaded by AgileGnome3972
Saheed Kshudiram College
Tags
Related
- CBSE Class 12 Biology Biotechnology Principles and Processes PDF
- Biotechnology & Genetic Engineering Multiple Choice Questions PDF
- Genetic Engineering and Biotechnology PDF
- Genetic Engineering Notes PDF
- Genetic Engineering and Gene Cloning Lecture Notes PDF
- CAIE Biology IGCSE Biotechnology and Genetic Modification Notes PDF
Summary
This document discusses biotechnology, specifically its applications in various fields including agriculture. It details the creation of recombinant DNA, its introduction into host cells, and the evaluation of desired characteristics. Additionally, it mentions the role of restriction enzymes and the production of transgenic organisms. It also outlines the use of biotechnology in agriculture for higher yields, disease resistance, and herbicide tolerance in crops.
Full Transcript
# জীবপ্রযুক্তি ## ৫. রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি - করলে উভয় DNA-র আঠালো প্রান্তগুলো জোড়বদ্ধ হয়। - অর্থাৎ প্লাসমিডের কাঁটা অংশে কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ড সংযুক্ত হয়ে পুনরায় বৃত্তাকার DNA সৃষ্টি হয়। - এভাবে রিকম্বিনেন্ট DNA বা রিকম্বিনেন্ট প্লাসমিড তৈরি হয়। ## ৬. রিকম্বিনেন্ট DNA অণুকে পোষক কোষে প্রবেশকরণ -...
# জীবপ্রযুক্তি ## ৫. রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি - করলে উভয় DNA-র আঠালো প্রান্তগুলো জোড়বদ্ধ হয়। - অর্থাৎ প্লাসমিডের কাঁটা অংশে কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ড সংযুক্ত হয়ে পুনরায় বৃত্তাকার DNA সৃষ্টি হয়। - এভাবে রিকম্বিনেন্ট DNA বা রিকম্বিনেন্ট প্লাসমিড তৈরি হয়। ## ৬. রিকম্বিনেন্ট DNA অণুকে পোষক কোষে প্রবেশকরণ - সাধারণত সংখ্যাবৃদ্ধির জন্য রিকম্বিনেন্ট DNA-কে পোষক কোষে প্রবেশ করানো হয়। - যেসব জীব থেকে প্লাসমিড বা বাহক নির্বাচন করা হয় সেসব জীবই ভালো পোষক হিসেবে কাজ করে। - মাধ্যমে ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড যুক্ত করে দ্রুত চাপ প্রয়োগ করলে ব্যাকটেরিয়া কোষ সহজেই প্লাসমিড গ্রহণ করে। - DNA অনুপ্রবেশের অন্য একটি আধুনিক পদ্ধতি হলো- Electroporation। - প্লাসমিড গ্রহণকারী ব্যাকটেরিয়াকে ট্রান্সফরম্ভ ব্যাকটেরিয়া (transformed bacteria) বলে। - উপযুক্ত আবাদ মাধ্যমে ট্রান্সফরম্ভ ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি করা হয়। ## ৭. রিকম্বিনেন্ট DNA-তে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ মূল্যায়ন - আবাদ মাধ্যমে সংখ্যাবৃদ্ধির পর কাঙ্ক্ষিত জিনসহ রিকম্বিনেন্ট DNA-র উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। - সাধারণত প্লাসমিডের অ্যান্টিবায়োটিকরোধী জিনের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত DNA খণ্ডটি যুক্ত করা হয়। - এরপর যদি ব্যাকটেরিয়া কোষ অ্যান্টিবায়োটিক যুক্ত আবাদ মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে তাহলে সেক্ষেত্রে রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়। - উল্লেখ্য যে, বর্তমানে DNA প্রোব ব্যবহার করে দ্রুত রিকম্বিনেন্ট DNA শনাক্ত করা যায়। ## ৮. কাঙ্ক্ষিত জীবে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রতিস্থাপন ও ট্রান্সজেনিক জীবের মূল্যায়ন - সফলভাবে প্রস্তুতকৃত রিকম্বিনেন্ট DNA কাঙ্ক্ষিত জীবে প্রতিস্থাপনের বেশ কিছু পদ্ধতি আছে, যেমন- মাইক্রোইনজেকশন, ম্যাজিক বুলেট, জিনগান, ইলেক্ট্রোপোরেশন, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ইত্যাদি। - এসব পদ্ধতিতে ডিম্বাণু বা ভূণ কোষে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রতিস্থাপন করা হয়। - এ কোষ হতে উৎপন্ন ট্রান্সজেনিক জীব (উদ্ভিদ, প্রাণী বা অণুজীব) সফল বলে বিবেচিত হয়। ## রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে রেস্ট্রিকশন এনজাইম গুরুত্বপূর্ণ কেন? - রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে বাহক DNA-তে কাঙ্খিত DNA খণ্ড সংযোজনের মাধ্যমে তৈরি করা হয় রিকম্বিনেন্ট DNA। - এক্ষেত্রে রেস্ট্রিকশন এনজাইমের সাহায্যে কাঙ্খিত DNA-এর চাহিদামতো অংশ কেঁটে পৃথক করা হয় এবং একই রেস্ট্রিকশন এনজাইম দিয়ে বাহক DNA-র নির্দিষ্ট স্থান কেঁটে গ্যাপ তৈরি করা হয়। - পরবর্তীতে কর্তিত DNA খণ্ডকে বাহক DNA-র সাথে একত্রে রেখে লাইগেজ এনজাইম প্রয়োগ করলে উভয় DNA-র আঠালো প্রান্ত যুক্ত হয়ে রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি হয়। - সুতরাং রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে রেস্ট্রিকশন এনজাইম না থাকলে বাহক DNA এবং কাঙ্খিত DNA কে কাঁটা সম্ভব হতো না। - আবার, এ বাহক DNA ও কাঙ্খিত DNA কে কাঁটতে না পারলে তাদের সংযুক্তি ঘটানোও অসম্ভব হতো। - অর্থাৎ, রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরি হতো না। - এ কারণেই রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তিতে রিকম্বিনেন্ট DNA তৈরির ক্ষেত্রে রেস্ট্রিকশন এনজাইম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ## কতিপয় ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ ও ব্যাকটেরিয়ার নাম ও তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য | উৎপন্ন দ্রব্য | বৈশিষ্ট্য | উৎপন্ন দ্রব্য | বৈশিষ্ট্য | |---|---|---|---| | পেঁপে | ভাইরাস প্রতিরোধী | আলু | কীটপতঙ্গ ও ভাইরাস প্রতিরোধী | | ভূট্টা (M-37W) | ভিটামিন সমৃদ্ধজাত | আলু | ২০-৪০% স্টার্চ বৃদ্ধি | | ভূট্টা | কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী | ধান | আগাছানাশক সহনশীল | | তুলা | আগাছানাশক সহনশীল | গম | আগাছানাশক সহনশীল | | তুলা | কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী | সয়াবিন | উচ্চ অলিয়েক অ্যাসিড সম্পন্ন | | তামাক | আগাছানাশক সহনশীল | সুগারবীট | আগাছানাশক সহনশীল | | E. coli | ইনসুলিন উৎপাদনকারী | টমেটো | বিলম্বে পরিপক্বতা ও ত্বক নমনীয় | | E. coli | ইন্টারফেরন উৎপাদনকারী | টমেটো | আগাছানাশক সহনশীল | - পূর্বে গরু এবং শূকরের অগ্ন্যাশয় হতে প্রাকৃতিক ইনসুলিন সংগ্রহ করা হতো। - যা ছিলো পরিমাণে খুব অল্প এবং তা মানবদেহে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরি হতো। - পরে মানুষের ইনসুলিন জিন প্লাজমিডের মাধ্যমে E. coli কোষে সন্নিবেশিত করে ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে মানব ইনসুলিন তৈরি করা হচ্ছে। - এতে ইনসুলিনের প্রাপ্তি সহজ হয়েছে # জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার ## ১১.৬ জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার (Application of Biotechnology) - জীবপ্রযুক্তির গুরুত্ব বহুমুখী। - নিচে এ প্রযুক্তির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার আলোচনা করা হলো— ## ক. কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার - মানুষের প্রধান চাহিদা খাদ্যের যোগান আসে কৃষি থেকে। - অধিক উৎপাদন এবং গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির বহুমুখী তৎপরতা দেখা যায়। - আমেরিকায় চাষকৃত তুলার ৫০%, ভূট্টার ৪০% এবং সয়াবিনের ৪৫% ট্রান্সজেনিক ভ্যারাইটি। - বাংলাদেশের প্রথম GM ফসল Bt- বেগুনের চাষ শুরু হয়েছে। ### ১. অধিক পরিমাণে ফলন - কোনো বন্য জাতের জিন অপর ফসলি শস্যের মধ্যে স্থানান্তর করে অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা যায়। ### ২. রোগ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন - ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও নানা প্রকার কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করায় জীবপ্রযুক্তির সফলতা উল্লেখযোগ্য। - **যেমন-** - **i. আলুতে অসমোটিন জিন দ্বারা Phytophthora infestans প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।** - **ii. তামাকে এসিটাইল ট্রান্সফারেজ জিন ব্যবহার করে Pseudomonas syringe প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।** - **iii. টমেটোর মোজাইক ভাইরাস থেকে পৃথক করা কোড প্রোটিন (CP) জিন তামাকে স্থানান্তর করে দেখা গেছে তামাক গাছে TMV সংক্রমণ সাধারণ উদ্ভিদের তুলনায় স্বল্প মাত্রায় এবং অনেক বিলম্বে ঘটে।** - **iv. Bt বেগুনে Bacillus thuringiensis মাটিস্থ ব্যাকটেরিয়ার bt জিন (ক্রিস্টাল প্রোটিন জিন; Cry1Ac) সংযুক্ত করায় বেগুনে এন্ডোটক্সিন জাতীয় প্রোটিন তৈরি হওয়ায় বেগুন পতঙ্গ প্রতিরোধী, তাই পেস্টিসাইড প্রয়োগ করতে হয় না।** - **এভাবে ভুট্টা, তুলা, সয়াবিন, **টমেটো**, **আলু**, **পেঁপে**, **রাই**, **সূর্যমুখী**, **নাশপাতি**, **আঙ্গুর**, **গম** ও **ধানের** ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন হয়েছে। ### ৩. পীড়ন প্রতিরোধী জাত - তাপ, ঠাণ্ডা, লবণ, ভারী ধাতু, ফাইটোহরমোন ইত্যাদির পীড়ন সহনশীল বিভিন্ন জিন শনাক্ত করা হয়েছে এবং বিভিন্ন উদ্ভিদে স্থানান্তরের চেষ্টা চলছে। ### ৪. হার্বিসাইড প্রতিরোধী উদ্ভিদ - Streptomyces hygroscopicus থেকে প্রাপ্ত bar জিন সরিষা ও আলু গাছে স্থানান্তর করে হার্বিসাইড প্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। - অন্যান্য ফসলের মধ্যে **টমেটো**, **তুলা**, **বীট**, **সয়াবিন** ও **ভুট্টা** উল্লেখযোগ্য। ### ৫. বীজহীন ফল সৃষ্টি - জাপানে বীজহীন তরমুজ উদ্ভাবন হয়েছে। - বিভিন্ন দেশে অন্যান্য ফলের উপর এমন গবেষণা চলছে। ### ৬. ফসলের গুণগত মান উন্নয়ন - **(i) জ্যাপোনিকা জাতের ধান থেকে 'সুপার রাইস' বা 'গোল্ডেন রাইস' উদ্ভাবন করা হয়েছে, যেখানে ডেফোডিল নামক উদ্ভিদ থেকে বিটা ক্যারোটিন তৈরির চারটি জিন এবং অতিরিক্ত লৌহ তৈরির তিনটি জিন প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।** - **এ ধানের ভাত খেলে শিশুদের আর বাড়তি ভিটামিন-এ খেতে হবে না।** - **আরও মায়েদের দেহে বাড়তি লৌহের যোগান দেবে।** - **বর্তমানে উক্ত ধানের চাষ শুরু হয়েছে।** - **(ii) ব্যাকটেরিয়া থেকে আহরিত গ্লুকোজ পাইরোেফসফোরাইলেজ জিন আলুতে স্থানান্তর করে স্টার্চের পরিমাণ ২০-৪০% বৃদ্ধি করা হয়েছে।** - **(iii) আবার সূর্যমুখীর সালফার অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টিকারী জিন ক্লোভার ঘাসে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা ভেড়া খেলে ভেড়ার লোম অপেক্ষাকৃত উন্নত মান সম্পন্ন হয়।** ### ৭. নন-লিগুম ফসলে নাইট্রোজেন সংবন্ধন - বায়বীয় নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী 'nif জিন' লিগুম (শিম) জাতীয় উদ্ভিদ থেকে E. coli ব্যাকটেরিয়াতে স্থানান্তর সম্ভব হয়েছে। - nif জিনবাহী ব্যাকটেরিয়া যা নন-লিগুম উদ্ভিদে স্থানান্তর করে জমিতে ব্যবহার করলে পরবর্তীতে সার ব্যতীত ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে। ### ৮. পুংবন্ধ্যাত্ব উদ্ভিদ সৃষ্টি - সুপ্রজননের ক্ষেত্রে অনেক সময় পুংবন্ধ্যা উদ্ভিদের প্রয়োজন হয়। - ব্যাকটেরিয়ার রাইবোনিউক্লিয়েজ জিন সরিষা উদ্ভিদে স্থানান্তর করে পরাগরেণু উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। - **তামাক, লেটুস, কফি, তুলা, টমেটো ও আলুতেও এটা সম্ভব হয়েছে।** ## খ. চিকিৎসা ও ওষুধ শিল্পে - অল্প সময়ের ব্যবধানে হলেও চিকিৎসা ও ওষুধ শিল্পে জীবপ্রযুক্তি দ্বারা বিভিন্ন ধরনের উল্লেখযোগ্য সফলতা এসেছে। ### ১. হরমোন ও প্রোটিন উৎপাদন - এ প্রযুক্তির মাধ্যমে **ইনসুলিন**, **ইন্টারফেরন**, **ইরিথ্রোপোইটিন (EPO)**, **সোমাটোট্রোফিন**, **সোমাটোস্ট্যাটিন** প্রভৃতি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হরমোন উৎপাদন করা হচ্ছে। - মানবদেহে এগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হলে নানা প্রকার উপসর্গ প্রকাশ পায়। - **ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়।** - **দেহে ইন্টারফেরন তৈরি না হলে ভাইরাসের প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়, ফলে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের সংক্রমণ ঘটে।** - **এছাড়া EPO-এর ঘাটতিতে মানুষ রক্তশূন্যতায় ভোগে।** - **এমন বিভিন্ন জটিলতার হাত থেকে বর্তমানে মুক্তি দিচ্ছে জীবপ্রযুক্তি।** ### ২. টিকা উৎপাদন - সনাতন পদ্ধতির বিপরীতে জীবপ্রযুক্তিতে উৎপন্ন টিকা: **দামে সস্তা এবং সহজে পরিবহনযোগ্য।** - এ পদ্ধতিতে শুধুমাত্র প্রজাতিভিত্তিক অ্যান্টিবডি সংশ্লেষিত হয়, কোনো পূর্ণাঙ্গ ভাইরাস তৈরি হয় না, **ফলে টিকা হয় অত্যন্ত নিরাপদ।** - **এভাবে হেপাটাইটিস বি, ম্যালেরিয়া, পোলিও, যক্ষ্মা, হাম, গুটি বসন্ত প্রভৃতি রোগের টিকা তৈরি হয়েছে।** ### ৩. বংশগতীয় রোগ নিরাময় - এ পর্যন্ত মানুষে প্রায় ৩,৪০০টি বংশগত রোগের সন্ধান পাওয়া গেছে। - এদের কোনোটা বিশ্বব্যাপী বা এলাকাভিত্তিক আর কোনোটা জাতিগত। - এদের অধিকাংশেরই ১টি করে জিন ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং প্রয়োজনীয় এনজাইম সৃষ্টি না হওয়া বা ত্রুটিপূর্ণ এনজাইম সৃষ্টি হওয়ায় শারীরবৃত্তীয় রোগের সৃষ্টি হয়। - **যেমন- হিমোফিলিয়া, থ্যালাসেমিয়া, ইউরোকাইনেজ, ফেনিলকেটোনুরিয়া জিন ইত্যাদি।** - **এদের মধ্যে গর্ভাবস্থার শুরুতে জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করলে ফেনিলকেটোনুরিয়া রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা থাকে।** ### ৪. রোগ নির্ণয় - বিভিন্ন রোগ শনাক্তকরণের প্রচলিত পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে **DNA প্রোব কার্যকরভাবে রোগ শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।** ### ৫. জিন থেরাপি - কোষ বা জীবের বংশগতীয় উপাদানের কোনো ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা থাকলে যে পদ্ধতিতে বংশগতীয় উপাদানকে সরাসরি সঠিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায় তাকে **জিন থেরাপি বলে।** - **জিন থেরাপির মাধ্যমে সুস্থ সবল শিশুর জন্মদানে এ প্রযুক্তি বৈপ্লবিক অবদান রেখেছে।** - **বিজ্ঞানীমহলের ধারণা আগামী ২০২৫ হতে ২০৩০ সালের মধ্যে বর্তমান প্রচলিত কেমোথেরাপি পদ্ধতির চিকিৎসাকে সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে জিন থেরাপি বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।** ## গ. মলিকুলার ফার্মিং বা বায়োফার্মি - ট্রান্সজেনিক প্রাণী উদ্ভাবনের মাধ্যমে তাদেরকে বায়োরিঅ্যাক্টর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। - এমন প্রাণী থেকে প্রাপ্ত দুধ, রক্ত ও মূত্র থেকে **প্রয়োজনীয় ওষুধ (হরমোন, ভিটামিন, অ্যান্টিজেন প্রভৃতি) আহরণ করা হয়।** - কুসুম ফুলের বীজের মাধ্যমে এখন ইনসুলিন উৎপাদনযোগ্য হলেও এখনই তা বাজারজাত করা হয়নি। - আশা করা যায় এতে ইনসুলিন উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে। ## ঘ. পরিবেশ ব্যবস্থাপনা - দ্রুত গতিতে আমাদের সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে। - সভ্যতার বিকাশের সাথে উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন ও নগরায়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। - উন্নয়নমুখী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে এবং বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটছে, যা মানব সভ্যতার জন্য হুমকিস্বরূপ। - প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার ব্যবস্থা গ্রহণকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলে। - পরিবেশ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার ইতোমধ্যে বিশেষ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। - **যেমন-** ### ১. শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনা - শিল্প কারখানা থেকে যেসব বর্জ্য নির্গত হয় তাতে পচনশীল “জৈব-যৌগ, ভারী ধাতু, সায়ানাইড, ক্লোরিনযৌগ, ফসফেট, নাইট্রেট, অপচনযোগ্য রাসায়নিক পদার্থসহ পরিবেশ দূষণকারী বিভিন্ন পদার্থ যুক্ত থাকে। - **পচনশীল বস্তু দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে।** - **ভারী ধাতু ও রাসায়নিক বর্জ্য জলাধারের পানিতে মিশে জলজ প্রাণীর বসবাসের অযোগ্য করে তোলে এবং মাটি দূষিত করে।** - **গ্যাসীয় বর্জ্য বায়ু দূষণ এবং অ্যাসিড বৃষ্টি ঘটায়।** - **জীবপ্রযুক্তিতে এসব দূষণ সৃষ্টিকারী পদার্থ অণুজীবের সাহায্যে দূষণমুক্ত পদার্থে পরিণত করা হয়।** - **কাগজ কলের বর্জ্য শোধনের জন্য কতিপয় ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক (Torula) ব্যবহার করা হয়।** - **বর্জ্য পদার্থ শোধন ট্যাঙ্কে জমা করে সেখানে বিভিন্ন অণুজীবের উপস্থিতিতে ভারী ধাতু পৃথক করা সম্ভব হয়েছে।** - **অপচনশীল যৌগ হিসেবে চিহ্নিত বস্তুসমূহ, যেমন- DDT, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড প্রভৃতি ভাঙনের জন্য বেশ কিছু অণুজীব বাছাই করা গেছে।** - **এছাড়া জৈব বর্জ্য ব্যবহার করে অণুজীবের সাহায্যে সিঙ্গেল সেল প্রোটিন (SCP) উৎপাদন করা হচ্ছে।** - **যা মানুষ ও পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছে।** - **পাশাপাশি বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড, ইথানল, ভিটামিন, গ্লিসারিন প্রভৃতি পাওয়া যায়।** ### ২. সাগরে তেল নির্গমন - **তেলবাহী ট্যাঙ্কার হতে অনেক সময় তেল নির্গমনের ফলে সমুদ্রের পানির উপর তেলের স্তর সৃষ্টি করে যা পানিতে অক্সিজেনের প্রবাহ বন্ধ করে দেয়।** - **ফলে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।** - **এরূপ তেল ও গ্রিজ সমুদ্র উপকূলে জমা হওয়ায় পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দূষণ সৃষ্টি করে।** - **ইতোমধ্যে বেশ কিছু অণুজীবের জাত (স্ট্রেইন) বাছাই করা হয়েছে যারা তেল ও গ্রিজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে এবং পরিবেশ দূষণ মুক্ত করে।** - **Pseudomonas aeruginosa তেলের সারফেস টেনসন কমিয়ে মুক্ত করতে সাহায্য করে।** - **জিন প্রকৌশল প্রযুক্তিতে উৎপন্ন কিছু ব্যাকটেরিয়া তেল দূষণ মুক্তকরণের কাজে অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রতীয়মান হয়েছে।** - **এরূপ ব্যাকটেরিয়া "সুপার বাগ” পেটেন্ট নামে আমেরিকায় নিবন্ধিত।** - "**সুপার বাগ**, **Nocardia**, কিছু **ইস্ট** ও **মোন্ড জাতীয় ছত্রাক** একাধিক ধরনের **হাইড্রোকার্বন ভেঙে দিতে সক্ষম।** ### ৩. পয়ঃবর্জ্য আত্মীকরণ - পয়ঃবর্জ্য সিউয়েজ বলতে গৃহস্থালি বা কৃষি খামার থেকে নির্গত তরল বর্জ্য পদার্থসমূহকে বোঝানো হয়। - পয়ঃবর্জ্যে পচনশীল পদার্থ বেশি থাকে বলে বিভিন্ন ধরনের অণুজীবের আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। - পয়ঃবর্জ্য বিভিন্ন পথে নদী ও জলাশয়ের পানিতে মিশে দূষণ সৃষ্টি করে। - এরূপ দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে **কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, খোসপাচড়াসহ বিভিন্ন মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়।** - বড় বড় শহরে সেজন্য পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের জন্য বিশেষ ধরনের শোধনাগার ব্যবহার করা হয়। - পয়ঃপ্রণালির বর্জ্যমিশ্রিত পানি প্রথমে বড় বড় লেগুন বা পুকুরে জমা করা হয়। - এসব পুকুরে বায়বীয় ও অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়া, নীলাভ সবুজ শৈবাল, সবুজ শৈবাল, প্রোটোজোয়া, নেমাটোড, রটিফার প্রভৃতির সাহায্যে জটিল জৈব অণু ভেঙে CO2, CH4, N₂ প্রভৃতি সরল উপাদানে পরিণত হয়। - অপাচ্য তলানী পুকুরের তলদেশে জমা হয়ে যে কাদার সৃষ্টি করে তাকে 'স্লাজ' বলে। - 'স্লাজ' হতে বিশেষ তাপরোধী ইট তৈরি করা যেতে পারে। - পয়ঃবর্জ্য আত্মীকরণের জন্য যেসব ব্যাকটেরিয়া কার্যকর, তাদের মধ্যে Pseudomonas, Achromobacter, Enterobacter, Flavobacterium, Zooglea, Micrococcus, Arthrobacter, Sphaerotilus ও বিভিন্ন ধরনের কোরিনোব্যাকটার ও মাইক্রোব্যাকটার প্রধান। # ১১.৭ জীবপ্রযুক্তির মাধ্যমে হরমোন ও প্রোটিন উৎপাদন ## ১১.৭.১ ইনসুলিন (Insulin) - ১৯১৬ সালে Sir Edward Sharpy-Schafer সর্বপ্রথম ইনসুলিন আবিষ্কার ও নামকরণ করেন। - ইনসুলিন হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ হরমোন যা মানুষসহ সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর অগ্ন্যাশয়ের বিটা (B) কোষগুচ্ছ হতে ক্ষরিত হয়। - ইনসুলিন রক্তে বিদ্যমান গ্লুকোজের উচ্চ মাত্রাকে কমিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। - কোনো কারণে অগ্ন্যাশয় হতে ইনসুলিন নিঃসৃত না হলে বা কম নিঃসৃত হলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় বা ডায়াবেটিস রোগ হয়। - এমতাবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ডায়াবেটিস রোগীকে ইনজেকশনের মাধ্যমে ইনসুলিন গ্রহণ করতে হয়। - ১৯৪৫ সালে ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের Federick Sanger ও সহগবেষকরা সর্বপ্রথম ইনসুলিনের আণবিক গঠন আবিষ্কার করেন। - ইনসুলিন হচ্ছে অন্যতম ক্ষুদ্র প্রোটিন। - মানুষের ১১নং ক্রোমোসোমের খাটো বাহুর DNA-এর শীর্ষে ১৫৩টি নাইট্রোজেন বেস নিয়ে ইনসুলিনের জেনেটিক কোড বিদ্যমান। - এটি A (৬৩টি নিউক্লিওটাইড) ও B (৯০টি নিউক্লিওটাইড) নামক দুটি পলিপেপটাইড শৃঙ্খল নিয়ে গঠিত। - জিন প্রকৌশল তথা রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তির মাধ্যমে মানব ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়। - এ কৌশল আবিষ্কার করেন আমেরিকার Eli Lily and Company, যা ১৯৮২ সালে প্রথম বাজারজাত করা হয় 'হিউমুলিন' নামে। ## ইনসুলিন উৎপাদন - নিম্নলিখিত ধারাবাহিক ধাপগুলো অনুসরণের মাধ্যমে মানুষের ইনসুলিন উৎপাদন করা হয়ে থাকে- ### ১. ইনসুলিন উৎপাদনকারী জিন শনাক্তকরণ