Summary

These notes detail the basic concepts of cell chemistry and the various components of cells. They outline the different types of biochemical compounds such as carbohydrates, proteins and lipids, as well as discuss the chemical bonds that hold them together.

Full Transcript

## তৃতীয় অধ্যায় ### কোষ রসায়ন - প্রধান শব্দসমূহ: কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, সুকরোজ, এনজাইম। - CELL CHEMISTRY প্রতিটি জীবদেহ কতগুলো রাসায়নিক উপাদানে গঠিত। এসব রাসায়নিক উপাদানগুলো কোষনির্ভর। কোষস্থ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ সম্বন্ধে তোমরা এ অধ্যায়ে জানতে পারবে। **এ অধ্যায়...

## তৃতীয় অধ্যায় ### কোষ রসায়ন - প্রধান শব্দসমূহ: কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, সুকরোজ, এনজাইম। - CELL CHEMISTRY প্রতিটি জীবদেহ কতগুলো রাসায়নিক উপাদানে গঠিত। এসব রাসায়নিক উপাদানগুলো কোষনির্ভর। কোষস্থ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থ সম্বন্ধে তোমরা এ অধ্যায়ে জানতে পারবে। **এ অধ্যায় পাঠ শেষে শিক্ষার্থীরা-** 1. জীবের রাসায়নিক উপাদান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করতে পারবে 2. কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও লিপিডের শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করতে পারবে 3. জীবদেহে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও লিপিডের ভূমিকা বিশ্লেষণ করতে পারবে 4. উৎসেচক এর ক্রিয়ার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে পারবে 5. উৎসেচক এর শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করতে পারবে 6. বিভিন্ন জৈবিক কার্যক্রমে উৎসেচকের ব্যবহার ব্যাখ্যা করতে পারবে ### জীবকোষের রাসায়নিক উপাদান (Biochemicals in Cell) কোষ হলো জীবদেহের গঠন ও কাজের একক। কোষে জীবন ধারণের সব উপাদান তৈরি হয় এবং বিরাজ করে। উদ্ভিদদেহও বিভিন্ন অজৈব ও জৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত। উদ্ভিদের জীবন গঠন ও জীবন ধারণের জন্যে বহু রাসায়নিক পদার্থের প্রয়োজন হয়। এদের অনেকগুলোই দেহের অভ্যন্তরে তথা কোষাভ্যন্তরে সৃষ্টি হয়। বিজ্ঞানের যে শাখায় কোষস্থ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদানগুলোর বর্ণনা, পঠন-পাঠন ও গবেষণা করা হয় তাকে জৈব রসায়ন (Biochemistry) বলা হয়। সজীব উদ্ভিদদেহ বিশ্লেষণ করলে প্রধান যে উপাদান পাওয়া যায় তা হলো পানি। দেহের প্রোটোপ্লাজমের প্রায় শতকরা ৬০-৯০ ভাগ হলো পানি। বাকি যে অংশ অবশিষ্ট থাকে তাকে কঠিন বস্তু (solid matters) বলে। ১৭টি মৌল, যেমন- C, H, O, N, P, K, Ca, Mg, Fe, Na, Cl, Mn, B, S, Mo, Cu ও Zn মিলে সৃষ্টি করেছে অসংখ্য জৈব উপাদান। **জৈব রাসায়নিক পদার্থগুলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট, লিপিড, অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, নিউক্লিক অ্যাসিড, অন্যান্য জৈব অ্যাসিড, বিভিন্ন এনজাইম ইত্যাদি প্রধান। অজৈব পদার্থের মধ্যে পানি অন্যতম।** সাধারণত দুগ্ধজাত খাদ্য, মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, শস্যদানা, শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণ বা খনিজ লবণ বিদ্যমান থাকে। **সকল জীব বস্তু (matter) বা পদার্থ দ্বারা গঠিত। বস্তু রাসায়নিক মৌল (element) দ্বারা গঠিত। যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে ভেঙ্গে আর কোনো সরল বস্তু পাওয়া যায় না তা হলো রাসায়নিক মৌল বা element।** **জীবনে অত্যাবশ্যকীয় এলিমেন্ট (উপাদান) ৯২টি। ৯২টি এলিমেন্টের মধ্যে জীবের ৯৬% বস্তুই O2, C, H₂ ও N2 দ্বারা গঠিত।** অন্যান্য এলিমেন্ট Ca, P, K, S, Na, Cl, Mg অল্প পরিমাণে থাকে। **এলিমেন্টের ক্ষুদ্রতম অংশ যা তার বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারে তা হলো atom বা পরমাণু।** বস্তু জগতের গঠন একক হলো এটম বা পরমাণু। এটমের কেন্দ্রস্থলে (নিউক্লিয়াস) প্রোটন (+) এবং নিউট্রন (০) একসাথে থাকে। নিউক্লিয়াসের বাইরে নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট ইলেক্ট্রন থাকে। অধিকাংশ এটমে সমসংখ্যক প্রোটন (+) ও ইলেকট্রন (-) থাকে। ### কম্পাউন্ড (Compound) বা যৌগ দুই বা তার অধিক এলিমেন্ট সুনির্দিষ্ট অনুপাতে সংযুক্ত হয়ে একটি কম্পাউন্ড বা যৌগ গঠন করে, যেমন 2H2 + O2 = 2H₂O অর্থাৎ H₂ এবং O₂ সুনির্দিষ্ট অনুপাতে যুক্ত হয়ে পানি নামক যৌগ গঠন করেছে। একটি কম্পাউন্ডের এটমসমূহ রাসায়নিক বন্ডের (Chemical bond) মাধ্যমে একত্রে সংযুক্ত থাকে। ### রাসায়নিক বন্ড (Chemical bond) রাসায়নিক বন্ড হয় Ionic (আয়োনিক), Covalent (কোভ্যালেন্ট) বা Hydrogen bond (হাইড্রোজেন বন্ড)। #### আয়োনিক বন্ড (Ionic bond) আয়োনিক বন্ড প্রতিষ্ঠিত হয় দুটি এটমের মধ্যে। একটি এটম থেকে এক বা একাধিক ইলেক্ট্রন অন্য এটমে স্থানান্তর হয়। প্রথম এটম ইলেক্ট্রন হারিয়ে পজিটিভ চার্জ বিশিষ্ট হয় এবং অপরটি ইলেক্ট্রন গ্রহণ করে নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট হয়। এটমের চার্জ বিশিষ্ট (+ অথবা –) অবস্থাকে আয়ন (ion) বলে। পজিটিভ (+) এবং নেগেটিভ (-) চার্জ বিশিষ্ট আয়ন প্রবলভাবে পরস্পরকে আকর্ষণ করে যার ফলে আয়নিক বন্ড তৈরি হয়। #### কোভ্যালেন্ট বন্ড (Covalent bond) দুটি এটমের মধ্যে ইলেকট্রন শেয়ার বা ভাগাভাগি হলে কোভ্যালেন্ট বন্ড সৃষ্টি হয়। দুটি এটমের মধ্যে ইলেকট্রন সমানভাগে ভাগাভাগি হলে যে বন্ড তৈরি হয় তা হলো Nonpolar covalent বন্ড। ইলেকট্রন দুটি এটমের মধ্যে অসমভাবে ভাগাভাগি হলে যে বন্ড তৈরি হয় তা হলো Polar covalent বন্ড। #### হাইড্রোজেন বন্ড (Hydrogen bond) এক অণুর আংশিক পজিটিভ চার্জ বিশিষ্ট হাইড্রোজেন পরমাণু (atom) এবং অপর অণুর (molecule) আংশিক নেগেটিভ চার্জ বিশিষ্ট পরমাণুর মধ্যে আকর্ষণজনিত শক্তির (attraction force) কারণে যে বন্ড তৈরি হয় তা হলো হাইড্রোজেন বন্ড। #### পেপটাইড বন্ড (Peptide bond) ## **অর্গানিক মলিকিউল বা জৈব অণু (Organic molecule)** জীবসমূহে বিদ্যমান অধিকাংশ যৌগ কার্বন পরমাণুর একটি কাঠামো নিয়ে গঠিত যার চারপাশে হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে; কখনও কখনও কিছু অন্য মৌলও থাকতে পারে। এ ধরনের অণুকে জৈব অণু বলা হয়। যে অণুতে কোনো কার্বন-হাইড্রোজেন পরমাণু নেই তা হলো অজৈব যৌগ (inorganic compound) । #### ফাংশনাল গ্রুপ (Functional Group) কোনো জৈব অণুর ক্রিয়াশীল (reactive) গ্রুপকে বলা হয় Functional Group। নিচে কয়েকটি Functional group-এর উদাহরণ দেওয়া হলো। Functional group সাধারণত আয়নিক বা পোলার হয়। | Name (নাম) | Structure (গঠন) | Molecule Class (অণু শ্রেণি) | Example (উদাহরণ) | |---|---|---|---| | Hydroxyl | -C-OH | Alcohol | Ethyl Alcohol | | Carbonyl | -C-C=O | Aldehyde | Acetaldehyde | | | | Ketone | Acetone | | Carboxyl | -C-COOH | Oranic acid | Acetic acid | | Amino | -C-NH2 | Amino acid | Alanine | | Phosphate | -C-PO4 <sup>2-</sup> | Nucleotide | Glyceraldehyde-3-Phosphate | | | -C-O-P-O- | Nucleic acid | | | Sulfhydril | -C-SH | many cellular molecules | | | | | | Mercatoethanol | পৃথিবীতে বিরাজমান সকল জীবের নিয়ন্ত্রক হলো জৈব অণু, যেমন- কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, লিপিড এবং নিউক্লিক অ্যাসিড। নিচে এ সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। ## **কার্বোহাইড্রেট (Carbohydrates) বা শর্করা** জীবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ গাঠনিক উপাদান ও সঞ্চয়ী উপাদান হলো কার্বোহাইড্রেট। আমাদের খাদ্য তালিকার প্রধান উপাদানও কার্বোহাইড্রেট। **কার্বোহাইড্রেট কী?** সাধারণভাবে, কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগকে কার্বোহাইড্রেট বলে; যেখানে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের অনুপাত ১:২:১। যেমন- গ্লুকোজ (C6H12O6)। তবে অনেক যৌগ আছে যেখানে এমন অনুপাত না থাকলেও সেটা কার্বোহাইড্রেট; যেমন- সুক্রোজ (C12H22O11)। আবার এমন অনুপাত থাকলেও সেটা কার্বোহাইড্রেট নয়; যেমন- ফরম্যালডিহাইড (HCHO), অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH) ইত্যাদি (কারণ এখানে অনুপাত ঠিক নেই)। **আধুনিক ধারণা অনুসারে নাইট্রোজেন বা সালফার সমৃদ্ধ সামান্য কিছু যৌগকেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের কারণে কার্বোহাইড্রেটের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।** তাই বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, যে সকল অ্যালডিহাইড বা কিটোন জাতীয় যৌগে কতগুলো হাইড্রোক্সিল গ্রুপ থাকে অথবা যারা আর্দ্রবিশ্লেষিত হয়ে কতগুলো হাইড্রোক্সিল গ্রুপযুক্ত অ্যালডিহাইড বা কিটোন উৎপন্ন করে সেসব যৌগকে কার্বোহাইড্রেট বলে। কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে পলিহাইড্রক্সি অ্যালডিহাইড বা পলিহাইড্রক্সি কিটোন অথবা এদের derivatives (উদ্ভূত যৌগসমূহ)। **'হাইড্রেট্স অব কার্বন' থেকে কার্বোহাইড্রেট নামকরণ হয়েছে।** এর অর্থ দাঁড়ায় 'কার্বনের জলায়ন' অর্থাৎ এক অণু পানির সাথে এক অণু কার্বন (CH₂O) এই অনুপাতে গঠিত বিভিন্ন প্রকার যৌগ (Diverse compounds based on the general formula CH₂O are carbohydrates)। এই সাধারণ ফর্মুলাটি কেবলমাত্র মনোস্যাকারাইট্স- এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য (যেমন গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ইত্যাদি)। একাধিক মনোস্যাকারাইড সহযোগে যে সব কার্বোহাইড্রেট গঠিত হয় ঐ সব ক্ষেত্রে এই সাধারণ ফর্মুলা প্রয়োজ্য নয়। যখন এক অণু গ্লুকোজ ও এক অণু ফ্রুক্টোজ গ্লাইকোসাইডিক বন্ধনীর মাধ্যমে একত্র হয়ে এক অণু সুকরোজ গঠন করে তখন এই সাধারণ ফর্মুলা কার্যকরী হয় না, কারণ বন্ধনী সৃষ্টিকালে এক অণু পানি (H₂O) বের হয়ে যায়, তাই সুকরোজ-এর ফর্মুলা দাঁড়ায় C12H22O11। অধিকাংশ উদ্ভিদের শুকনো ওজনের ৫০-৮০ ভাগ কার্বোহাইড্রেট থাকে। সারা বিশ্বে সকল জৈব বস্তুর মধ্যে কার্বোহাইড্রেট সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় যা জীবদেহে গাঠনিক উপাদান ও সঞ্চয়ী উপাদান হিসেবে থাকে। **শর্করার (কার্বোহাইড্রেট) বৈশিষ্ট্য** 1. এটি দানাদার (চিনি), তন্ত্রময় (সেলুলোজ) ও পাউডার জাতীয় পদার্থ। 2. এরা স্বাদে মিষ্টি (সুক্রোজ) বা স্বাদহীন (সেলুলোজ)। 2. তাপ প্রয়োগে অঙ্গারে পরিণত হয়। 4. পানিতে অধিকাংশই দ্রবণীয় (সরল ও অলিগো কার্বোহাইড্রেট)। 5. এসিডের সাথে মিশে এস্টার গঠন করে। 6. এরা আলোক সক্রিয় ও আলোক সমাণুতা প্রদর্শন করে। **জীবদেহে কার্বোহাইড্রেট-এর কাজ:** 1. জীব দেহের শক্তির প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে এবং জারিত হয়ে শক্তি উৎপন্ন করে। 2. উদ্ভিদের সাপোর্টিং টিস্যুর গাঠনিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। 3. উদ্ভিদদেহ গঠনকারী পদার্থগুলোর কার্বন কাঠামো (carbon skeleton) প্রদান করে। 4. প্রাণিদেহে হাড়ের সন্ধিস্থলে লুব্রিকেন্ট হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 5. উদ্ভিদ দেহে সঞ্চয়ী পদার্থ হিসেবে বিরাজ করে। 6. ক্যালভিন চক্র, ক্রেবস্ চক্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ চক্রে কার্বোহাইড্রেট সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। 7. বিভিন্ন প্রকার কো-এনজাইমের গাঠনিক অংশ হিসেবে থাকে। যেমন-ATP, NADP, FAD ইত্যাদি। 8. ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যামিনো অ্যাসিড বিপাকে সাহায্য করে। 9. সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, কাইটিন, পেকটিন ইত্যাদি পদার্থ কোষ প্রাচীরের প্রধান উপাদান। 10. নিউক্লিক অ্যাসিডের অন্যতম উপাদান রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজ হলো পেন্টোজ জাতীয় শর্করা (কার্বোহাইড্রেট) **কার্বোহাইড্রেট-এর শ্রেণিবিভাগ** (ক) **স্বাদের ওপর ভিত্তি করে কার্বোহাইড্রেট দু' প্রকার,** যথা- (১) **শ্যুগার:** এরা স্বাদে মিষ্টি, দানাদার এবং পানিতে দ্রবণীয়, যেমন- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, সুকরোজ ইত্যাদি; (২) **নন-শ্যুগার:** এরা স্বাদে মিষ্ট নয়, অদানাদার এবং পানিতে অদ্রবণীয়, যেমন- স্টার্চ, সেলুলোজ, গ্লাইকোজেন ইত্যাদি। (খ) **রাসায়নিক গঠন অণুর ভিত্তিতে কার্বোহাইড্রেটকে প্রধানত চার শ্রেণিতে ভাগ করা হয়।** এগুলো হলো- 1. **মনোস্যাকারাইড** (Monosaccharides); 2. **ডাইস্যাকারাইড** (Disaccharides); 3. **অলিগোস্যাকারাইড** (Oligosaccharides) এবং 4. **পলিস্যাকারাইড** (Polysaccharides)। নিম্নে রাসায়নিক গঠন অনুযায়ী কার্বোহাইড্রেটের শ্রেণিবিভাগ বর্ণনা করা হলো। #### **১। মনোস্যাকারাইড** (Monosaccharides): - গ্রিক mono = এক, saccharin = sugar বা চিনি): - যে কার্বোহাইড্রেটকে হাইড্রোলাইসিস করলে আর কোনো সরল কার্বোহাইড্রেট একক পাওয়া যায় না সেগুলোই মনোস্যাকারাইড। . মনোস্যাকারাইড অন্যান্য জটিল কার্বোহাইড্রেট তৈরির গাঠনিক ইউনিট (building unit) হিসেবে কাজ করে। - এর সাধারণ সংকেত হচ্ছে C₂H₂O₁₁। - মনোস্যাকারাইডসমূহে একটি মুক্ত অ্যালডিহাইড গ্রুপ (-CHO) বা কিটোন গ্রুপ (-CO-) এবং একাধিক হাইড্রোক্সিল (-OH) গ্রুপ থাকে। - মনোস্যাকারাইডে কার্বনের সংখ্যা ৩-১০। কার্বনের সংখ্যা অনুযায়ী মনোস্যাকারাইডকে তিন কার্বনবিশিষ্ট ট্রায়োজ (triose), চার কার্বনবিশিষ্ট টেট্রোজ (tetrose), পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট পেন্টোজ (pentose), ছয় কার্বনবিশিষ্ট হেক্সোজ (hexose), সাত কার্বনবিশিষ্ট হেপ্টোজ (Heptose) ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়। - জীবদেহের অধিকাংশ মনোস্যাকারাইড অপ্টিক্যাল আইসোমারের D সিরিজভুক্ত। **মনোস্যাকারাইডগুলোতে অ্যালডিহাইড গ্রুপ (-CHO) বা কিটোন গ্রুপ (>C=O) মুক্তভাবে থাকায় এরা বিজারক (reducing) পদার্থ হিসেবে কাজ করে।** কাজেই –CHO বা, >C=O গ্রুপ যুক্ত কার্বোহাইড্রেটকে রিডিউসিং শ্যুগার (reducing sugar ) বলা হয়। বেনেডিক্ট দ্রবণের Cu(OH)2 (কিউপ্রিক হাইড্রোক্সাইড) উক্ত শ্যুগারের -CHO বা, C = O গ্রুপের সাথে বিক্রিয়া করে কিউপ্রাস অক্সাইড-এ (Cu₂O) পরিণত হয়, যা লাল বর্ণের অধঃক্ষেপ হিসেবে জমা হয়। রিডিউসিং শ্যুগার পরীক্ষা করতে তাই এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। মনোস্যাকারাইডসমূহ সাধারণত মিষ্টি স্বাদবিশিষ্ট। **(i) ট্রায়োজ (triose, C3H6O3):** - তিন কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় ট্রায়োজ। - গ্লিসার‍্যান্ডিহাইড এবং ডাইহাইড্রোক্সি অ্যাসিটোন হলো দুটি সরল ট্রায়োজ। - এরা দ্রবণীয় মনোস্যাকারাইড. - উদ্ভিদে এরা ফসফেট এস্টার হিসেবে কাজ করে। **(ii) টেট্রোজ (tetrose, C4H8O4):** - চার কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় টেট্রোজ। - ইরিথ্রোজ (erythrose ) হলো একটি অ্যালডোজ শর্করা এবং ইরিথ্রোলোজ হলো একটি কিটোজ শর্করা। - উদ্ভিদে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ইরিথ্রোজ-4 ফসফেট হিসেবে বিরাজ করে। - ক্যালভিন চক্রে এর ভূমিকা আছে। **(iii) পেন্টোজ (pentose, C5H10O5):** - পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় পেন্টোজ। - জাইলোজ, রাইবোজ, ডিঅক্সিরাইবোজ, অ্যারাবিনোজ হলো অ্যালডোজ শর্করা এবং রাইবুলোজ, জাইলুলোজ হলো কিটোজ শর্করা। **রাইবোজ (ribose):** - এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ কার্বনবিশিষ্ট পেন্টোজ শ্যুগার। - ১৮৯১ সালে Emil Fisher এটি আবিস্কার করেন। - এটি রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিডের (RNA) একটি গঠন একক। - এর আণবিক সংকেত C5H10O5। - এতে একটি (-CHO) গ্রুপ থাকায় এদের অ্যালডোপেন্টোজ বলা হয়। - রাইবোজ শর্করার গলনাঙ্ক ৯৫° সে., গাঢ় HCI এর সাথে বিক্রিয়া করে ফারফিউরাল অ্যাসিড উৎপন্ন করে। - RNA-তে কেবলমাত্র রাইবোজ শ্যুগারই নিউক্লিয়োটাইড বা নিউক্লিয়োসাইড তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। - এটি নির্দিষ্ট পিউরিন বা পাইরিমিডিন বেস এর সাথে যুক্ত হয়ে একটি নিউক্লিয়োসাইড উৎপন্ন করে। - নিউক্লিয়োসাইডের সাথে একটি অজৈব ফসফেট যুক্ত হয়ে নিউক্লিয়োটাইডে পরিণত হয়। - কার্বন বিজারণের মাধ্যমে শর্করা তৈরি প্রক্রিয়াতেও রাইবোজ ভূমিকা পালন করে। - ATP, NAD+, NADP+, FAD, Co-A ইত্যাদি জৈব অণুর সাথেও রাইবোজ যুক্ত থাকে। - রাইবোজ বিজারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। **ডিঅক্সিরাইবোজ (deoxyribose):** - ডিঅক্সিরাইবোজ আর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ পেন্টোজ শ্যুগার। - এর আণবিক সংকেত C5H10O4। - এতে একটি অ্যালডিহাইড (-CHO) গ্রুপ (বিজারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) থাকায় একে ডিঅক্সি-অ্যালডোপেন্টোজও বলে। - এটি রাইবোজ শ্যুগার-এর মতোই, পার্থক্য শুধু এই যে, এর ২নং কার্বনে -OH গ্রুপের পরিবর্তে কেবল একটি হাইড্রোজেন (H) পরমাণু আছে। - ডিঅক্সি অর্থ হলো অক্সিজেন ছাড়া (without oxygen) - অর্থাৎ ২নং কার্বনে কোনো অক্সিজেন নেই। - এর ১নং কার্বন অবস্থানে যে কোনো একটি পিউরিন বা পাইরিমিডিন বেস (A, T, G, C) যুক্ত হলে একটি ডিঅক্সিনিউক্লিয়োসাইড সৃষ্টি হয়। - এ অবস্থায় ৫নং কার্বন অবস্থানে অজৈব ফসফেট যুক্ত হলে একটি ডিঅক্সিনিউক্লিয়োটাইড সৃষ্টি হয়। - DNA-নিউক্লিক অ্যাসিডের নিউক্লিয়োটাইড গঠনের অংশ হিসেবে বিরাজ করে ডিঅক্সিরাইবোজ শ্যুগার। - এই শ্যুগার ছাড়া DNA গঠন সম্ভব নয়। - ডিঅক্সিরাইবোজ বিজারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। **পার্থক্যের বিষয়** | | | |---|---| | অপরিহার্যতা | | | HCI-এর সাথে বিক্রিয়া | | | অক্সিজেন পরমাণু | | | -OH গ্রুপ | | | অংশগ্রহণ | | **রাইবোজ ও ডিঅক্সিরাইবোজ এর মধ্যে পার্থক্য** | | রাইবোজ | ডিঅক্সিরাইবোজ | |---|---|---| | অপরিহার্যতা | এটি হলো RNA এর অপরিহার্য উপাদান। | এটি হলো DNA এর অপরিহার্য উপাদান। | | HCI-এর সাথে বিক্রিয়া | গাঢ় HCI অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে ফারফিউরাল অ্যাসিড তৈরি করে। | গাঢ় HCI অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লেভুলিনিক অ্যাসিড তৈরি করে। | | অক্সিজেন পরমাণু | আণবিক গঠনে ৫টি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। | আণবিক গঠনে ৪টি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। | | -OH গ্রুপ | ২নং কার্বন পরমাণুর সাথে -OH গ্রুপ যুক্ত থাকে। | ২নং কার্বন পরমাণুর সাথে-OH গ্রুপ যুক্ত থাকে না। | | অংশগ্রহণ | নিউক্লিয়োটাইড ও শর্করা তৈরিতে অংশগ্রহণ করে। | ডিঅক্সিনিউক্লিয়োটাইড গঠনে অংশগ্রহণ করে। | **(iv) হেক্সোজ (hexose, CoH12O6):** - ৬ কার্বনবিশিষ্ট মনোস্যাকারাইডকে বলা হয় হেক্সোজ। - গ্লুকোজ, ম্যানোজ, গ্যালাক্টোজ হলো অ্যালডোজ শর্করা এবং ফ্রুক্টোজ হলো একটি কিটোজ শর্করা. - এরা উদ্ভিদ কোষে মুক্ত অবস্থায় অথবা অন্য জটিল কার্বোহাইড্রেট-এর অংশ হিসেবে বিরাজ করে। - সাধারণত গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজকে মুক্ত অবস্থায় সামান্য পরিমাণে পাওয়া যায়। **গ্লুকোজ (Glucose):** - গ্লুকোজ বা ডেক্সট্রোজ একটি উল্লেখযোগ্য মনোস্যাকারাইড। - উদ্ভিদ কোষে দ্রবণীয় অবস্থায় একে পাওয়া যায়। - এর আণবিক সংকেত CH₁₂O%। - এটি একটি অ্যালডোহেক্সোজ কারণ এতে অ্যালডিহাইড গ্রুপ (- CHO) আছে। - এটি একটি রিডিউসিং শ্যুগার বা বিজারণক্ষম শর্করা। - বিভিন্ন প্রকার পাকা ফল ও মধুতে প্রচুর গ্লুকোজ থাকে। - পাকা আঙ্গুরে গ্লুকোজের পরিমাণ শতকরা ১২-৩০ ভাগ। - একে অনেক সময় গ্রেইপ শ্যুগার (grape sugar) বা আঙ্গুরের শর্করা বলা হয়। - উদ্ভিদে গ্লুকোজ কখনো সঞ্চিত পদার্থ হিসেবে বিরাজ করে না। - শ্বসনের প্রাথমিক পদার্থ হলো গ্লুকোজ। **উৎপাদন ও প্রস্তুত প্রণালি:** - প্রকৃতিতে সবুজ উদ্ভিদ থেকে গ্লুকোজ উৎপাদিত হয়।