পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ PDF
Document Details
Tags
Summary
This document discusses environmental issues, focusing on climate change and its effects. It details observations of environmental changes, analyses potential causes, and outlines the impacts of climate change.
Full Transcript
# পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ ## 7. জলবায়ুর পরিবর্তন - ওপরের ছবিগুলোতে কী ঘটেছে বলো? এর কারণ কী হতে পারে তা লেখার চেষ্টা করো। - এসো জানার চেষ্টা করা যাক আবহাওয়া আর জলবায়ু শব্দ দুটোর অর্থ ঠিক কী? - আবহাওয়া হচ্ছে এমন একটা বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা যেখানে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, জল দিনে দিনে,...
# পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ ## 7. জলবায়ুর পরিবর্তন - ওপরের ছবিগুলোতে কী ঘটেছে বলো? এর কারণ কী হতে পারে তা লেখার চেষ্টা করো। - এসো জানার চেষ্টা করা যাক আবহাওয়া আর জলবায়ু শব্দ দুটোর অর্থ ঠিক কী? - আবহাওয়া হচ্ছে এমন একটা বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থা যেখানে রোদ, ঝড়, বৃষ্টি, জল দিনে দিনে, ঘন্টায় ঘন্টায় এমনকী মুহূর্তে মুহূর্তেও বদলায়। কাছাকাছি থাকা দুটি স্থানের মধ্যেও আবহাওয়া বদলাতে দেখা যায়। - জলবায়ু হচ্ছে আবহাওয়ার দীর্ঘ সময়ের (বছর) গড় অবস্থা। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জলবায়ু দেখা যায়। - তাহলে এবারে বলো তো আবহাওয়া আর জলবায়ু-র মধ্যে পার্থক্য কী? - আবহাওয়া - জলবায়ু ## পৃথিবীর ঘোমটা - ওপরের ছবিগুলো থেকে কী দেখতে পাচ্ছ? - বিভিন্ন উৎস থেকে বেরোনো ধোঁয়া কোথায় যায়? - বিভিন্ন উৎস থেকে বেরোনো এই ধোঁয়ার মধ্যে থাকে নানাধরনের গ্যাসীয় পদার্থ এবং বিভিন্ন ভাসমান কণা (Suspended particulate matter)। যেমন- কার্বন ডাইঅক্সাইড ($CO_2$), মিথেন ($CH_4$), নাইট্রাস অক্সাইড ($N_2O$), ক্লোরোফ্লু ওরোকার্বন, সালফার ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস এবং ধুলো, কার্বন ইত্যাদির কণা। এই পদার্থগুলো বায়ুমণ্ডলে গিয়ে জমা হয় আর পৃথিবীকে একটা চাদরের মতো মুড়ে রাখে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে $O_2$, $N_2$ ও এই সমস্ত গ্যাসীয় পদার্থ ছাড়াও থাকে ওজোন আর জলীয় বাষ্প। - পৃথিবীর ছেড়ে দেওয়া তাপশক্তির একটা অংশকে বায়ুমণ্ডলে ধরে রাখতে সাহায্য করে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থের এই চাদর। পৃথিবীতে প্রাণের স্পন্দন জাগিয়ে রাখার পেছনে এই গ্যাসীয় পদার্থগুলোর ($CO_2$, $CH_4$, জলীয় বাষ্প) ভূমিকা অনেকখানি। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড না থাকলে পৃথিবীপৃষ্ঠের গড় উদ্বৃতা- 18°C-এ নেমে যেত। তাহলে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটত না। কিন্তু উলটোদিকে আবার আমাদের নানারকম কাজকর্মের ফলে পরিবেশে এইসব গ্যাসীয় পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন এইসব গ্যাসীয় পদার্থগুলোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাপকে পৃথিবীতে আটকে রাখে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়। এটাই বিশ্ব উন্নায়ন (Global Warming)। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বিশ্ব উন্নায়নের এক গভীর সম্পর্ক আছে। ## জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব - নীচে দেওয়া জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাগুলো ভালো করে পড়ো। - **পৃথিবীর উদ্বুতা বৃদ্ধি** - কিছু গ্যাস পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে স্বাভাবিকভাবে থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জেনেছেন যে গত কয়েক যুগ ধরে এই গ্যাসগুলো মাত্রায় অনেকটা বেড়ে গেছে। - মানুষের বিভিন্ন কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া গ্যাসগুলোর মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড অন্যতম। 1970 থেকে 2004 সালের মধ্যে পরিবেশে এই গ্যাস মেশার বার্ষিক হার প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়ে গেছে। - বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা 2006 সাল থেকে এত মাত্রায় বেড়েছে যা গত কয়েক লক্ষ বছরে আর কখনোই এতটা বাড়েনি। - 2001 সালের গোড়ায় জানা যায়, গত 100 বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 1°C। - মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA) জানিয়েছে, 2005 সাল ছিল গত এক শতাব্দীর মধ্যে উয়তম বছর। - 1980-88 সালের মধ্যে ভারতে 18 টি তাপপ্রবাহের (Heat wave) ঘটনার কথা জানা গেছে। এর ফলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। - 2005 সালে রাজস্থানে বন্যা আর উত্তর-পূর্ব ভারতে খরা হয়। - এমনিতে রাজস্থান খুব শুকনো। কম বৃষ্টিপাতের অঞ্চল। আর উত্তর-পূর্ব ভারত বেশি বৃষ্টিপাত অঞ্চল। - 2007 সালে 4 বার মরশুমি নিম্নচাপ হয়, যা স্বাভাবিকের থেকে দ্বিগুণ। এর ফলে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালে ভয়ংকর বন্যা হয়। প্রচুর মানুষের জীবন আর জীবিকা নষ্ট হয়। একইসঙ্গে প্রায় এক লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘরবাড়ি হারায়। - গত 5 হাজার বছর ধরে মে মাস থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত কাশ্মীরের অমরনাথের গুহায় জমা বরফের উচ্চতা থাকত প্রায় 12 ফুট (3.6 মিটার)। অথচ 2007-এ জুন মাসের শেষেই অমরনাথের ওই জমা বরফ গলে 4-5 ফুট (1.2-1.5 মিটার) উচ্চতার হয়েছিল। - উত্তরাখণ্ডে 2013 সালের মেঘভাঙা বৃষ্টি থেকে বিধ্বংসী বন্যায় কয়েক হাজার মানুষ মারা গেছেন। বহু মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। বাড়িঘর আর অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। - **হিমবাহের বরফের গলন ও নদীর জলস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি** - হিমবাহকে বরফের জমাটবাঁধা নদী বললে বোধহয় খুব একটা ভুল বলা হবে না। কারণ পৃথিবীর মিষ্টিজলের বৃহত্তম ভাণ্ডার হলো এই হিমবাহগুলো। এই হিমবাহগুলোর বরফগলা জলে পুষ্ট হয় বিভিন্ন নদনদী। পৃথিবীর প্রায় 99% হিমবাহের অবস্থান উত্তর আর দক্ষিণমেরুতে। হিমালয় পর্বতমালাতেও আছে অনেকগুলো হিমবাহ। - এদের মধ্যে অন্যতম হলো গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, জেনু। গঙ্গা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র প্রভৃতি নদীর উৎস হলো হিমালয়ের বিভিন্ন হিমবাহ। হিমবাহের বরফগলা জলেই এরা পুষ্ট হয়। হিমালয় এশিয়ার নয়টি বড়ো বড়ো নদীকে পুষ্ট করে। এর ফলে প্রায় 120 কোটি লোকের জলের বন্দোবস্ত হয়। - বৃষ্টিপাত, বায়ুর উন্নতা প্রভৃতি আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদানের পরিবর্তন পৃথিবীর হিমবাহগুলোর ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। পৃথিবীর গড় উয়তা বেড়ে গেলে হিমবাহগুলোর বরফ বেশি মাত্রায় গলতে আরম্ভ করবে। - গঙ্গা নদীর উৎস গঙ্গোত্রী হিমবাহ প্রতি বছর একটু একটু করে ছোটো হয়ে আসছে। - উত্তরমেরু সংলগ্ন আলাস্কা উপকূলে যে বরফের স্তর রয়েছে, তা গত 30 বছরে 40% কমে গিয়ে পাতলা হয়ে গেছে। - হিমবাহগুলো গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলতল বেড়ে যেতে পারে। - 1993 থেকে 2005 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতল প্রতি বছরে গড়ে বেড়েছে 3 মিমি (0.1 ইঞ্চি)। - পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের হিমবাহগুলো গলে যাওয়ার প্রভাব পড়বে সমুদ্রের জলতলের ওপর। এই বিষয়ে একটি গবেষণা বলছে যে 2100 সালের মধ্যে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা প্রায় 70 সেমি বেড়ে যেতে পারে। - সমুদ্রের জলতল বেড়ে গেলে উপকূল অঞ্চলে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেবে। উপকূল অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে পড়বে। প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষতিরও সম্ভাবনা দেখা দেবে। সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সারা পৃথিবীতে সমুদ্রের উপকূলে বাস করা অসংখ্য মানুষ। - ভারত ও বাংলাদেশের অন্তর্গত সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলও আজ এই বিপদের সম্মুখীন। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি বাঘের আবাস এই সুন্দরবন। আর এই অঞ্চলে বাস করে প্রায় চল্লিশ লক্ষ মানুষ। এদের সকলেরই অস্তিত্ব আজ সংকটের মুখে। - উন্নায়নের ফলে হিমবাহ পুরো গলে গেলে ভবিষ্যতে ওই হিমবাহের জলে পুষ্ট নদ-নদীর জল প্রথমে বেড়ে যাওয়ার ও পরে কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। প্রথমে বন্যা আর পরে দেখা দিতে পারে তীব্র জলসংকট। - হিমবাহ প্রায় ৪০ শতাংশ সূর্যরশ্মি প্রতিফলিত করে আর প্রায় 20 শতাংশ শোষণ করে। হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে গেলে ওই ৪০ শতাংশ সূর্যরশ্মি ভূভাগ দ্বারা শোষিত হয়ে পৃথিবীর উন্নতাকে আরও বাড়িয়ে দেবে। ## প্রবাল দ্বীপ প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস - প্রবাল বা কোরাল হলো একধরনের সামুদ্রিক অমেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা নিডারিয়া পর্বভুক্ত। এরা একসঙ্গে দল বেঁধে কলোনি তৈরি করে বাস করে। প্রবালরা নিজেদের দেহের বাইরে ক্যালশিয়াম কার্বনেট-এর একটা বহিঃকঙ্কাল তৈরি করে। - এই বহিঃকঙ্কাল এদের দেহকে রক্ষা করে। মৃত প্রবালের সাদা বা রঙিন কঙ্কালের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হয়। শৌখিন দ্রব্য ও গয়না হিসেবে এদের কদর পৃথিবীব্যাপী। - একসঙ্গে বাস করা অনেক প্রবালের দেহের বাইরে থাকা ক্যালশিয়াম কার্বনেটের বহিঃকঙ্কাল একটা শক্ত প্রাচীরের মতো গঠন তৈরি করে। এটাই প্রবাল প্রাচীর। - পৃথিবীর সমুদ্রতলের মাত্র 0.1% দখল করে থাকা প্রবাল প্রাচীর প্রায় 25% সামুদ্রিক প্রজাতির আশ্রয়স্থল। - মাছ, মোলাস্কা, ইকাইনোডারমাটা, স্পঞ্জ, ক্রাস্টেশিয়া, ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের প্রাণী প্রবাল প্রাচীরে বাস করে। জীববৈচিত্র্যের নিরিখে প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্ব অপরিসীম। - সমুদ্রের জলের উয়তার সামান্যতম তারতম্য প্রবাল প্রাচীরের স্থায়িত্বের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করে। - আর প্রবাল দ্বীপ কি জানো? মৃত প্রবাল আর অন্যান্য জৈব বস্তুর সাহায্যে সাধারণত প্রবাল প্রাচীরের অংশ হিসাবে প্রবাল দ্বীপ তৈরি হয়। ক্রান্তীয় আর উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে সাধারণত প্রবাল দ্বীপ দেখা যায়। প্রবাল দ্বীপগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কয়েক মিটার উঁচু হয়ে জেগে থাকে। উপকূলীয় নারকেল গাছের সারি আর সাদা প্রবালের বালি দিয়ে ঘেরা থাকে অগভীর সমুদ্রের প্রবাল দ্বীপ। - বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর প্রবাল দ্বীপ ও প্রবাল প্রাচীরগুলো বিপন্ন হয়ে পড়েছে। 1988 সালে পৃথিবীর প্রায় 16% প্রবাল সম্পদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। - বিশ্ব উয়ায়নের ফলে ভারত মহাসাগরে জলের উয়তা বেড়ে গেছে। এই অঞ্চলের প্রবাল প্রাচীরগুলোতে বাস করে অনেক ধরনের মাছ। জলের উন্নতা বৃদ্ধির ফলে এই প্রবাল প্রাচীরগুলো আর ওইসব মাছেদের আদর্শ বাসস্থান থাকছে না। লোভী মানুষও প্রবাল চুরির নেশায় এদের ধ্বংসে মেতেছে। - তোমরা তো খবরের কাগজ বা ম্যাগাজিন পড়ো। দেখো বিশ্ব উন্নায়ন আর জলবায়ুর পরিবর্তন সংক্রান্ত কী কী খবর পাও। এই বিষয়ে তোমরা যা যা পড়লে নীচের সারণিতে ছোটো করে লেখো। - বিষয় - খবর - হিমবাহের গলন - সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি - জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ## জীববৈচিত্র্য কী? - রেহানা সেদিন স্কুলে এসে বলল - জানিস কালকে না আমাদের বাড়ির পাশের বকুল গাছে একটা বেনে-বউ এসে বসেছিল। শ্যামল বলল - বেনে-বউ! সে গাছে উঠল কী করে? - রেহানা হোহো করে হেসে বলে উঠল- দূর বোকা! বেনে-বউ তো একটা পাখি, হলুদ রঙের, মাথাটা কালো। - শুভজিৎ বলল – ওহ! ওই পাখিটাকে তো হলুদ পাখিও বলে। - পরশু দিন রাতে অপূর্বদের বাড়ির ছাদে একটা ভাম এসেছিল। তার লাফালাফিতে ধুপধাপ আওয়াজ হচ্ছিল। আওয়াজের চোটে ওদের ঘুম ভেঙে গেল। - স্কুলের কাছে বড়ো পুকুরটার ধারে ইমতিয়াজ একটা জলের সাপ দেখছিল। সেকথা ইমতিয়াজ তার বন্ধুদের বলল। সাপটার গায়ে হলুদ রঙের উপর চৌকো চৌকো কালো ছোপ। রমেশ কাকু মাছ ধরছিলেন, বললেন-ঢোঁড়া সাপ, ওটার কিন্তু বিষ নেই। রেহানাদের স্কুলের কাছেই আম, জাম আর অন্য অনেক গাছের একটা ছোটোখাটো বাগান প্রায় জঙ্গলের চেহারা নিয়েছে। বন্ধুরা ঠিক করল যে এরপর থেকে তারা ওই বাগানের গাছগুলোর প্রত্যেকের নাম জানার চেষ্টা করবে। আর অন্যান্য পশুপাখিদেরও চেনার চেষ্টা করবে। - তোমার বাড়ি বা স্কুলের আশেপাশে যেসব জীবেরা থাকে তাদের একটা তালিকা তৈরি করো। এর বাইরেও কোনো জায়গায় কোনো জীবকে দেখলে তাদেরও এই তালিকায় যুক্ত করো। - বাসস্থানের প্রকৃতি - কী কী উদ্ভিদ দেখেছ (বীরুৎ/গুল্ম/বৃক্ষ) - কী কী প্রাণী দেখেছ (মেরুদণ্ডী/অমেরুদণ্ডী) - জলা - ভিজে আল - - - ## জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল (Biodiversity Hot Spot) - পৃথিবীতে এরকম বহু অঞ্চল আছে যেখানে খুব বেশি সংখ্যক প্রজাতির জীব পাওয়া যায়। আবার সেইসব অঞ্চলে এমন সব প্রজাতির জীবও পাওয়া যায়, যা অন্য আর কোথাও পাওয়া যায় না। সেরকম অঞ্চলকে বলা হয় জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ইংরাজিতে একে বলে বায়োডাইভারসিটি হটস্পট (Biodiversity Hot Spot)। - পৃথিবীতে এখনও পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বায়োডাইভারসিটি হটস্পট খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর বায়োডাইভারসিটি হটস্পটগুলো ওপরের মানচিত্রে লাল রঙে দেখানো হলো। তার মধ্যে চারটি বায়োডাইভারসিটি হটস্পট হলো : - পূর্ব হিমালয় (Eastern Himalayas): সিকিম, দার্জিলিং, ডুয়ার্স, তরাই অঞ্চল। - পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এবং শ্রীলঙ্কা (Western Ghat and Srilanka): ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূল বরাবর ঘন অরণ্যে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল। - ইন্দো-বার্মা (Indo-Burma) : উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যসমূহ (যেমন-মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ)। - সুন্দাল্যান্ড (Sundaland): ভারতের আন্দামান-নিকোবর অঞ্চল। ## জীববৈচিত্র্য ও ভারত - আমাদের ভারতের জীববৈচিত্রাও এত বেশি যে ভারতকে একটি অতি বৈচিত্রোর দেশ বা মেগাডাইভারসিটি আমিন (Megadiversity Nation) বলাহয়। পৃথিবীতে এরকম আরও কয়েকটি দেশ আছে। তাদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো-ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মাদাগাস্কার, ইকুয়েডর ইত্যাদি। - আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যের সম্ভার বিপুল। পৃথিবীর সতেরোটি অতি জীববৈচিত্র্য-সম্পন্ন (Mega Biodiversity) দেশের মধ্যে ভারত অন্যতম। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে প্রায় 91,212 প্রজাতির বন্য প্রাণী ও পোকামাকড়, শামুক, কেঁচো ইত্যাদির খোঁজ পাওয়া গেছে। - ভারতীয় ভূখণ্ডের পরিমাপ প্রায় 33 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে প্রায় 19.7% বা প্রায় অংশ এলাকা অরণ্যে ঢাকা। - সারা বিশ্বের উদ্ভিদজগতের সাত শতাংশ (7%) আর প্রাণীজগতের সাড়ে ছয় শতাংশের (6.5%) বাসভূমি এই ভারতবর্ষ। এছাড়াও আছে কয়েক হাজার জাতের দেশি ধান ও অন্যান্য ফসল, কয়েকশো জাতের দেশি গবাদিপশু। এরা সবাই আমাদের দেশের জীববৈচিত্র্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ## জীববৈচিত্র্য থেকে আমরা কী পাই? - এই যে এতসব উদ্ভিদ আর প্রাণী – এদের কাছ থেকে কি আমরা কোনো উপকার পাই? এসো তো লিখে ফেলার চেষ্টা করি। এই তালিকায় তোমরা আরও অন্যান্য উদ্ভিদ আর প্রাণীদের নাম যোগ করতে পারো। - উদ্ভিদের নাম - উপকার - ধান - বট - নিম - প্রাণীর নাম - উপকার - তেচোখা মাছ - সাপ - বাদুড় ## জীববৈচিত্র্যের অন্যান্য গুরুত্ব - জীববৈচিত্র্য অর্থাৎ বিচিত্ররকম জীবের এই সম্ভার আমাদের সবসময় নানাভাবে সাহায্য করছে। এসো এবারে দেখে নেওয়া যাক, জীববৈচিত্র্য কীভাবে আমাদের নানা কাজে লাগে। জীববৈচিত্র্যের বিভিন্ন গুরুত্বের কথা পরের দুটো পাতায় দেখানো হয়েছে। জীববৈচিত্র্যের আরও কিছু গুরুত্ব তোমরাও যোগ করতে পারো। - খালের উৎস - খাদ্যশদের বিচিত্র সম্ভার - কামিজ উৎপাদন বাড়াতে সহায়্যা করে - - জলবায়ুর সিতাবস্থা - পরিবেশের বিভিন্ন মৌলের -মাটিতে উপস্থিতে বিভিন্ন অনুজীব ও অন্যান্য মুত জীবের দেহ বা বজায় রাখতে সহায়তা করে - - - মুুক্তিকা সংরক্ষণ - ঘাসজাতীয় উদ্ভিনর মাটিরআনেরক্ষা - মূলযুক্ত উল্লিন মাটির জলধারণ ক্ষমতা - ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া মাটিত্রে মিলগুলোকে অবার ফিরে পায়। - ওষুধের উৎস - সিঙ্কোনা- কুইনাইন - সর্পগন্ধা- রেসারপিন - - - - - কাঠ - জ্বালানি রূপে - কাগজ তৈরিতে - অন্যান্য শিল্প - রেশম শিল্প - রেশম কীট তুঁত গাছে বাসা বাঁধে - লাক্ষা-শিল্প - - বিনোদন এবং ভ্রমণ - পশুপাখিদের তাদের স্বাভাবিক বাসস্থানে দেখার আনন্দ। - প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করার জন্য জঙ্গলে ভ্রমণ। - - বিভিন্ন জীবদের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা - খাদ্য-খাদক সম্পর্ক - - শিল্প ও সাহিত্যে প্রভাব - কোনো কোনো গাছ ও পশু পাখি অরণ্যে বসবাসকারী আদিবাসীদের উপাস্য। - সাহিত্য রচনার উপাদান। - ## পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য হ্রাসের কারণ - এবার এসো আমরা জানার চেষ্টা করি আমাদের পৃথিবী গ্রহে জীববৈচিত্র্যের সংখ্যা হ্রাসের পিছনে কী কী কারণ আছে। - **হারিয়ে যাচ্ছে বাসস্থান** - প্রকৃতি থেকে জীবদের হারিয়ে যাওয়ার পেছনে একটা বড়ো কারণ হলো তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া। - আমাদের ভোগবিলাসের সামগ্রী তৈরির প্রয়োজনে (যেমন কাঠের শৌখিন আসবাবপত্র), কখনও বা চাষের জমি বাড়ানোর জন্য, আবার কখনও বা থাকার জায়গা বাড়ানোর জন্য জঙ্গলের গাছ কেটে ফেলা হয়। এমনকি পুরো জঙ্গলও সাফ করে ফেলা হয়। - কারণ লেখার চেষ্টা করো। - সাইবেরিয়ার বাঘের (Siberian Tiger) অস্তিত্ব সংকটের অন্যতম কারণ হলো তাদের বাসস্থান ধ্বংস হয়ে যাওয়া। - জীবের থাকার জায়গা নানা কারণে ধ্বংস হতে পারে। চট করে কয়েকটা জীবের থাকার জায়গা ধ্বংস হওয়ার কারণ - কাঠের জন্য জঙ্গলের গাছ কেটে ফেলা। - - - - কাঠের জোগানের জন্য সুন্দরবনের পুরো জঙ্গল একদিন উধাও হয়ে গেল : - **অবৈধ শিকার/ চোরাশিকার** - চোরাশিকারিদের লোভ অনেক প্রাণীর অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে কিছু কিছু বন্য জন্তুর হাড়, চামড়া ইত্যাদি ওষুধ তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও দাঁত, চামড়া বা শিং এসবের লোভেও বিভিন্ন প্রাণী চোরাশিকারিদের হাতে প্রাণ হারায়। - এসো তো খুঁজে দেখার চেষ্টা করি কোন কোন প্রাণী এইসব জিনিসের জন্য চোরাশিকারিদের লোভের বলি হয়। - প্রাণীদের হত্যা করে পাওয়া জিনিসের নাম - কী কাজে ব্যবহার করা হয় - প্রাণী হত্যা না করেও কীভাবে ঐ ধরনের পাওয়া সম্ভব - দাঁত - চামড়া - শিং - লোম বা ফার - মৃগনাভি - **পরিবেশে নতুন জীবের আগমন** - বাইরে থেকে আসা নতুন প্রাণী অনেক সময় স্থানীয় প্রাণীদের সংখ্যা হ্রাসের কারণ হয়। যেমন বিংশ শতাব্দীতে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বাইরে থেকে কুকুর, শুয়োর আর ছাগল নিয়ে আসা হয়েছিল। এই ছাগলরা কচ্ছপের খাবার, যেমন ঘাস, পাতা খেয়ে নিত। আবার কুকুর, শুয়োরেরা খেত কচ্ছপের ডিম। ফলে একসময় দেখা গেল কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেল। গ্রামবাংলার জলাভূমিতে আফ্রিকা থেকে তেলাপিয়া আর বিশাল মাগুর জাতের মাছ এনে ছেড়ে দেওয়ার ফলে অস্তিত্ব বিপ