সালোকসংশ্লেষ Chapter PDF
Document Details
Uploaded by ImpressiveEuler6491
Arambagh Girls' College
Tags
Summary
This document provides an introduction to photosynthesis, including its definition, types, chemical equations, and the role of leaves. It also discusses various related concepts in plant biochemistry.
Full Transcript
**CHAPTER: সালোকসংশ্লেষ** **1. স্বভোজী পুষ্টি বলতে কি বোঝো? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরন সহ সংজ্ঞা লেখো?** যে পুষ্টি পদ্ধতিতে কোনো জীব সূর্যালোকের ফোটন কণার বা অন্য কোনো উৎসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, কতকগুলি প্রাকৃতিক উপাদান যেমন জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদির সাহায্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে খাদ্য সংশ্লেষ করে...
**CHAPTER: সালোকসংশ্লেষ** **1. স্বভোজী পুষ্টি বলতে কি বোঝো? প্রত্যেক প্রকারের উদাহরন সহ সংজ্ঞা লেখো?** যে পুষ্টি পদ্ধতিতে কোনো জীব সূর্যালোকের ফোটন কণার বা অন্য কোনো উৎসের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, কতকগুলি প্রাকৃতিক উপাদান যেমন জল, কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদির সাহায্যে বিক্রিয়া ঘটিয়ে খাদ্য সংশ্লেষ করে, তাকে স্বভোজী পুষ্টি বলে। উদাহরণ--- প্রধানত ক্লোরোফিলযুক্ত উদ্ভিদ এবং কিছু ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি। **[স্বভোজী পুষ্টির প্রকারভেদ:]** স্বভোজী পুষ্টি প্রধানত দুই প্রকারের হয়--- আলোকস্বভোজী পুষ্টি এবং রাসায়নিকস্বভোজী পুষ্টি। **\[A\] আলোকস্বভোজী পুষ্টি (Photoautotrophic nutrition):** যে স্বভোজী পুষ্টি পদ্ধতিতে কোনো জীব সূর্যালোকের সাহায্যে খাদ্য সংশ্লেষ করে, তাকে আলোকস্বভোজী পুষ্টি বলে। উদাহরণ--- ক্লোরোফিলযুক্ত উদ্ভিদ এবং কিছু ব্যাকটেরিওক্লোরোফিলযুক্ত ব্যাকটেরিয়ার পুষ্টি। **\[B\] রাসায়নিকস্বভোজী পুষ্টি (Chemoauto-trophic nutrition):** যে স্বভোজী পুষ্টি পদ্ধতিতে কোনো জীব কিছু অজৈব পদার্থের জারণের ফলে উদ্ভূত শক্তির সাহায্যে খাদ্য সংশ্লেষ করে, তাকে রাসায়নিকস্বভোজী পুষ্টি বলে।এই পদ্ধতিতে সূর্যালোক ছাড়াই খাদ্য সংশ্লেষিত হয়। উদাহরণ--- কিছু ক্লোরোফিলবিহীন ব্যাকটেরিয়া, যেমন---বিজিয়াটোয়া (*Beggiatoa*), নাইট্রোসোমোনাস (*Nitrosomonas*), নাইট্রোব্যাকটর (*Nitrobactor*) ইত্যাদির পুষ্টি। **2. পরভোজী পুষ্টি বলতে কি বোঝো? উদাহরন দাও।** যে পুষ্টি পদ্ধতিতে কোনো জীব প্রাকৃতিক উপাদানগুলির (CO~2~, H~2~O, সূর্যালোক) সাহায্যে নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ করতে পারে না এবং খাদ্য সংগ্রহের জন্য স্বভোজী জীবদের ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল, তাকে পরভোজী পুষ্টি বলে। উদাহরণ--- স্বভোজী জীব বাদে অন্য যে-কোনো জীব, যেমন--- পশু, পাখি, মানুষ, বিভিন্ন প্রকার ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ইত্যাদির পুষ্টি। **3. সালোকসংশ্লেষ-এর সংজ্ঞা, রাসায়নিক সমীকরণ ও স্থান লেখো।** **সংজ্ঞা:** যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় সজীব কোশে ক্লোরোফিলের সহায়তায় ও সূর্যালোকের উপস্থিতিতে পরিবেশ থেকে গৃহীত জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইডের রাসায়নিক বিক্রিয়ার দ্বারা শর্করাজাতীয় খাদ্য সংশ্লেষিত হয় এবং উপজাত পদার্থ হিসেবে জল ও গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন উৎপন্ন হয়, তাকে সালোকসংশ্লেষ বলে। **রাসায়নিক সমীকরণ:** সাধারণভাবে সালোকসংশ্লেষ বিক্রিয়ার সমীকরণটি হল--- https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXeVOVzNhqsm2fW1BwOOvFO2H9bntYz4BTn74aMGk2E4RNEGd3RX21-qnVmGM71dUjtz9RG2UjI6wVSWyioV-f1dXPknUYwfzsB4P8WukZNk5QIl1ZVkFhW9msJaubyqT70yAEPpVsjaAn9E1jkTbau4Gdhi?key=wDI4rgz\_-4TvWn96W\_6ejg **সালোকসংশ্লেষের স্থান:** সবুজ পাতাই উন্নত শ্রেণির উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গ। পাতার মেসোফিল কলাই সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার প্রধান স্থান ; তবে যে-কোনো ক্লোরোফিলযুক্ত সবুজ কোশেই সালোকসংশ্লেষ সম্ভব, যেমন--- লাউ, কুমড়োর কচি কাণ্ড, পাতার ঊর্ধ্বত্বক ও নিম্নত্বকের অন্তর্বর্তী স্থানে, ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত যে প্যারেনকাইমা কলা থাকে, তাকে মেসোফিল কলা বলে। পাতায় এই কলা প্যালিসেড প্যারেনকাইমা ও স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা দিয়ে গঠিত। অপরপক্ষে সমাঙ্কপৃষ্ঠ পাতায় কেবল স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোশ ঘনসন্নিবিষ্টভাবে বর্তমান। প্যালিসেড প্যারেনকাইমা কোনো ক্লোরোপ্লাস্টের সংখ্যা বেশি হওয়ায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া অধিকমাত্রায় সম্পন্ন হয়। **4. সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ থেকে কি জানা যায়?** সালোকসংশ্লেষের রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায় যে--- 1. সালোকসংশ্লেষে 6 অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড, 12 অণু জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 1 অণু গ্লুকোজ, 6 অণু অক্সিজেন ও 6 অণু জল উৎপন্ন করে। সুতরাং, এটি একটি উপচিতিমূলক বিপাক প্রক্রিয়া। 2. এই প্রক্রিয়ায় গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইডের সমপরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। 3. এই প্রক্রিয়াটি সূর্যালোক ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে ঘটে অর্থাৎ, এটি আলোকরাসায়নিক বিক্রিয়া। 4. এই প্রক্রিয়ায় শোষিত জল জারিত হয়ে অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং গৃহীত কার্বন ডাইঅক্সাইড বিজারিত হয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। 5. এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন জলের পরিমাণ শোষিত জলের অর্ধেক। ![](media/image3.jpeg)**5. পাতা হল সালোকসংশ্লেষের আদর্শ স্থান--- ব্যাখ্যা কর।** পাতাকে সালোকসংশ্লেষের আদর্শ স্থান বলার কারণগুলি হল--- 1. পত্রফলক চ্যাপটা ও প্রসারিত হওয়ায় পৃষ্ঠতলের সাহায্যে অধিক পরিমাণে সূর্যালোক ও CO~2~ গ্যাস শোষণে সক্ষম। 2. পাতার মেসোফিল কলার কোশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ক্লোরোপ্লাস্টে সালোকসংশ্লেষের প্রয়োজনীয় ক্লোরোফিল রঙ্গক বৰ্তমান ৷ 3. পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পত্রবিন্যাসের কারণে অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় পাতা বেশি পরিমাণ সূর্যালোক পায় ৷ 4. পাতায় অসংখ্য পত্ররন্ধ্রের উপস্থিতির কারণে পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে সহজেই পরিবেশের সঙ্গে গ্যাসীয় আদানপ্রদান সম্ভব । 5. পাতার শিরা-উপশিরায় জাইলেম ও ফ্লোয়েম কলা উপস্থিত থাকার কারণে সালোকসংশ্লেষ বিক্রিয়ার জন্য জল সরবরাহ অব্যাহত থাকে এবং উৎপন্ন খাদ্য বিভিন্ন কলাকোশে দ্রুত পৌঁছাতে পারে। **6. সালোকসংশ্লেষ একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া--- ব্যাখ্যা করো।** Ans- সালোকসংশ্লেষ একটি জটিল জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া, এই বিক্রিয়ায় জল থেকে হাইড্রোজেন অপসারিত হয়ে O~2~ উৎপন্ন হয় অর্থাৎ জল জারিত হয় এবং জল থেকে নির্গত হাইড্রোজেন CO~2~ -কে বিজারিত করে সরল শর্করা গ্লুকোজ গঠন করে। এইজন্য সালোকসংশ্লেষকে জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া বলা হয়৷ ![https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXeVOVzNhqsm2fW1BwOOvFO2H9bntYz4BTn74aMGk2E4RNEGd3RX21-qnVmGM71dUjtz9RG2UjI6wVSWyioV-f1dXPknUYwfzsB4P8WukZNk5QIl1ZVkFhW9msJaubyqT70yAEPpVsjaAn9E1jkTbau4Gdhi?key=wDI4rgz\_-4TvWn96W\_6ejg](media/image3.jpeg) **7. সালোকসংশ্লেষ একপ্রকার উপচিতি বিপাক--- ব্যাখ্যা করো।** যে বিপাক প্রক্রিয়ায় সরল যৌগ থেকে জটিল যৌগ সৃষ্টি হওয়ায় জীবদেহের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায় তাকে উপচিতি বিপাক বলে। সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় সরল যৌগ কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলের বিক্রিয়ায় জটিল যৌগ গ্লুকোজ গঠিত হওয়ায় উদ্ভিদের শুষ্ক ওজন বৃদ্ধি পায়। সালোকসংশ্লেষে 6 অণু কার্বন ডাইঅক্সাইড, 12 অণু জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 1 অণু গ্লুকোজ, 6 অণু অক্সিজেন ও 6 অণু জল উৎপন্ন করে। সুতরাং, এটি একটি উপচিতিমূলক বিপাক প্রক্রিয়া। **8. অক্সিজেনিক ও অ্যানক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ বলতে কি বোঝো?** **অক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ:** যে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় ক্লোরোফিলের সক্রিয়তায় সৌরশক্তিকে ATP-তে আবদ্ধ করে পরিবেশের CO~2~ ও H~2~O-কে কাজে লাগিয়ে শর্করা তৈরি হয় এবং H~2~O ইলেকট্রন দাতা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় O~2~ উৎপন্ন হয়, তাকে অক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ বলে। উদাহরণ--- সবুজ শৈবাল, সবুজ উদ্ভিদ, নীলাভ-সবুজ শৈবাল এবং ইউগ্লিনা ও ক্রাইস্যামিবা হল অক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষকারী জীব। অক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষে জল ইলেকট্রন দাতারূপে কাজ করে, ফলে এক্ষেত্রে হাইড্রোলাইসিস বিক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। **অ্যানক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ:** যে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় কিছু বিশেষ ব্যাকটেরিয়া, তাদের কোশের রঙ্গক অণুর (ব্যাকটেরিওক্লোরোফিল) সাহায্যে সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কার্বন আত্তীকরণ ঘটায় এবং জলের পরিবর্তে অন্য অজৈব বা জৈব যৌগ ইলেকট্রন দাতা হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় O~2~ উৎপন্ন হয় না, তাকে অ্যানক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ বলে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়া অবায়ুজীবী (anaerobe) আলোকস্বভোজী প্রকৃতির। উদাহরণ--- অ্যানক্সিজেনিক সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে বেগুনি-সালফার ব্যাকটেরিয়ায় জলের পরিবর্তে ইলেকট্রন দাতা হিসেবে H~2~S (হাইড্রোজেন সালফাইড) ব্যবহৃত হয় এবং O~2~-এর পরিবর্তে সালফার বা গন্ধক উপজাত বস্তুরূপে উৎপন্ন হয়। **9. সালোকসংশ্লেষকারী রঙ্গক পদার্থ বলতে কি বোঝ? এর প্রকারভেদ করে প্রত্যেক প্রকারের বর্ণনা দাও।** জীবকোশে অবস্থিত যে সকল রঙ্গক পদার্থ সূর্যালোক শোষণে সক্ষম এবং সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৌরশক্তিকে রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাদেরকে সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গক পদার্থ বলে । **প্রকারভেদ:** দ্রাব্যতার ওপর নির্ভর করে সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গক দুইপ্রকার হয়--- জৈব দ্রাবকে দ্রাব্য (ক্লোরোফিল, ক্যারোটিন, জ্যান্থোফিল) এবং জলে দ্রাব্য (ফাইকোবিলিন)। **10. ক্লোরোসিস কী?** ক্লোরোফিল সংশ্লেষের জন্য ম্যাগনেশিয়াম, তামা, লোহা ও ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন। এদের মধ্যে যে-কোনো একটির অভাবে ক্লোরোফিল সংশ্লেষ বন্ধ হয়, ফলে পাতা হলদে বর্ণ ধারণ করে। একে ক্লোরোসিস বলে। **11. সালোকসংশ্লেষীয় সক্রিয় বিকিরণ (Photo- synthetic Active Radiation) বলতে কি বোঝ?** পৃথিবীপৃষ্ঠে আপতিত Electromagnetic Radiation- এর দৃশ্যমান আলোক অংশ অর্থাৎ 390 nm থেকে 760 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য সালোকসংশ্লেষের জন্য প্রয়োজন এবং এই আলোক রশ্মি সমগ্র সালোকসংশ্লেষকারী জীব ব্যবহার করে। সেইজন্য এই তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোককে সালোকসংশ্লেষীয় সক্রিয় বিকিরণ বলা হয়। **12. সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গকের শোষণবর্ণালি এবং কার্যবর্ণালি \[Absorption spectrum and action spectrum of photosynthetic pigments\] বলতে কি বোঝ ?** **শোষণবর্ণালি:** কোনো নির্দিষ্ট সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গক কণা দ্বারা দৃশ্যমান আলোকবর্ণালির যে তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষিত হয় এবং সালোকসংশ্লেষে ব্যবহৃত হয়, তাকে ওই রঙ্গকের শোষণবর্ণালি বলে। ক্লোরোফিল a দ্বারা দৃশ্যমান আলোর 660 nm ও 435 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের এবং ক্লোরোফিল b দ্বারা দৃশ্যমান আলোর 642 nm ও 453 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি শোষিত হয়, অর্থাৎ ক্লোরোফিল a এবং b- এর শোষণমাত্রা লাল এবং বেগুনি-নীল বর্ণের আলোতে সবচেয়ে বেশি। **কার্যবর্ণালি:** দৃশ্যমান আলোক বর্ণালির (390nm -786nm), লাল (650 nm-700nm) এবং বেগুনি-নীল (400nm-470nm) আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্যে সালোকসংশ্লেষ সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। সেই জন্য আলোক বর্ণালির এই অংশকে কার্যবর্ণালি বলে। বিভিন্ন বর্ণালিতে সালোকসংশ্লেষ হারের (0~2~) মুক্তির মাধ্যমে) তুলনামূলক পার্থক্য লেখচিত্র আকারে প্রকাশ করলে দেখা যায় লাল বর্ণের (650 nm-700nm) ও বেগুনি-নীল (400nm-470nm) বর্ণের আলোতেই সালোকসংশ্লেষের হার সব থেকে বেশি এবং উক্ত বর্ণালি Chl a এবং Chl b এর শোষণ বর্ণালির সদৃশ। এর থেকে বোঝা যায়, Chl a এবং Chl b সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে। **13. কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্ট বলতে কি বোঝ ?** সালোকসংশ্লেষে এক অণু অক্সিজেন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় ফোটন কণার সংখ্যাকে কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্ট বলে। কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্টকে 1/ø দ্বারা প্রকাশ করা হয়। Emerson -এর মতে সালোকসংশ্লেষে এক অণু অক্সিজেনের উৎপাদনের জন্য ন্যূনতম ৪টি বা 10 টি ফোটন বা কোয়ান্টার প্রয়োজন অর্থাৎ কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্ট ৪ । **14. কোয়ান্টাম ইল্ড বলতে কি বোঝ ?** সালোকসংশ্লেষে প্রতি ফোটন কণা বা কোয়ান্টাম শোষণে যে পরিমাণ অক্সিজেন উৎপন্ন হয় তাকে কোয়ান্টাম ইল্ড বলে। কোয়ান্টাম ইল্ড ø দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ, ![](media/image5.png) সালোকসংশ্লেষের কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্ট ৪ হলে, ø = 1/8 এবং কোয়ান্টাম রিকোয়ারমেন্ট 10 হলে, ø = 0.1 । অর্থাৎ, সালোকসংশ্লেষে কোয়ান্টাম ইল্ড 0.1-0.125 । **15. লোহিত চ্যুতি এবং এমারসনের প্রভাব \[Red drop and Emerson effect\] বলতে কি বোঝ ?** **লোহিত চ্যুতি:** বিজ্ঞানী Emerson এবং Lewis (1943), *Chlorella* *sp*. নামক সবুজ শৈবালে মনোক্রোমাটিক (নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো) আলো ব্যবহার করে লক্ষ করেন যে, 680nm-এর বেশি তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোয় সালোকসংশ্লেষের হারের অবনতি ঘটে। উচ্চ তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত লাল আলোর প্রভাবে সালোকসংশ্লেষের হারের এই অবনতিকে লোহিত চ্যুতি বলে ৷ **এমারসনের প্রভাব:** Emerson এবং Chalmers (1957) একটি পরীক্ষায় পর্যবেক্ষণ করেন যে, অতি লাল আলোর (680nm -- 700nm) পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত কমলা-লাল বর্ণের আলোয় (650nm) সালোকসংশ্লেষের কোয়ান্টাম ইল্ড বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়াও তাঁরা লক্ষ করেন উপরিউক্ত দুটি বর্ণের আলো একসাথে প্রয়োগ করলে সালোকসংশ্লেষের কোয়ান্টাম ইল্ড, ওই দুটি পৃথক আলোর কোয়ান্টাম ইল্ডের যোগফলের থেকে বেশি হয়। সালোকসংশ্লেষীয় বর্ণালির দুটি পৃথক তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রয়োগে সালোকসংশ্লেষের হার বৃদ্ধির ঘটনাকে এমারসনের প্রভাব বলে। এর গাণিতিক রূপ হল--- https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXfVWE\_7XnySogs6clICKfmrQmXtytxiZGUPfinfrcdEGen\_-pBzB8LdJW3oQaCCsaBZYLRlAAgsj4SsS803NOxHL3gdZSEBnsin-9GGe0vyhfiu\_rWR75jSM-z45wxk0DXKrjhw3AUjZ4zF-0MxDaxtzcs?key=LwG\_sYlxDscoJCbdUqo\_fQ লোহিত চ্যুতি এবং এমারসনের প্রভাব সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় দুটি রঙ্গকতন্ত্রের উপস্থিতি প্রমাণ করে। **16. সালোকসংশ্লেষের রঙ্গকতন্ত্র \[Pigment system of photosynthesis\] বলতে কি বোঝ ? এর গঠন সংক্ষেপে লেখো ?** **[রঙ্গকতন্ত্র বা ফোটোসিস্টেম:]** ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েড পর্দায় প্রধান ও সাহায্যকারী রঙ্গক পদার্থ, প্রোটিন অণু এবং ইলেকট্রন বাহক সহযোগে গঠিত যে জটিল একক সালোকসংশ্লেষের আলোক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে, তাকে রঙ্গকতন্ত্র বা ফোটোসিস্টেম বলে। **[গঠন:]** সালোকসংশ্লেষে দুটি রঙ্গকতন্ত্র দেখা যায়, যথা---ফোটোসিস্টেম I এবং ফোটোসিস্টেম II। প্রতিটি ফোটোসিস্টেম একটি **বিক্রিয়াকেন্দ্র** (reaction centre) এবং **লাইট হারভেস্টিং কমপ্লেক্স** (LHC) নিয়ে গঠিত। লাইট হারভেস্টিং কমপ্লেক্স (LHC) আবার **কোর কমপ্লেক্স, অ্যান্টেনা কমপ্লেক্স, ইলেকট্রন দাতা** এবং **ইলেকট্রন গ্রহীতা** নিয়ে গঠিত। গ্রানার থাইলাকয়েড পর্দায় উপস্থিত রঙ্গক তন্ত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত যে বিশেষ ক্লোরোফিল a অণু থেকে ইলেকট্রন নির্গত হয় তাকে **বিক্রিয়া কেন্দ্র** বলে। বিক্রিয়া কেন্দ্রকে ঘিরে অবস্থিত ক্লোরোফিল a এবং ক্যারোটিন রঙ্গক দ্বারা গঠিত অংশ হল **কোর কমপ্লেক্স।** কোর কমপ্লেক্সের বাইরের দিকে অবস্থিত ক্লোরোফিল a, ক্লোরোফিল b এবং ক্যারোটিনয়েড দ্বারা গঠিত অংশকে বলা হয় **অ্যান্টেনা কমপ্লেক্স।** LHC-তে অবস্থিত বিভিন্ন প্রকার রঙ্গক শোষিত সৌরশক্তিকে ইনডাকটিভ রেজোনেন্স পদ্ধতিতে বিক্রিয়া কেন্দ্রে প্রেরণ করে। **বিক্রিয়াকেন্দ্র:** রঙ্গকতন্ত্রে যে বিশেষ প্রকারের ক্লোরোফিল অণুর উপস্থিতি দেখা যায়, সেগুলি হল---ক্লোরোফিল a 700 (P~7OO~) এবং ক্লোরোফিল a 680 (P~680~)। এই দু-ধরনের Chl a-এর শোষণ বর্ণালি যথাক্রমে 700 nm এবং 680nm । এই দুটি আলোককেন্দ্র 700 এবং 680nm-এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য দ্বারা উত্তেজিত হয় এবং আলো থেকে আগত শক্তি এদের ইলেকট্রন ত্যাগে সাহায্য করে। ফলে এই দুই ক্লোরোফিল অণু কার্যত দুটি আলাদা আলোক বিক্রিয়াকেন্দ্র (reaction centre) গঠন করে। **অ্যান্টেনা কমপ্লেক্স:** ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েড পর্দায় রঙ্গকতন্ত্রের উপাদানরূপে উপস্থিত Chl a, Chl b, ক্যারোটিনয়েড, ফাইকোবিলিন ও প্রোটিনের সহযোগে আলোক সহায়ক দূরগ্রাহী রঙ্গকতন্ত্র বা অ্যান্টেনা কমপ্লেক্স (antenna complex) গঠিত হয়। রঙ্গকতন্ত্রের উপাদানগুলি নিজ নিজ শোষণ বর্ণালি অনুসারে বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ফোটন কণা শোষণ করে উত্তেজিত হয়। এই দশা 10^-9^---10^-12^S স্থায়ী। কোনোরকম আলোকবিক্রিয়া ঘটার আগে শোষিত ফোটন কণার শক্তি, তাপশক্তি এবং প্রতিপ্রভ আলোক বিকিরণ দ্বারা স্থিতিশীল অবস্থায় আসে। এক্ষেত্রে প্রতিপ্রভ কণার তরঙ্গদৈর্ঘ্য শোষিত কণার চেয়ে দীর্ঘতর হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে একটি রঙ্গক কণা তার পার্শ্ববর্তী রঙ্গক কণার দিকে ফোটন কণা প্রবাহিত করতে থাকে, যা অবশেষে Chl a অণুতে এসে উপস্থিত হয়। একে অনুনাদ (resonance) বলে। বিভিন্ন রঙ্গক কণা দ্বারা বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলোক কণা শোষণের মধ্যে দিয়ে Chl a অণু উত্তেজিত হয়। সেইজন্য আলোকসহায়ক রঙ্গকতন্ত্রকে বিক্রিয়াকেন্দ্রের অ্যান্টেনা কমপ্লেক্স বলা হয়। **17. রঙ্গকতন্ত্র- I-এর বৈশিষ্ট্য লেখো।** 1. PS-I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্র এবং LHC (লাইট হারভেস্টিং কমপ্লেক্স) ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েড পর্দায় প্রোটিনের ওপর অবস্থান করে। 2. PS-I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে নির্দিষ্ট প্রকৃতির ক্লোরোফিল a অণুর ডাইমার থাকে, যা 700nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণে সক্ষম, সেইজন্য এই ক্লোরোফিল অণুকে P~700~ বলে। 3. প্লাস্টোসায়ানিন নামক ইলেকট্রন বাহক PS-I-এর ইলেকট্রন দাতা- রূপে কাজ করে। 4. প্রাথমিক ইলেকট্রন গ্রহীতা A~o~ (বিশেষ প্রকারের ক্লোরোফিল a)। 5. PS-I-এর ইলেকট্রন বাহকগুলি হল ফাইলোকুইনোন (ভিটামিন K), লৌহ-সালফার যৌগ (FeS~x~, FeS~A~, FeS~B~), ফেরেডক্সিন, সাইটোক্রোম b~6~f যৌগ, প্লাস্টোসায়ানিন । 6. PS-I-এর FNR (ফেরেডক্সিন NADP^+^ অক্সিডোরিডাকটেজ উৎসেচক) থাকে, যার মাধ্যমে অচক্রাকার ফটোফসফোরাইলেশনের সময় e- কে NADP^+^-এ স্থানান্তরিত করে ও H^+^-এর উপস্থিতিতে NADP^+^ বিজারিত হয়ে NADPH + H^+^ গঠন করে। 7. PS-I চক্রাকার ও অচক্রাকার উভয়প্রকার ফোটোফসফোরাইলেশনের সঙ্গে যুক্ত এবং PSI এককভাবে চক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন ঘটাতে সক্ষম। **18. রঙ্গকতন্ত্র II-এর বৈশিষ্ট্য লেখো।** 1. PS-II গ্রানা থাইলাকয়েড পর্দার থাকযুক্ত (appressed) অংশে অবস্থান করে। 2. PS-II-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে (reaction centre) নির্দিষ্ট প্রকৃতির ক্লোরোফিল a অণুর ডাইমার থাকে, যা 680nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো শোষণে সক্ষম, সেইজন্য এই ক্লোরোফিল অণুকে P~680~ বলে। 3. PS-II-এর ইলেকট্রন শূন্যতা জলের ফটোলাইসিসের ফলে উৎপন্ন ইলেকট্রন দ্বারা পূরণ হয়। এই ইলেকট্রন Yz (D~1~ প্রোটিনের টাইরোসিন রেসিডিউ) ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে PS II-এর বিক্রিয়া কেন্দ্রের ক্লোরোফিল অণুতে প্রবেশ করে। 4. PS II-এর বিক্রিয়াকেন্দ্র থেকে নির্গত ইলেকট্রনের প্রাথমিক গ্রহীতা হল দুই অণু ফিয়োফাইটিন (Mg^2+^ বিহীন ক্লোরোফিল)। 5. PS II-এর ইলেকট্রন বাহকগুলি হল---প্লাস্টোকুইনোন (Q~A~ এবং Q~B~), সাইটোক্রোম b~6~f যৌগ, কপারযুক্ত প্লাস্টোসায়ানিন। 6. PS II-এর মধ্যে অক্সিজেন ইভলভিং কমপ্লেক্স (OEC) থাকে, যা জলের ফটোলাইসিসে সাহায্য করে। OEC, 3 অণু প্রোটিন, 4 অণু ম্যাঙ্গানিজ আয়ন (Mn^2+^), ক্যালশিয়াম আয়ন (Ca^2+^) এবং ক্লোরিন আয়ন (Cl^---^) নিয়ে গঠিত। 7. PS II অচক্রাকার ফসফোরাইলেশনের সঙ্গে যুক্ত এবং PS I-এর ওপর নির্ভরশীল। PS II-এর থেকে নির্গত ইলেকট্রন PS I-এর ইলেকট্রন শূন্যতা পূরণ করে। **19. আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো ? এর গুরুত্ব লেখো।** **সংজ্ঞা:** যে দশায় আলোর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষের প্রধান রঙ্গক পদার্থ ক্লোরোফিল a সরাসরি অথবা অন্যান্য সহকারী রঙ্গক পদার্থের সাহায্যে আলোকশক্তি শোষণ করে সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং ইলেকট্রন দাতা জলকে বিয়োজিত করে O~2~, বিজারক NADPH + H^+^ ও উচ্চশক্তিসম্পন্ন ATP গঠন করে, তাকে আলোক রাসায়নিক দশা বা আলোক দশা বলে। **স্থান:** এই দশার বিক্রিয়াগুলি ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানা অঞ্চলে ঘটে। **উপাদান:** প্রধান উপাদানগুলি হল জল, সূর্যালোক ও ক্লোরোফিল। এ ছাড়া সহায়ক উপাদান হল ADP ও NADP^+^ । **বর্ণনা:** আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে নিম্নলিখিত 4টি উপদশায় ভাগ করা যেতে পারে--- (i) [ক্লোরোফিল অণু দ্বারা সৌরশক্তি শোষণ।] (ii) [বিক্রিয়াকেন্দ্রের সক্রিয়তা।] (iii) [জলের আলোক বিয়োজন ও অক্সিজেন নির্গমন।] (iv) [সৌরশক্তির রাসায়নিক শক্তিতে (ATP রূপে) রূপান্তর।] (v) [NADP+এর বিজারণ।] **I. [ক্লোরোফিল অণু দ্বারা সৌরশক্তি শোষণ:]** সবুজ উদ্ভিদ কোশে দুটি পৃথক রঞ্জকতন্ত্র (pigment system/photosystem) একত্রে কার্যকর। এগুলি হল PS-I এবং PS-II। PS-I ক্লোরোফিল-a ও ক্যারোটিন রঞ্জক নিয়ে গঠিত, এটি 700 nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো দ্বারা সক্রিয় হয়, তাই একে P~700~ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। PS-II মূলত ক্লোরোফিল-b, ভিন্ন প্রকৃতির ক্লোরোফিল-a ও অন্যান্য সাহায্যকারী রঞ্জক যথা- জ্যান্থোফিল নিয়ে গঠিত। PS-II-এর বিক্রিয়া কেন্দ্রে অবস্থিত ক্লোরোফিল-a 680nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো দ্বারা সক্রিয় হয়, তাই একে P~680~ দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। **II. [বিক্রিয়াকেন্দ্রের সক্রিয়তা:]** সূর্যালোকের ফোটন কণা শোষণ করে উভয় রঞ্জকতন্ত্রের কেন্দ্রে অবস্থিত ক্লোরোফিল অণু উত্তেজিত ও সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং উচ্চশক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন নির্গত করে। উচ্চশক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন বিভিন্ন জৈব ইলেকট্রন বাহক, যথা--- প্লাস্টোকুইনোন (plastoquinone), সাইটোক্রোম (cytochrome), প্লাস্টোসায়ানিন (plastocyanin), ফেরিডক্সিন (ferredoxin) দ্বারা বাহিত হয়। অবশেষে ইলেকট্রন শক্তি নির্গত করে পুনরায় স্থিতিশীল দশায় ফিরে আসে। ![https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdps8Y36zzMJEqH4\_JgLDfhpUOwh8M6i8deZMMa9nU1yVNn9KwQ2k8TooIJOktALzjMJu4fzwS7c6axcX\_whgmPnJza3SKXtvCOTtaPJpoO8EeU7ugCQCBLKbXv1l-cUe1RZirBzWnZ5LJqfVjJ0Oj2qQin?key=JLWLK730rz6fc9NqNBEhQA](media/image7.jpeg) **III. জলের ফোটোলাইসিস ও অক্সিজেন উৎপাদন:** ইলেকট্রন নির্গমনের ফলে P~680~ ক্লোরোফিল ধনাত্মকভাবে আয়নিত হয়। এই সময় PS II-এর সঙ্গে যুক্ত অক্সিজেন ইভলভিং কমপ্লেক্স (OEC) জলকে বিশ্লিষ্ট করে ইলেকট্রন (e-), প্রোটন (H^+^) নির্গত করে এবং O~2~ উৎপন্ন করে। 2 অণু জল OEC-এর মধ্যে অবস্থিত ম্যাঙ্গানিজ আয়নের মাধ্যমে চারটি জারিত দশা (S1, S2, S3 ও S4 ) অতিক্রম করার সময়ে বিশ্লিষ্ট হয়ে 4 টি e-, 4 টি প্রোটন (H^+^) এবং এক অণু O~2~ মুক্ত করে। জল থেকে নির্গত ইলেকট্রন Yz (টাইরোসিন রেসিডিউ)-এর মাধ্যমে P~680~^+^-এর ইলেকট্রন শূন্যতা পূরণ করে। https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdps8Y36zzMJEqH4\_JgLDfhpUOwh8M6i8deZMMa9nU1yVNn9KwQ2k8TooIJOktALzjMJu4fzwS7c6axcX\_whgmPnJza3SKXtvCOTtaPJpoO8EeU7ugCQCBLKbXv1l-cUe1RZirBzWnZ5LJqfVjJ0Oj2qQin?key=JLWLK730rz6fc9NqNBEhQA **হিল বিক্রিয়া:** বিজ্ঞানী Robin Hill (1937) প্রথম প্রমাণ করেন জলের আলোক বিশ্লেষণে O2 উৎপন্ন হয়। তিনি কোশ থেকে সংগৃহীত ক্লোরোপ্লাস্ট, হাইড্রোজেন গ্রাহক পটাশিয়াম ফেরিক অক্সালেট (A) এবং জলের মিশ্রণে আলো প্রয়োগ করে দেখান যে, হাইড্রোজেন গ্রাহক বিজারিত হয় এবং O~2~ নির্গত হয়।অর্থাৎ, এর দ্বারা তিনি প্রমাণ করেন আলো ও ক্লোরোফিলের উপস্থিতিতে জল বিশ্লেষিত হয় ও উৎপন্ন H+ হাইড্রোজেন গ্রাহককে বিজারিত করে। এই বিক্রিয়াটিকে হিল বিক্রিয়া বলে। ![https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdps8Y36zzMJEqH4\_JgLDfhpUOwh8M6i8deZMMa9nU1yVNn9KwQ2k8TooIJOktALzjMJu4fzwS7c6axcX\_whgmPnJza3SKXtvCOTtaPJpoO8EeU7ugCQCBLKbXv1l-cUe1RZirBzWnZ5LJqfVjJ0Oj2qQin?key=JLWLK730rz6fc9NqNBEhQA](media/image7.jpeg) **IV. [সৌরশক্তির রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তর:]** উচ্চশক্তি সম্পন্ন ইলেকট্রন এইরূপ বিভিন্ন বাহক মাধ্যমে স্থানান্তরিত হওয়ার সময় নির্গত শক্তি দ্বারা ADP ও Pi (অজৈব ফসফেট)-কে যুক্ত করে ATP উৎপন্ন করে। সালোকসংশ্লেষের আলোক দশায় সৌরশক্তির সহায়তায় এভাবে ATP উৎপাদনকে ফোটোফসফো-রাইলেশন (Photophosphorylation) বলে। ফোটোফসফোরাইলেশন দুই প্রকার--- **A. আবর্তাকার ফোটোফসফোরাইলেশন:** যে পদ্ধতিতে আলোকরশ্মি দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে PS-I থেকে নির্গত ইলেকট্রন প্লাস্টোকুইনোন, সাইটোক্রোম এবং প্লাস্টোসায়ানিনের মাধ্যমে আবার PS-I-এ ফিরে আসে এবং ATP উৎপন্ন হয় তাকে আবর্তকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলে। **B. অনাবর্তাকার ফোটোফসফোরাইলেশন:** যে পদ্ধতিতে আলোকরশ্মি দ্বারা উদ্দীপিত হয়ে জল ভেঙে ইলেকট্রন নির্গত হয় এবং PS-II, PS-I এবং বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে NADPH এবং ATP উৎপন্ন করে এবং অক্সিজেন উদ্ভূত হয়, তাকে অনাবর্তাকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলে। **V. [NADP^+^-এর বিজারণ:]** PS-I থেকে নির্গত ইলেকট্রন ফেরিডক্সিন বাহকের মাধ্যমে NADP^+^-এর সঙ্গে মিলিত হয়, ফলে NADPe^---^ গঠিত হয়। অপরদিকে জল বিয়োজনের ফলে নির্গত H^+^ আয়ন NADPe^---^ এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে NADPH + H^+^-এ পরিণত হয়। **আলোকরাসায়নিক দশার গুরুত্ব:** 1. **O~2~ উৎপাদন:** এই দশায় জলের ফোটোলাইসিস হওয়ায় O2 উৎপাদিত হয়, যা সবাত শ্বসনের জন্য প্রয়োজন। 2. **NADPH + H+ গঠন:** জলের ফোটো-লাইসিসের ফলে উৎপন্ন H+, NADP+ -কে বিজারিত করে NADPH + H+ গঠন করে, যা আলোক নিরপেক্ষ দশায় ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিডকে বিজারিত করে ফসফোগ্লিসারৱ্যাল-ডিহাইড গঠন করে। 3. **ATP ব্যবহার:** এই দশায় ফোটোফসফো-রাইলেশনের মাধ্যমে উৎপন্ন ATP, আলোক নিরপেক্ষ দশায় 3-ফসফোগ্লিসারেট-কে 1,3 বিস ফসফোগ্লিসারেট -এ এবং RuMP-কে RuBP-তে রূপান্তরিত করতে ব্যবহৃত হয়। 4. **আলোক শক্তির রূপান্তর:** সর্বোপরি এই দশায় ক্লোরোফিলের সাহায্যে সৌরশক্তি, রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় যা আলোক নিরপেক্ষ দশায় খাদ্যের মধ্যে স্থৈতিক শক্তিরূপে আবদ্ধ হয়। ![Difference Between Light Reaction and Dark Reaction (with Comparison Chart) - Biology Reader](media/image9.jpeg) **20. অন্ধকার দশার সংজ্ঞা ও স্থান লেখো। এর গুরুত্ব লেখো।** **সংজ্ঞা:** সালোকসংশ্লেষের যেসব পর্যায়ক্রমিক বিক্রিয়াগুলি সরাসরি আলোর শক্তির ওপর নির্ভরশীল নয়, উৎসেচকের উপস্থিতিতে ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমায় সম্পন্ন হয়, তাদের আলোক নিরপেক্ষ বা জৈব সংশ্লেষ দশা বলে। আলোর প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছাড়াই এই দশা সংঘটিত হয় বলে একে অন্ধকার দশা (dark phase)-ও বলে। **স্থান:** এই দশার বিক্রিয়াগুলি ক্লোরোপ্লাস্টের স্ট্রোমায় ঘটে, কারণ এই প্রক্রিয়ার সমস্ত উৎসেচকগুলি স্ট্রোমায় থাকে। **উপাদান:** প্রধান উপাদান হল পরিবেশের CO~2~, আলোক দশায় উৎপন্ন ATP, NADPH এবং কোশীয় RuBP \| **21. C~3~ চক্রের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।** C~3~ চক্রের বিক্রিয়াগুলি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়--- - কার্বন স্থিতিকরণ পর্যায় - বিজারণ পর্যায় ও - ![](media/image10.jpeg)RuBP-এর পুনরুৎপাদন এবং গ্লুকোজ সংশ্লেষ। **[কার্বন স্থিতিকরণ পর্যায়: ]** \[i\] এই পর্যায়ের প্রথমে পরিবেশ থেকে গৃহীত CO~2~, RuBisCO উৎসেচকের সাহায্যে রাইবিউলোজ 1, 5 -বিস ফসফেটের (RuBP) সঙ্গে যুক্ত হয়ে অত্যন্ত অস্থায়ী 6 কার্বনযুক্ত অন্তর্বর্তী যৌগ (কিটো অ্যাসিড) 2 -কার্বক্সি- 3 -কিটোঅ্যারাবিনিটল - 1, 5 -বিস ফসফেট \[বিস ফসফোঅরবিটল (BPOB)\] উৎপন্ন করে। ![https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdh6wxh88dtSjZMRrSFKAtq5ZFd4UG9SoDka5Mb1RvVJsvmSmvvmka2fD\_nt103afoH9nT36zMqyor7qI7YiR1UXM1JsIm1tppIPZmABx0BWVP6t-ygzCz-f4e0cu4iuPOwNTII9yDhWtxZ4q9snKljKhBJ?key=Wm7rtFwHpKeRVXkZUe4BVw](media/image11.jpeg) \[ii\] 6 অণু, 6 কার্বনযুক্ত বিস ফসফোঅরবিটল জলের সাহায্য দ্রুত বিশ্লিষ্ট হয়ে 12 অণু তিন কার্বনযুক্ত স্থায়ী যৌগ 3-ফসফোগ্লিসারেট (PGA) গঠন করে। https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdh6wxh88dtSjZMRrSFKAtq5ZFd4UG9SoDka5Mb1RvVJsvmSmvvmka2fD\_nt103afoH9nT36zMqyor7qI7YiR1UXM1JsIm1tppIPZmABx0BWVP6t-ygzCz-f4e0cu4iuPOwNTII9yDhWtxZ4q9snKljKhBJ?key=Wm7rtFwHpKeRVXkZUe4BVw ![](media/image10.jpeg)**[বিজারণ পর্যায়: ]** \[i\] এই পর্যায়ের প্রথমে ও ফসফোগ্লিসারেট, ফসফোগ্লিসারেট কাইনেজ উৎসেচকের সাহায্যে ATP-র মাধ্যমে 1, 3-বিস ফসফোগ্লিসারেট (1, 3-bis PGA) উৎপন্ন করে। ![](media/image12.jpeg)\[ii\] 1, 3 বিস ফসফোগ্লিসারেট আলোক দশায় উৎপন্ন NADPH + H+ -এর সাহায্যে ট্রায়োজ ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে বিজারিত হয়ে 3 ফসফোগ্লিসারালডিহাইডে (PGAld) পরিণত হয়। **[RuBP-র পুনরুৎপাদন এবং গ্লুকোজ সংশ্লেষ পর্যায়:]** \[i\] বিজারণ পর্যায়ে উৎপন্ন 12 অণু PGAld -র মধ্যে 5 অণু PGAld ট্রায়োজ ফসফেট আইসোমারেজ উৎসেচকের সহায়তায় 5 অণু ডাইহাইড্রক্সিঅ্যাসিটোন ফসফেট (DHAP) উৎপন্ন করে। ![](media/image12.jpeg)\[ii\] 3 অণু PGAld এবং 3 অণু DHAP, অ্যালডোলেজ উৎসেচকের সাহায্যে যুক্ত হয়ে ও অণু ফ্রূক্টোস-1, 6-বিস ফসফেট ( Fr-1, 6-bis P ) গঠন করে। \[iii\] 3 অণু ফ্রূক্টোস-1, 6 -বিস ফসফেট, ফসফাটেজ উৎসেচকের সাহায্যে ফ্রূক্টোস-6-ফসফেট (Fr-6-P) গঠন করে। \[iv\] 2 অণু ফ্রূক্টোস-6-ফসফেট ও 2 অণু PGAld, ট্রান্সকিটোলেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে পরস্পর যুক্ত হয়ে 2 অণু চার কার্বনযুক্ত এরিথ্রোজ-4 -ফসফেট (E-4-P) এবং 2 অণু 5 কার্বনযুক্ত জাইলুলোজ-5 ফসফেট (Xu-5-P) গঠন করে। \[v\] 2 অণু এরিথ্রোজ-4-ফসফেট, অ্যালডোলেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে অবশিষ্ট 2 অণু DHAP এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে 2 অণু সাত কার্বন-বিশিষ্ট যৌগ সেডোহেপ্টূলোজ-1, 7 -বিস ফসফেট (S-1, 7-bis P) উৎপন্ন করে। \[vi\] 2 অণু সেডোহেপ্টুলোজ-1, 7 -বিস ফসফেট, ফসফাটেজ উৎসেচকের সাহায্যে ফসফেট মুক্ত করে সেডোহেপ্টুলোজ-7 -ফসফেট (S-7-P) উৎপন্ন করে । https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdXJipEm\_f7FBrW3qUbZJzz3srv1QojBV\_FJCc2kNorLsf6bs61hCfH1wxrbiPT66Suf4KFc2mkrrOm2LkG8kylwShNZBuZpgTry6XbfmEAF867oZXvEiv\_2UdxSiX6NzAA7SzeyXg3CYjDkGA1mbXmOx4l?key=4Wz9B9PKLRAEeRl6ZYw17Q \[vii\] 2 অণু সেডোহেপ্টুলোজ-7-ফসফেট, ট্রান্সকিটোলেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে অবশিষ্ট 2 অণু PGAld-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 অণু পাঁচ কার্বনযুক্ত যৌগ রাইবোজ- 5 -ফসফেট (R-5-P) এবং 2 অণু 5 কার্বন যুক্ত যৌগ জাইলুলোজ-5 ফসফেট উৎপন্ন করে। ![https://lh7-rt.googleusercontent.com/docsz/AD\_4nXdXJipEm\_f7FBrW3qUbZJzz3srv1QojBV\_FJCc2kNorLsf6bs61hCfH1wxrbiPT66Suf4KFc2mkrrOm2LkG8kylwShNZBuZpgTry6XbfmEAF867oZXvEiv\_2UdxSiX6NzAA7SzeyXg3CYjDkGA1mbXmOx4l?key=4Wz9B9PKLRAEeRl6ZYw17Q](media/image13.jpeg) \[viii\] 2 অণু রাইবোজ-5 -ফসফেট, আইসোমারেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে 2 অণু রাইবিউলোজ-5 -ফসফেটে (Ru-5-P) বা রাইবিউলোজ মনোফসফেট (RuMP) পরিণত হয়। \[ix\] উৎপন্ন মোট 4 অণু জাইলুলোজ-5 ফসফেট, এপিমারেজ উৎসেচকের সাহায্যে পরিবর্তিত হয়ে 4 অণু রাইবিউলোজ- 5 ফসফেট উৎপন্ন করে। ![](media/image13.jpeg)\[x\] মোট উৎপন্ন 6 অণু রাইবিউলোজ-5 ফসফেট, কাইনেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে ATP-এর সাহায্যে অণু রাইবিউলোজ 1, 5 বিস ফসফেট উৎপন্ন করে। \[xi\] অবশিষ্ট এক অণু ফ্রুক্টোজ-6 -ফসফেট, আইসোমারেজ উৎসেচকের সাহায্যে গ্লুকোজ-6 ফসফেটে (G-6-P) পরিণত হয় ৷ ![](media/image16.jpeg) \[xii\] গ্লুকোজ-6-ফসফেট, ফসফাটেজ উৎসেচকের সাহায্যে গ্লুকোজ উৎপন্ন করে। **22. অন্ধকার দশার বিক্রিয়াগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।** অন্ধকার দশার সংক্ষিপ্ত মূল বিক্রিয়াগুলি নিম্নরূপ। ![](media/image17.jpeg)**(1) [কার্বন ডাইঅক্সাইডের স্থিতিকরণ বা অঙ্গার আত্তীকরণ]:** এই দশার প্রথমে RuBisCO উৎসেচকের উপস্থিতিতে CO~2~ -এর সঙ্গে স্ট্রোমায় উপস্থিত 5 কার্বনঘটিত শর্করা রাইবিউলোজ বিস ফসফেটের (RuBP) বিক্রিয়ায় প্রথমে ছয় কার্বনযুক্ত অস্থায়ী যৌগ বিস ফসফোঅরবিটল (BPOB) উৎপন্ন হয়। **(2) [ফসফোগ্লিসারেট উৎপাদন:]** ছয় কার্বনযুক্ত বিস ফসফোঅরবিটল দ্রুত বিশ্লিষ্ট হয়ে তিন কার্বনযুক্ত যৌগ ফসফোগ্লিসারেট (PGA) উৎপন্ন করে। ![](media/image17.jpeg)**(3) [PGA-এর বিজারণ বা PGAld গঠন:]** ফসফোগ্লিসারেট, আলোক দশায় উৎপন্ন NADPH + H+ এবং ATP-এর সঙ্গে বিক্রিয়া করে ফসফোগ্লিসারালডিহাইড (PGAld) গঠন করে। **(4) [গ্লুকোজ উৎপাদন]:** বিজারণ দশায় 12 অণু PGAld থেকে 5 অণু 3 কার্বনঘটিত যৌগ ডাইহাইড্রক্সি অ্যাসিটোন ফসফেট (DHAP) গঠিত হয়। 1 অণু PGAld এবং 1 অণু DHAP নির্দিষ্ট উৎসেচকের উপস্থিতিতে 1 অণু গ্লুকোজ গঠন করে। **(5) [RuBP-এর পুনরুৎপাদন:]** 6 অণু PGAld এবং 4 অণু DHAP কতগুলি বিক্রিয়ার মাধ্যমে চক্রাকার পথে প্রথমে 6 অণু রাইবিউলোজ মনোফসফেট (RuMP) গঠন করে, যা 6 অণু ATP -এর সাহায্যে 6 অণু RuBP উৎপন্ন করে। **23. অন্ধকার দশার গুরুত্ব লেখো।** 1. আলোক নিরপেক্ষ বা কেলভিন চক্র বা C~3~ চক্রের মাধ্যমে পরিবেশ থেকে CO~2~ গৃহীত হওয়ায় পরিবেশে CO~2~ এবং O~2~ --এর ভারসাম্য বজায় থাকে। 2. এই দশার বা চক্রের মাধ্যমে ফসফোগ্লিসারালডিহাইড নামক ট্রায়োজ শর্করা উৎপন্ন হয় যার থেকে বিভিন্ন কার্বন সংখ্যা যুক্ত শর্করা উৎপন্ন হয়। 3. এই দশার বা চক্রের মাধ্যমে ফ্রুক্টোজ-6-ফসফেট উৎপন্ন হয় যার থেকে গ্লুকোজ সংশ্লেষিত হয়, এই গ্লুকোজ কোশে মুখ্য শ্বসনবস্তু---রূপে ব্যবহৃত হয় অথবা স্টার্চ-রূপে ক্লোরোপ্লাস্টে এবং সুক্রোজ রূপে সাইটোপ্লাজমে সঞ্চিত হয়। 4. এই দশা বা চক্রের মাধ্যমে RuBP পুনরুৎপাদন ঘটে ফলে এই চক্রের অন্তর্বর্তী যৌগগুলির পুনরুৎপাদন সম্ভব হয় ৷ **24. চক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলতে কি বোঝ? পধতিটি সংক্ষেপে লেখো।** **সংজ্ঞা:** যে ফোটোফসফোরাইলেশন পদ্ধতিতে PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রের ক্লোরোফিল থেকে নির্গত উচ্চশক্তিসম্পন্ন ইলেকট্রন বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহক দ্বারা বাহিত হয়ে পুনরায় PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রের ক্লোরোফিলে ফিরে আসে এবং ইলেকট্রনের পরিবহণকালে ATP সংশ্লেষিত হয় তাকে চক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলে। **পদ্ধতি:** 1. PS-I-এর LHC-এ অবস্থিত সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গকগুলি নিজ নিজ শোষণবর্ণালির আলোক শোষণ করার পর শোষিত আলোকশক্তিকে ইনডাকটিভ রেজোন্যান্স পদ্ধতিতে 700nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত ফোটন কণারূপে PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে ক্লোরোফিল a অণুতে স্থানান্তরিত করে এবং ক্লোরোফিল a অণু স্থায়ী ত্রয়ী দশায় পৌঁছোয়। 2. এই অবস্থায় ক্লোরোফিল থেকে নির্গত ইলেকট্রন প্রথমে A~0~ (বিশেষ প্রকারের ক্লোরোফিল a) দ্বারা গৃহীত হয় এবং পর্যায়ক্রমে ফাইলোকুইনোন (A~1~) ও লৌহ-সালফার যৌগের (FeS) মাধ্যমে বাহিত হয়ে ফেরেডক্সিনে পৌঁছোয় । 3. ফেরেডক্সিন থেকে ইলেকট্রন প্লাস্টোসেমিকুইনোন (PQ)-এ স্থানান্তরিত হয়। এই সময় প্লাস্টোসেমিকুইনোন স্ট্রোমা থেকে দুটি প্রোটন (H+) গ্রহণ করে প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন (H+)(PQH~2~) গঠন করে। 4. প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন Q চক্রের মাধ্যমে দুটি H+ আয়ন থাইলাকয়েড ল্যুমেনে নির্গত করে এবং ইলেকট্রনকে Cytf-এ স্থানান্তরিত করে। Cytf থেকে ইলেকট্রন প্লাস্টোসায়ানিনের মাধ্যমে পুনরায় PS-I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে অবস্থিত ধনাত্মক ক্লোরোফিল a অণুতে পৌঁছোয় । 5. এইভাবে থাইলাকয়েড ল্যুমেনে ক্রমান্বয়ে H+ সঞ্চিত হওয়ায় প্রোটন গ্র্যাডিয়ান্ট বা প্রোটন মোটিভ ফোর্সের সৃষ্টি হয়, যা ATPase-এর মধ্যে দিয়ে প্রোটনগুলিকে পুনরায় স্ট্রোমাতে ফেরত পাঠায়। ফলে যে তড়িৎ রাসায়নিক শক্তির সৃষ্টি হয় তার ফলে ADP এবং Pi যুক্ত হয়ে ATP গঠন করে। **25. অচক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলতে কি বোঝ? পধতিটি সংক্ষেপে লেখো।** **সংজ্ঞা:** যে ফোটোফসফোরাইলেশন পদ্ধতিতে PS II-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রের উত্তেজিত ক্লোরোফিল থেকে নির্গত ইলেকট্রন বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহকের দ্বারা বাহিত হয়ে PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রের ক্লোরোফিলে পৌঁছোয় ও ইলেকট্রন পরিবহণকালে ATP সংশ্লেষ হয় এবং PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রের উত্তেজিত ক্লোরোফিল থেকে নির্গত ইলেকট্রন প্রান্তীয় ইলেকট্রন গ্রাহক NADP+ দ্বারা গৃহীত হয়, তাকে অচক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশন বলে। **পদ্ধতি:** 1. PS-I এবং PS-II-এর LHC-এ অবস্থিত সালোকসংশ্লেষীয় রঙ্গকগুলি নিজ নিজ শোষণবর্ণালির আলোক শোষণ করার পর শোষিত আলোক শক্তিকে ইনডাকটিভ রেজোন্যান্স পদ্ধতিতে যথাক্রমে 700nm এবং 680nm তরঙ্গদৈর্ঘ্যযুক্ত ফোটন কণারূপে PS I এবং PS II-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে অবস্থিত ক্লোরোফিল a অণুতে স্থানান্তরিত করে এবং ক্লোরোফিল a অণু স্থায়ী ত্রয়ী দশায় পৌঁছোয়। 2. PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্র থেকে নির্গত ইলেকট্রন বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহকের দ্বারা বাহিত হয় এবং প্রান্তীয় ইলেকট্রন গ্রাহক NADP+ দ্বারা গৃহীত হলে PS I-এর ইলেকট্রন ঘাটতি দেখা যায় ৷ 3. PS I-এর ইলেকট্রন ঘাটতি পূরণের জন্য PS II থেকে নির্গত ইলেকট্রন বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে বাহিত হয়ে প্লাস্টোসায়ানিনে পৌঁছোয় এবং প্লাস্টোসায়ানিন PS I-কে ইলেকট্রন প্রদান করে। 4. PS II থেকে নির্গত ইলেকট্রন, ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে বাহিত হওয়ার সময় Q~B~ থেকে প্লাস্টোসেমিকুইনোনে (PQ^---^) স্থানান্তরিত হয়। এই সময় প্লাস্টোসেমিকুইনোন স্ট্রোমা থেকে দুটি প্রোটন (H+) গ্রহণ করে প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন (PQH~2~) গঠন করে। 5. প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন Q চক্রের মাধ্যমে দুটি প্রোটন (H+) থাইলাকয়েড ল্যুমেনে নির্গত করে এবং ইলেকট্রনকে Cytf-এ স্থানান্তরিত করে। Cytf থেকে ইলেকট্রন প্লাস্টোসায়ানিনের মাধ্যমে PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে অবস্থিত ধনাত্মক ক্লোরোফিল a অণুর ইলেকট্রন ঘাটতি পূরণ করে। 6. এইভাবে থাইলাকয়েড ল্যুমেনে ক্রমান্বয়ে প্রোটন (H+) সঞ্চিত হওয়ায় প্রোটন গ্র্যাডিয়ান্ট বা প্রোটন মোটিভ ফোর্সের সৃষ্টি হয়, যা ATPase-এর মধ্যে দিয়ে প্রোটনগুলিকে পুনরায় স্ট্রোমাতে ফেরত পাঠায়। ফলে যে তড়িৎ-রাসায়নিক শক্তির সৃষ্টি হয়, তার দ্বারা ADP এবং Pi যুক্ত হয়ে ATP গঠন করে। 7. PS II-এর ইলেকট্রন ঘাটতি পূরণের জন্য জল জারিত হয়ে O~2~ উৎপন্ন করে এবং জারণের ফলে উৎপন্ন ইলেকট্রন Yz (টাইরোসিন রেসিডিউ) ইলেকট্রন বাহকের মাধ্যমে PS II-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে পৌঁছোয় এবং বিক্রিয়াকেন্দ্রের ক্লোরোফিল a ইলেকট্রন ঘাটতি পূরণ করে। **26. ফোটোফসফোরাইলেশনের গুরুত্ব লেখো।** 1. **[ATP উৎপাদান:]** চক্রাকার ফোটোফসফো-রাইলেশনে 2 অণু ATP এবং অচক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশনে 1 অণু ATP উৎপন্ন হয় যা কোশীয় বিপাকে ব্যবহৃত হয় । 2. ![](media/image18.jpeg)**[O~2~ উৎপাদন:]** অচক্রাকার ফোটোফসফো-রাইলেশানে জলের ফোটোলাইসিস ঘটে। ফলে O~2~ উৎপন্ন হয়, যা সবাত শ্বসনে প্রয়োজন । 3. **[NADPH + H+ গঠন:]** অচক্রাকার ফোটো-ফসফোরাইলেশনে জলের ফোটোলাইসিসের ফলে উৎপন্ন H+ আয়ন এবং PS I থেকে নির্গত ইলেকট্রন NADP+-কে বিজারিত করে NADPH + H+ গঠন করে যা আলোক নিরপেক্ষ দশায় ফসফোগ্লিসারেটকে বিজারিত করে ফসফো-গ্লিসারালডিহাইড গঠন করে। **27. কেমিঅসমেটিক মতবাদ বলতে কি বোঝ? কেমিঅসমোটিক মতবাদের আলোকে ফটোফসফোরাইলেশন পধতিটি ব্যাখ্যা করো।** অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন এবং ফোটোফসফোরাইলেশনের মাধ্যমে ATP সংশ্লেষ সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে **Peter Mitchell**-এর (1961) কেমিঅসমোটিক মতবাদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। পরবর্তী সময়ে André Jagendorf ও G Hind (1963) এই মতবাদকে সমর্থন করেন। এই মতবাদ অনুযায়ী--- সালোকসংশ্লেষ ও শ্বসনের সময়ে ইলেকট্রন পরিবহণ তন্ত্রের মাধ্যমে ইলেকট্রন স্থানান্তরণের সময়ে থাইলাকয়েডের ল্যুমেনে এবং মাইটোকনড্রিয়ার বহিঃপ্রকোষ্ঠে প্রোটন (H+) -এর ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে প্রোটন নতিমাত্রার সৃষ্টি হয় এবং প্রোটন চালক বলের সাহায্যে পরোক্ষভাবে ATP সংশ্লেষ হয়। এই সময় থাইলাকয়েডের ল্যুমেন এবং মাইটোকনড্রিয়ার বহিঃপ্রকোষ্ঠে বেশি ঘনত্বযুক্ত অঞ্চল থেকে H+, CF~0~-F~1~ বা Fo-F~1~ বস্তুর মাধ্যমে ধাত্র অঞ্চলের অভিমুখে গমন করে, যা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার সমুতল্য। সেই জন্য Peter Mitchell এই প্রক্রিয়াটিকে **রাসায়নিক অভিস্রবণ** নামে অভিহিত করেন। **[কেমিঅসমোটিক মতবাদের আলোকে ফটো-ফসফোরাইলেশন:]** ক্লোরোপ্লাস্টের গ্রানার থাইলাকয়েডের মধ্যে এই মতবাদ অনুযায়ী ATP সংশ্লেষ তিনটি পর্যায় ঘটে--- ইলেকট্রন পরিবহণ, প্রোটন (H+) স্থানান্তকরণ এবং ATP সংশ্লেষ। **1)** থাইলাকয়েড পর্দায় PS I, PS II বিভিন্ন ইলেকট্রন বাহক, ATPase অবস্থিত এবং থাইলাকয়েডের প্রকোষ্ঠে জলের ফোটোলাইসিসের ফলে উৎপন্ন H+ আয়নের আধিক্য থাকে। **2)** চক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশনের ক্ষেত্রে ফেরেডক্সিন থেকে এবং অচক্রাকার ফোটোফসফোরাইলেশানের ক্ষেত্রে Q~B~ থেকে ইলেকট্রন প্লাস্টোসেমিকুইনোন (PQ^---^) -এ স্থানান্তরিত হয়। এই সময় প্লাস্টোসেমিকুইনোন স্ট্রোমা থেকে দুটি প্রোটন (H+) গ্রহণ করে প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন (PQH~2~) গঠন করে। **3)** প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোন এরপর জারিত হয়ে দুটি প্রোটন এবং দুটি ইলেকট্রন (e-) নির্গত করে। থাইলাকয়েডের ল্যুমেনে দুটি প্রোটন (H+) স্থানান্তরিত হয় এবং একটি ইলেকট্রনকে Cytf-এ স্থানান্তরিত করে। Cytf থেকে ইলেকট্রন প্লাস্টোসায়ানিনের মাধ্যমে PS I-এর বিক্রিয়াকেন্দ্রে অবস্থিত ধনাত্মক ক্লোরোফিল a অণুর ইলেকট্রন শূন্যতা পূরণ করে। **4)** দ্বিতীয় ইলেকট্রনটি Cytb-এর মাধ্যমে পুনরায় জারিত প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্লাস্টোহাইড্রোকুইনোনকে প্লাস্টোসেমিকুইনোনে (PQ^---^) রূপান্তরিত করে। **5)** যেহেতু ক্লোরোফিল থেকে দুটি ইলেকট্রন নির্গত হয় সেইজন্য উল্লিখিত প্রক্রিয়া বা ধাপটি পুনরায় সংঘটিত হয়। **6)** দুটি ইলেকট্রন PS I-এ স্থানান্তরণের মাধ্যমে Q চক্র সম্পূর্ণ হয়। প্রতিটি Q চক্রে চারটি প্রোটন (H+) থাইলাকয়েডের ল্যুমেনে স্থানান্তরিত হয়। **7)** এইভাবে থাইলাকয়েড ল্যুমেনে ক্রমান্বয়ে প্রোটন (H+) সঞ্চিত হওয়ায় প্রোটন গ্র্যাডিয়ান্ট বা প্রোটন মোটিভ ফোর্সের সৃষ্টি হয়, যা ATPase-এর মধ্যে দিয়ে প্রোটনগুলিকে পুনরায় স্ট্রোমাতে ফেরত পাঠায়। এর ফলে যে তড়িৎ-রাসায়নিক শক্তির সৃষ্টি হয় তার ফলে ADP এবং Pi যুক্ত হয়ে ATP গঠন করে। **28. আলোকশ্বসনের সংজ্ঞা, স্থান ও বৈশিষ্ট্য লেখো।** **সংজ্ঞা:** তীব্র আলোক এবং উচ্চ O~2~ ঘনত্বে C~3~ সবুজ কোশে O~2~ -এর সাহায্যে যে জারণ বিক্রিয়ার মাধ্যমে 2 কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লাইকোলেট তৈরি হয় ও CO~2~ নির্গত হয়, তাকে আলোকশ্বসন বলে। বিজ্ঞানী **ক্রোটভ (Krotov)** প্রথম এই পদ্ধতিটিকে আলোকশ্বসন (Photorespiration) আখ্যা দেন। **আলোকশ্বসনের স্থান:** আলোকশ্বসন তিনটি কোশীয় অঙ্গাণুর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। আলোকশ্বসনে এই তিনটি কোশীয় অঙ্গাণুর পর্যায়ক্রমিক অবস্থান হল---ক্লোরোপ্লাস্ট, পেরক্সিজোম এবং মাইটোকনড্রিয়া ৷ **আলোকশ্বসনের বৈশিষ্ট্য:** 1. আলোকশ্বসন শুধুমাত্র দিবালোকে বেশি 0~2~ ঘনত্বে হয়। সূর্যালোকের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আলোকশ্বসন আরম্ভ হয় । 2. উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে আলোকশ্বসনের হার বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতা হ্রাসের সঙ্গে আলোকশ্বসনের হার হ্রাস পায়। 3. আলোকশ্বসনে প্রথম উৎপাদিত স্থায়ী পদার্থ দুই কার্বনবিশিষ্ট ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিড, সেইজন্য এই প্রকার কার্বনের আত্তীকরণ প্রক্রিয়াকে C~2~-চক্র (C~2~-Cycle) বলে। 4. আলোকশ্বসনে কোন শক্তিসমৃদ্ধ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় যৌগ গঠিত হয় না উপরন্তু ATP এবং NADH~2~ ব্যবহৃত হয়। 5. আলোকশ্বসনে RuBisCO নিয়ন্ত্রিত কার্বনের আত্তীকরণ ও কার্বনের জারণ 3:1 অনুপাতে ঘটায় সালোকসংশ্লেষের হার 33 শতাংশ হ্রাস পায়। 6. আলোকশ্বসনে সেরিন ও গ্লাইসিন নামক দুটি অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপন্ন হয়। 7. আলোকশ্বসনে O~2~ এবং CO~2~ গৃহীত হয় এবং গৃহীত CO~2~ এর অর্ধেক পরিমাণ CO~2~ নির্গত হয়। 8. এক্ষেত্রে একই উৎসেচক (RuBisCO) দুই ধরনের ভূমিকা পালন করে--- প্রথমে C3-চক্রে উৎসেচকটি কার্বক্সিলেজ ও পরে C2-চক্রে অক্সিজিনেজ- রূপে কাজ করে। **29. আলোকশ্বসন পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো। এর গুরুত্ব আলোচনা করো।** \(i) অক্সিজেনের অধিক ঘনত্বে ক্লোরোপ্লাস্টে বর্তমান RuBP কার্বক্সিলেজ RuBP-অক্সিজিনেজ হিসেবে কাজ করে এবং RuBP-কে জারিত করে প্রথমে ফসফোগ্লাইকোলিক অ্যাসিড (Phosphoglycolic acid) ও পরে ফসফেট মুক্ত করে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড উৎপন্ন করে। \(ii) গ্লাইকোলিক অ্যাসিড পারঅক্সিজোমে প্রবেশ করে ও গ্লাইকোলিক অ্যাসিড অক্সিডেজ উৎসেচকের সহায়তায় গ্লাইঅক্সিলিক অ্যাসিড (Glyoxylic acid) ও H~2~O~2~-তে পরিণত হয়। ক্যাটালেজ উৎসেচক H~2~O~2~-কে ভেঙে জল ও অক্সিজেন উৎপন্ন করে। \(iii) গ্লাইঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্লুটামিক অ্যাসিডের উপস্থিতিতে ট্রান্সঅ্যামাইনেশন পদ্ধতিতে গ্লাইসিনে পরিণত হয়। \(iv) গ্লাইসিন মাইটোকনড্রিয়ায় স্থানান্তরিত হয়, 2 অণু গ্লাইসিন জারিত হয়ে সেরিন-হাইড্রক্সিমিথাইল-ট্রান্সফারেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে সেরিন, CO~2~ এবং NH~3~-তে পরিণত হয়। \(v) সেরিন পুনরায় পারঅক্সিজোমে প্রবেশ করে ডিঅ্যামাইনেশন বিক্রিয়া মাধ্যমে হাইড্রক্সিপাইরুভেটে পরিণত হয়। \(vi) হাইড্রক্সিপাইরুভেট ডিহাইড্রোজিনেজ উৎসেচকের উপস্থিতিতে গ্লিসারেটে বিজারিত হয়। \(vii) গ্লিসারেট ক্লোরোপ্লাস্টে স্থানান্তরিত হয় এবং ATP-র উপস্থিতিতে ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিডে পরিণত হয় এবং কেলভিন চক্রে প্রবেশ করে। **আলোকশ্বসনের গুরুত্ব**: - **[শক্তির ব্যয়:]** আলোকশ্বসন পদ্ধতিতে ATP উৎপন্ন হয় না, তাই একে প্রকৃত শ্বসন প্রক্রিয়া বলা যায় না। বরং এই প্রক্রিয়ার ফলে ATP এবং NADH + H+-এর ব্যয় ঘটে। - **[সালোকসংশ্লেষের ক্ষমতার হ্রাস:]** আলোকশ্বসনের ফলে সালোকসংশ্লেষের নিট উৎপাদন হ্রাস পায়। RuBP-র ক্রমাগত জারণের জন্য উৎপাদনের হার কমে যায়। - **[অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপাদন:]** এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার অ্যামিনো অ্যাসিড যেমন---গ্লাইসিন, সেরিন, গ্লুটামিক অ্যাসিড প্রভৃতি সংশ্লেষিত হয়, যা প্রোটিন সংশ্লেষে কাজে লাগে। - **[ক্লোরোপ্লাস্টের সুরক্ষা:]** আলোকশ্বসন ক্লোরোপ্লাস্টকে আলোক জারণের হাত থেকে রক্ষা করে। কোশের ভিতর CO~2~-এর কম ঘনত্বের জন্য এবং তীব্র আলোকের উপস্থিতিতে সালোকসংশ্লেষকারী অঙ্গের ক্ষতি হয়। এই C2-চক্রের জন্য এই ক্ষতি অনেকটা কমে যায়। - **[শর্করা উৎপাদন:]** এই প্রক্রিয়ায় CO~2~ গৃহীত হয় না বরং নির্গত হয়, কিন্তু শর্করা সংশ্লেষিত হয়। **30. C~3~ চক্র বলতে কি বোঝ? C~3~ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য লেখো।** **সংজ্ঞা:** সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জৈব সংশ্লেষ দশায় অর্থাৎ, কেলভিন চক্রে কার্বন আত্তীকরণের সময় প্রথম উৎপন্ন স্থায়ী যৌগরূপে 3 কার্বনযুক্ত ফসফোগ্লিসারিক অ্যাসিড উৎপন্ন হওয়ায় এই দশাকে বা কেলভিন চক্রকে C~3~ চক্র বলে। প্রতি কেলভিন চক্রে 1 অণু CO~2~ অংশগ্রহণ করে যা পরবর্তী সময়ে গ্লুকোজ সংশ্লেষে অংশগ্রহণ করে। যেহেতু এক অণু গ্লুকোজে 6 টি কার্বন থাকে তাই 6 টি কেলভিন চক্র সম্পাদনের মাধ্যমে এক অণু গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়। **C~3~ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য:** - এই সকল উদ্ভিদের কোশে CO~2~ আবদ্ধকরণের জন্য একটিমাত্র উৎসেচক RuBisCO থাকে, সেইজন্য এই সকল উদ্ভিদে C~2~ চক্র দেখা যায়। - এই সকল উদ্ভিদে C~2~ চক্র বা আলোকশ্বসনের হার বেশি হওয়ায় এদের সালোকসংশ্লেষের হার কম হয়। - এরা প্রধানত মেসোফাইট। সালোকসংশ্লেষের জন্য এই সকল উদ্ভিদের অনুকূল তাপমাত্রা 15° - 25°C। - এদের পাতায় সাধারণত মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে, বান্ডিল আবরণী ক্লোরোপ্লাস্টে থাকে না । - এই সকল উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এক অণু CO~2~ আবদ্ধকরণে 3 অণু ATP এবং 2 অণু NADH+H^+^ লাগে, অর্থাৎ C~3~ চক্রের মাধ্যমে এক অণু গ্লুকোজ উৎপাদন করতে 12 অণু NADH+H^+^ এবং 18 অণু ATP লাগে। **31. C~4~ চক্র বা হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র বলতে কি বোঝ। C~4~ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য লেখো।** **সংজ্ঞা:** সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় যে বিক্রিয়াপথের মাধ্যমে জৈব পদার্থ সংশ্লেষের পর্যায়ে কার্বন ডাইঅক্সাইড আবদ্ধকরণের সময় প্রথম স্থায়ী যৌগরূপে 4 কার্বনবিশিষ্ট অক্সালোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড উৎপন্ন হয়, তাকে **C4 চক্র বা হ্যাচ ও স্ল্যাক চক্র** বলে। **উদাহরণ---** ভুট্টা (*Zea mays*), বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ (*Atriplex* sp.; *Amaranthus* sp. ইত্যাদি) আখ (*Saccharum* sp.) প্রভৃতি উদ্ভিদে দেখা যায়। গুপ্তবীজী উদ্ভিদের 3 টি একবীজপত্রী এবং 16 টি দ্বিবীজপত্রী গোত্রের 1500 টির বেশি উদ্ভিদ প্রজাতিতে এই চক্রের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। তবে শৈবাল থেকে আরম্ভ করে ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ পর্যন্ত C~4~ চক্র অনুপস্থিত। **C~4~ উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য**: - C~4~ উদ্ভিদ ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ উচ্চ উষ্ণতা (30°C - 45°C) ও শুষ্ক পরিবেশে জন্মায় । - C~4~ উদ্ভিদের পাতায় দুইপ্রকার ক্লোরোপ্লাস্ট দেখা যায়--- মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্ট এবং বান্ডিল আবরণী ক্লোরোপ্লাস্ট। এই ঘটনাকে ক্লোরোপ্লাস্ট ডাইমরফিজম বলে। - মেসোফিল ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানা সুগঠিত কিন্তু স্ট্রোমা নয়। RuBisCO উৎসেচক থাকে না। PEP কার্বক্সিলেজ উৎসেচক থাকে, শ্বেতসার দানা প্রায় থাকে না। - C~4~ উদ্ভিদের পাতার নালিকা বাণ্ডিলকে ঘিরে বৃহৎ ক্লোরোপ্লাস্টযুক্ত বাণ্ডিল আবরণী কোশগুলি ঘনসন্নিবিষ্টভাবে চক্রাকারে সজ্জিত থাকে। পাতায় এইপ্রকার গঠনকে ক্রান্জ শারীরস্থান (Kranz anatomy) বলে। - বান্ডিল আবরণী ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানা সুগঠিত নয়, ক্ষুদ্রাকৃতি অসংগঠিত গ্রানা থাকে। স্ট্রোমা সুগঠিত। - C~4~ উদ্ভিদে মেসোফিল কলা শুধুমাত্র স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা দ্বারা গঠিত। - এদের পাতার কোশে CO~2~ আবদ্ধকরণের জন্য দুইপ্রকার উৎসেচক থাকে--- মেসোফিল কলার কোশে PEP কার্বক্সিলেজ এবং বান্ডিল আবরণ ক্লোরোপ্লাস্টে RuBisCO। - এইপ্রকার উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষে কার্বন আবদ্ধকরণের ফলে উৎপন্ন প্রথম স্থায়ী যৌগ চার কার্বনযুক্ত অক্সালোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড। - C~4~ উদ্ভিদে নালিকাবান্ডিলের সংখ্যা C~3~ উদ্ভিদ অপেক্ষা বেশি। - C~4~ উদ্ভিদের মেসোফিল কোশে PEP কার্বক্সিলেজ উৎসেচকের সাহায্যে CO~2~ -এর আবদ্ধকরণ ঘটে। এই উৎসেচকের 0~2~ -এর প্রতি কোনো আসক্তি নেই এবং বান্ডিল আবরণী ক্লোরোপ্লাস্টে অসংগঠিত গ্রানা থাকায় O~2~ উৎপাদনের হার অত্যন্ত কম। ফলে আলোকশ্বসন বা C~2~ চক্র হয় না বা আলোকশ্বসনের হার অত্যন্ত কম হয়। ফলে, C~4~ উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষের হার বেশি। - এইপ্রকার উদ্ভিদে CO~2~-এর আবদ্ধকরণ ক্ষমতা বেশি। - তীব্র সূর্যালোক, জলের সংকটকালীন অবস্থা, অধিক O~2~ ঘনত্ব ও উচ্চ তাপমাত্রায় এদের সালোকসংশ্লেষের হার প্রায় একই থাকে। **32. C~4~ উদ্ভিদের জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া সংক্ষেপে লেখো। এর গুরুত্ব আলোচনা করো।** **C~4~ উদ্ভিদের জৈবরাসায়নিক বিক্রিয়া:** C~4~ চক্রের বিক্রিয়াগুলি মেসোফিল কোশ ও বান্ডিল সিদ্ কোশে বিভক্ত। **A. [মেসোফিল কোশের বিক্রিয়া:]** \(i) বাতাসের CO~2~ মেসোফিল কোশে প্রবেশ করার পর কার্বনিক অ্যানহাইড্রেজ নামক উৎসেচকের সাহায্যে জল অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্বনিক অ্যাসিড (H~2~CO~3~) গঠন করে। \(ii) কার্বনিক অ্যাসিড ফসফোএনোল পাইরুভিক অ্যাসিডের (PEPA) সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সালোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড (OAA) উৎপন্ন করে। চার কার্বনযুক্ত OAA হল C~4~ চক্রের প্রথম স্থায়ী যৌগ। পেপকার্বক্সিলেজ উৎসেচক এই বিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। এই বিক্রিয়ায় একটি অজৈব ফসফেট (P~i~) নির্গত হয়। \(iii) অক্সালোঅ্যাসিটিক অ্যাসিড বা অক্সালোঅ্যাসিটেট মেসোফিল কোশের ক্লোরোপ্লাস্টে প্রবেশ করে এবং NADPH দ্বারা বিজারিত হয়ে ম্যালেট উৎপন্ন করে। ম্যালেট ডিহাইড্রোজেনেজ উৎসেচক এই বিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। **B. [বান্ডিল সিদ্ বা বান্ডিল আবরণী কোশের বিক্রিয়া:]** \(i) ম্যালেট যৌগটি মেসোফিল কোশ থেকে বান্ডিল সিদে এসে ম্যালেট ডিহ